full_1151570171_1428297358

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ এপ্রিল: মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবেন কি-না তা বৃহস্পতিবার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানাবেন। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।ফাঁসির রায় বুধবার সন্ধ্যায় তাকে পড়ে শোনানোর পর কারা কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ কথা জানান।সে অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কামারুজ্জামানের আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করেছেন।এর আগে দুপুরে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা ফাঁসি বহাল রাখার রায়ে স্বাক্ষর করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে রায়টি পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। মৃত্যুদণ্ড থেকে শেষরক্ষা পেতে প্রাণভিক্ষা চেয়েছেন কামারুজ্জামান। দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক সূত্র থেকে এ কথা নিশ্চিত করেছে ।

সূত্র জানায়, এই প্রক্রিয়ায় নিয়েই এখন ব্যস্ত রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা সকাল ১১ টার সময় তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন।এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কিনা তা জানাতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছেন কামারুজ্জামান।আগে থেকেই জানা যাচ্ছিলো, যুদ্ধাপরাধে কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরে কোনও ধরনের তড়িঘড়ি করবে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সব ধরনের প্রক্রিয়া অবলম্বন করে, দণ্ডপ্রাপ্তের জন্য সকল সুযোগ নিশ্চিত করেই এই দণ্ড কার্যকর করা হবে।দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করে।অপর একটি সূত্র এও জানায় কামারুজ্জামান তার মৃত্যুদণ্ড শুক্রবার কার্যকর করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। তবে কোন দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা যায়নি।এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় কামারুজ্জামানের ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পরেও তার পরিবারের সদস্যদের ডাকা হয়নি। এ থেকেও সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়েছে রায় কার্যকরের আগে পরিবারকে অবশ্যই দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে। তবে পরিবারের কাছে দেখা করার কোনও পত্র পৌঁছায়নি।

অপরদিকে কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হলে তাকে কোথায় কবর দেওয়া হবে তাও নিশ্চিত হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, তাকে যাতে শেরপুরে কবর দেওয়া না হয় তার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা এসেছে। আর সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কবর কোথায় দেওয়া হবে তা জানা যায়নি।এ অবস্থায় দায়িত্বশীল পর্যায় থেকেই ক জানানো হচ্ছে বুধবারেই কার্যকর হচ্ছে না কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ।ধারণা করা হচ্ছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার কারণে সে প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করেই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকর করবেন। যুদ্ধাপরাধে ফাঁসির রায় পাওয়া জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে।

দুই দিন অপেক্ষার পর আপিল বিভাগের ওই রায়ের অনুলিপি বুধবার বিকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। কারা কর্তৃপক্ষ এরপর কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগে প্রাণভিক্ষার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চের সদস্যরা বিকালে ৩৬ পৃষ্ঠার এই রায়ে সই করেন। এ বেঞ্চের বাকি তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।বিচারকদের সইয়ের পর বিকাল ৩টার দিকে রায় সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছায়। সেখান থেকে বিকাল ৫টার আগে আগে অনুলিপি যায় ট্রাইব্যুনালে। সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (২) মো. সাব্বির ফয়েজ জানান, রায়ের অনুলিপি ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় এবং অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান ওই নথি ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকদের কাছে উপস্থাপন করেন। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তা পৌঁছে দেন পৌনে ৬টায়।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী আসামি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনান।এরপর তিনি কারা মহা পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করে আবার কারাগারে ফিরে আসেন। কামারুজ্জামানের অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির জানান, তারা কারাগারে এই জামায়াত নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছেন। এখন কারা কর্তৃপক্ষের জবাবের অপেক্ষায় আছেন।শুনেছি রায় তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে। এখন আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চেয়েছি। দেখা করার আগে তো বলা যাচ্ছে না তিনি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না।একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনের পাঁচটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৩ সালের ৯ মে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামান ‘যেভাবে এসব অপরাধ ঘটিয়েছেন,তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না’ বলে রায়ে বলা হয়।

কামারুজ্জামান ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সর্বোচ্চ আদালতও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে।শেরপুরের নালিতাবাড়ি থানার সোহাগপুর গ্রামে ১৯৭১ সালে ১২০ জন পুরুষকে বাড়ি থেকে ধরে এনে হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় আসে।এর সাড়ে তিন মাস পর গত ১৮ ফেব্র“য়ারি আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। তখনই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়।এরপর কামারুজ্জামান ওই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ গত সোমবার তা খারিজ করে দেয়। বিচারিক কার্যক্রমের চূড়ান্ত নিষ্পত্তিতেও ফাঁসির সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। নিয়ম অনুযায়ী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারেন। তিনি আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন।ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে অথবা কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে বলে আগেই জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

স্বরাষ্ট্র টওতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব প্রস্তুতি কারা কর্তৃপক্ষ নিয়ে রেখেছে।২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

সোমবার আপিল বেঞ্চে কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরই দণ্ড কার্যকর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে ওইদিনই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তার পরিবারের সদস্যরা।

আপিল বিভাগের রায়ের পর থেকেই জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে ঢাকায় এনে এ কারাগারে রাখা হয়েছে।পাকিস্তানি েেসনাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে কামারুজ্জামান এদেশের মানুষের ওপর যে নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড চালিয়েছেন তার জন্য শেরপুরে তার লাশ নেওয়া ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছেন তার স্ত্রীর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা আবু সালেহ নুরল ইসলাম হিরু।মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা)আবেদন খারিজ করে দেয়ে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

রোববার বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে সোমবার রায় দেয়ার জন্য দিন ধার্য করা হয়। আদালতে কামারুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রায় পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, এ রায়ে দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে এমন প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বস্তিদায়ক। বিশেষ করে শেরপুরের নলিতাবাগির সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর বিধবাদের জন্য এ রায়টি বহুল প্রত্যাশিত। তারা এ ন্যায়বিচারে একটা সান্তনা খুঁেজ পাবে। এটর্নি জেনারেল বলেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতি বরাবর এখন প্রাণভিক্ষার সূযোগ পাবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, এ মামলায় জেল কোডের বিধানে কার্যকর হবে না। সরকারের আদেশই এখানে চূড়ান্ত।তিনি বলেন, আসামি যদি প্রাণভিক্ষা না চান, সেক্ষেত্রে আসামির আত্মীয় স্বজনরা কারাগারের তার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন এবং সরকার রায় কার্যকরে পদক্ষেপ নিবেন।এটর্নি জেনারেল বলেন, এর আগে অপর আসামি আব্দুল কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষা চাননি। ফলে সরকার ওই আসামির রায় কার্যকর করে।কামারুজ্জামানের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) আবেদন খারিজ (ডিসমিসড) করে দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আসামিপক্ষে অপর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আজই তারা কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাতের উদ্যোগ নেবেন। পরবর্তী করনীয় বিষয়ে কামারুজ্জামান তাদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।আন্তর্জাাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু আদালতের আদেশ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় রায়ে সন্তোষ্টি প্রকাশ করে বলেন এ রায় প্রত্যাশিত। মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য দীর্ঘ আন্দোলনের এটি বিজয়। এ রায়ে তিনি গর্ববোধ করছেন বলে জানান। ট্রাইব্যুনালের অন্যতম প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে আইনের সর্বশেষ ধাপ শেষ হলো। তবে এ আসামি প্রানভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ পাবেন।

শুনানিতে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করে খালাসের পক্ষে চারটি যুক্তি দেখান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। অন্যদিকে রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায়-বইয়ে কামারুজ্জামানের নাম রয়েছে। পত্র-পত্রিকায়ও আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তার নাম এসেছে। এটর্নি জেনারেল বলেন, কামারুজ্জামানের বদর বাহিনীর ক্যাম্পের দারোয়ান মোহন মুন্সি এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষি হিসেবে তার (কামারুজ্জামান) বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সাক্ষি বলেছেন, কামারুজ্জামানের নির্দেশেই সবকিছু হতো। তার নির্দেশ ছাড়াও পাকিস্থানি সেনারাও কোনো কাজ করতো না।গত ৫ মার্চ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করা হয়। এর আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রেখে রায় দেয়।ট্রাইব্যুনাল তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে কামারুজ্জামানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আপিলের রায়ে বলা হয়, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে। তবে চতুর্থ অভিযোগ গোলাম মোস্তফাকে হত্যার ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আপিল বিভাগ। দ্বিতীয় ও সপ্তম অভিযোগে কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া দন্ড সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও বহাল রাখা হয়। দ্বিতীয় অভিযোগে অধ্যক্ষ আব্দুল হান্নানকে নির্যাতনের ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনাল ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়। আর সপ্তম অভিযোগে গোলাপজান গ্রামের পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় তাকে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদন্ড। ট্রাইব্যুনালে দেয়া এ দুটি সাজাই বহাল রাখে আজ আপিল বিভাগ।

প্রথম অভিযোগ শেরপুরের কালীনগর গ্রামের বদিউজ্জামানকে হত্যার ঘটনায় কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিলেও আপিল বিভাগ আজ তাকে খালাস দিয়েছে। ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের আনা সাতটি অভিযোগের মধ্যে পঞ্চম ও ষষ্ঠ অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি বলে রায়ে জানানো হয়েছিল। এ দুটি অভিযোগের বিষয়ে প্রসিকিউশন তথা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল না থাকায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।চূড়ান্ত রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের সূযোগ থাকায় সে অনুযায়ি তারা আবেদন দাখিল করে।রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা গত ১৯ ফেব্র“য়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও প্রেরণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রিভিউ দায়ের করায় মৃত্যুদন্ড কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায় বলে এটর্নি জেনারেল জানান।একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলায় ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন ও আসামীপক্ষে মোট ২৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেয়।২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এবং গত বছর ৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) আব্দুর রাজ্জাক খান, জব্দ তালিকার সাক্ষী বাংলা একাডেমীর সহকারী গ্রন্থাগারিক এজাব উদ্দিন মিয়া ও মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমেনা খাতুনসহ প্রসিকিউশনের পক্ষে ১৮ জন সাক্ষী তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্য সাক্ষীরা হলেন- ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি হামিদুল হক, শেরপুরে কামারুজ্জামানের স্থাপন করা আল-বদর ক্যাম্প ও নির্যাতন কেন্দ্রের দারোয়ান মনোয়ার হোসেন খান মোহন, মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক মুন্সী বীরপ্রতীক, মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল মান্নান, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ গোলাম মোস্তফা হোসেন তালুকদারের ছোট ভাই মোশাররফ হোসেন তালুকদার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামানের বড় ভাই ডা. মো. হাসানুজ্জামান, লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের পুত্র জিয়াউল ইসলাম, এডভোকেট আবুল কাশেম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পরিবারের সন্তান মো. জালাল উদ্দিন, মুজিবুর রহমান খান পান্নু এবং দবির হোসেন ভূঁইয়া।এ ছাড়া ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দেন শেরপুরের নলিতাবাড়ি উপজেলার ‘বিধবাপল্লী খ্যাতসোহাগপুর গ্রামের তিন নির্যাতিত নারী।আসামিপক্ষ এসব সাক্ষিদের জেরা করেছিল।কামারুজ্জামানের পক্ষে মোট ৫ জন সাফাই সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন- মো. আরশেদ আলী, আশকর আলী, কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল, বড় ভাই কফিল উদ্দিন এবং আব্দুর রহিম। প্রসিকিউশন তাদের জেরা করেছেন।ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনীত ৭টি অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ অভিযোগে হত্যার দায়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছিল।

এর মধ্যে তৃতীয় অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে আপিল বিভাগের চার বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে আসামি কামারুজ্জামানকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। আপিলের রায়ে বলা হয়, তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ রায় ঘোষণা করা হয়। বেঞ্চের অপর তিনজন বিচারপতি হলেনÑ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আনা রিভিউ আবেদন সোমবার খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।এদিকে, ফাঁসির আসামি মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ করতে ডেকেছে কারা কর্তৃপক্ষ।যুদ্ধাপরাধী এই জামায়াত নেতার ছেলে হাসান ইকবাল বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়ে বলেছে, আমরা চাইলে সোমবার বিকাল ৫টায় কারাগারে সাক্ষাৎ করতে পারি। আমরা ওই সময়ের মধ্যেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যাব।

দণ্ড কার্যকরের আগে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে পারবেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান। এ জন্য আলোচনা করতে তার আইনজীবীরা বিকাল ৪টায় সাক্ষাৎ করতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাননি।তার অন্যতম আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আমরা অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ ফোন করে তা নাকচ করে দিয়েছে। তবে বিকাল ৩টার দিকে চিঠি পাঠিয়ে পরিবারের সদস্যদের দেখা করতে বলেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী বলেন, এ ধরনের রায়ে সবসময়ই পরিবারকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী পরিবারকে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যায়ে আলোচনার জন্য আইনজীবীদের সাক্ষাতের সুযোগ নেই। এ কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

গত ১৮ ফেব্র“য়ারি আপিল বিভাগ এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকেই কামারুজ্জামানকে কারাগারে রাখা হয়েছে। ওই রায়ে ট্রাইব্যুনালের দেওয়ার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখে আপিল বিভাগ। এর বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করলে সোমবার তাও খারিজ করে দেয় প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।রায়ের পর এক ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের আগে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন ও পরিবারের সাক্ষাতের বিষয়টিই কেবল বাকি আছে।নিয়ম অনুযায়ী কামারুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে অথবা কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।এর আগে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের আগেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল। তবে সে সময় কাদের মোল্লা প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছেন। এদিকে সকালে রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরপরই পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। র্যা বের টহল দলকেও নিয়মিত ওই এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়।এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল নামে এক র‌্যাব সদস্য বলেন, আমাদের এরকমই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।চকবাজার থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, যেহেতু রিভিউ খারিজ হয়ে গেছে, সেজন্য কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তা নিশ্চিত করতেই কারাগার এলাকার নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে।দুপুরের পর দীর্ঘ দুটি বাঁশ ও ত্রিপল কারাগারের ফটক দিয়ে ভেতরে নিয়ে যেতে দেখা যায়। সঙ্গে নেওয়া হয় দুই বস্তা বালি।

কারাগারের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ফাঁসির মঞ্চের ওপরে আচ্ছাদন হিসাবে ব্যবহারের জন্য বাঁশ ও ত্রিপল নেওয়া হয়েছে।এর আগে কাদের মোল্লার ফাঁসির সময়ও এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে আশেপাশের কোনো উঁচু ভবন থেকে দেখা না যায়।আর ফাঁসির দড়ি ওজন নিতে পারে কি-না তা পরীক্ষার জন্য বালির বস্তা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।এসব বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কারা তত্ত্বাবধায়ক ফরমান আলী। তিনি বলেছেন, সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুযায়ী কাজ করতে কারা কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত রয়েছে। একাত্তরে সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞের দায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে ফাঁসির ওই আদেশ বহাল রাখেন। এরপর গত ১৮ ফেব্র“য়ারি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল-২ মৃত্যু পরোয়ানায় সই করে কারাগারে পাঠালে সেখানে বন্দী কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়। পরে ৫ মার্চ ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে আসামিপক্ষ। সোমবার সেই আবেদন খারিজ করেন আপিল বিভাগ।