দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৭ এপ্রিল: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। মঙ্গলবার সংস্থাটির ওয়েব সাইটে দেয়া এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠনটি রিভিউয়ে কামারুজ্জামানের আবেদনের মেরি’ না শুনেই আপিল বিভাগ তার রিভিউ খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ড একটি অপরিবর্তনীয় এবং নিষ্ঠুর সাজা। এটা আরো ভয়াবহ হয় যখন এ ধরনের সাজা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে বিচার বিভাগ ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ন্যায়বিচার লঙ্ঘনের ক্রমাগত এবং বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে যার নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা দরকার।
সোমবার সকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতার রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। এরপর রায় কার্যকর করার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয় কারাকর্তৃপক্ষ।সন্ধ্যায় কারাগারে কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ পরে জানায়, আদালতের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর করা হবে না। মঙ্গলবার পর্যন্ত আদালতের আদেশ পাননি কর্তৃপক্ষ।রিভিউ খারিজের রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পরই মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল জানিয়েছেন।
আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আইনের বাইরে কিছু করবে না সরকার। রায়ের কপি পেয়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফাঁসি কার্যকর করা হবে যে কোনো সময়।এদিকে কামারুজ্জামানের রিভিউ খারিজের রায়ের কপি আদালত থেকে কারাগারে না যাওয়ায় একদিন পরেও তার দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া আটকে আছে।প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ সোমবার সকাল ৯টায় কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ করার পর দণ্ড কার্যকর নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, কারাগারে নেওয়া হয় প্রস্তুতি।তবে আদালতের রায়ের কপি কারাগারে না যাওয়ায় রাতে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, রায়ের অনুলিপি না পাওয়ায় সোমবার আর দণ্ড কার্যকর হচ্ছে না।
মঙ্গলবার রায়ের কপি না পাওয়ায় তা কারাগারে পাঠানো যায়নি বলে সুপ্রিম কোর্টের নিবন্ধক সৈয়দ আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন।নিয়ম অনুযায়ী রিভিউ খারিজের পর কামারুজ্জামান অপরাধ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষা চাইলে রাষ্ট্রপতি তা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে অথবা কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে সরকার কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দণ্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে।রায়ের কপি হাতে না পাওয়ায় কামারুজ্জামানকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানাতে পারছে না কারা কর্তৃপক্ষ।রায়ের পর সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছিলেন, কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের আগে প্রাণভিক্ষা ও পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টিই কেবল বাকি আছে।তবে সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করায় এখন শুধু প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিষ্পত্তির অপেক্ষা।আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষ সব প্রস্তুতি নিয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন।একাত্তরে আল বদর বাহিনীর ময়মনসিংহ জেলা শাখার প্রধান কামারুজ্জামানকে ২০১৩ সালের ৯ মে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।ওই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায় দেয়।এর সাড়ে তিন মাস পর গত ১৮ ফেব্র“য়ারি আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। তখনই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়।