দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ এপ্রিল: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগ এনে দায়ের করা গ্যাটকো, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও নাইকো মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা মামলাগুলো শুনানির জন্য বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান, মো. জাফর আহমেদের সমন্বয়ে বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছেন। এরপর থেকে এই মামলা সংক্রান্ত সব বিষয়ে শুনানি করবেন এই বিচারপতিরা।
এর আগে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে এ মামলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে শুনানি চলছিল। শুনানির একপর্যায়ে বিচারপতিরা মামলাগুলো পরিচালনার জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করতে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য নতুন এ বেঞ্চ গঠন করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়বসাইটে বুধবার এ তথ্য পাওয়া যায়।বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, গ্যাটকো ও নাইকো দুর্নীতি মামলা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদন শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চে পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।আবেদনগুলো শুনানির জন্য বুধবার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের বেঞ্চের কার্যতালিকায় রয়েছে।এর আগে খালেদার আবেদনগুলোর শুনানি চলছিল বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি দুর্নীতি মামলা বাতিলে খালেদার আবেদনটি ছিল রায়ের পর্যায়ে। রায় হওয়ার কথা ছিল গত রোববার।
কিন্তু খালেদার আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির কাছে বেঞ্চ পরিবর্তনের আবেদন করলে ওইদিন রায় না দিয়ে তিন মামলার আবেদনই পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন দুই বিচারক।দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বুধবার বলেন, তিনটি মামলায় খালেদা জিয়ার চারটি আবেদন ছিল। আবেদনগুলো শুনানির জন্য বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।বিগত ওেসনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এই তিন মামলা দায়ের করা হয়। আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নেয় দুদক।বড়পুকুরিয়া খনি দুর্নীতি মামলায় চারদলীয় জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ১০ মন্ত্রীসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়।২০০৮ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি শাহবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর ৫ অক্টোবর ১৬ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এতে বলা হয়, চীনা প্রতিষ্ঠান কনসোর্টিয়াম অফ চায়না ন্যাশনাল মেশিনারিজ ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) সঙ্গে বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার মধ্য দিয়ে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি করেছেন।২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর খালেদার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম তিন মাসের জন্য স্থগিত করে হাই কোর্ট। মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই আদেশ আপিলেও বহাল থাকায় আটকে যায় খনি দুর্নীতি মামলা।
সাত বছর পর চলতি বছরের শুরুতে দুদক মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নিলে হাই কোর্টের দেওয়া রুলের চূড়ান্ত শুনানি শুরু হয়।গত ৩ ও ৫ মার্চ বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানির পর আদালত রায়ের জন্য ১০ মার্চ দিন রাখে। পরে তা পিছিয়ে ৫ এপ্রিল (রোববার) নতুন তারিখ রাখা হয়।এরইমধ্যে খালেদার আইনজীবীরা বেঞ্চ পরিবর্তনের জন্য হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন। এরপর গত ২ এপ্রিল তারা ওই আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে দেন।দুদকের সহকারী পরিচালক মুহম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন। পরের বছর ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
এতে অভিযোগ করা হয়, কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে তেল গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তির মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।২০০৮ সালের ৯ জুলাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল। সেই স্থগিতাদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগেও; ফলে মামলাটি আটকে যায়।আর গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করা হয় ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর। তেঁজগাও থানার এ মামলায় খালেদা জিয়া, তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোসহ ১৩ জনকে আসামি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।
ওই মামলা হওয়ার পরদিন খালেদা জিয়া ও কোকোকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয় জরুরি ক্ষমতা আইনে। পরের বছর ১৩ মে খালেদা জিয়াসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গ্যাটকোকে ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পাইয়ে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৬ টাকার ক্ষতি করেছেন।
মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচারিক আদালতে মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০০৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে আলাদা দুটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকো।এর তিন দিন পর ওই খালেদা ও কোকোর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল দেয় হাই কোর্ট। মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয় ওই রুলে। তবে হাই কোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাই কোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেয়।