DoinikBarta_দৈনিকবার্তা kamruzzaman

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ এপ্রিল: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ (পুর্নবিবেচনা) আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। সোমবার রায় দেয়া হবে।রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ বিষয়টির ওপর শুনানি শেষে রায় দেয়ার দিন ধার্য করে এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অন্য তিন বিচারপতি হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

রোববার আদালতে কামারুজ্জামানের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।শুনানিতে কামারুজ্জামানের মৃত্যুদন্ডের রায় বাতিল করে খালাসের পক্ষে চারটি যুক্তি দেখান আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।অন্যদিকে রিভিউ খারিজ করে মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালালেরা কে কোথায়’-বইয়ে কামারুজ্জামানের নাম রয়েছে। পত্র-পত্রিকায়ও আলবদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তার নাম এসেছে। এটর্নি জেনারেল বলেন, কামারুজ্জামানের বদর বাহিনীর ক্যাম্পের দারোয়ান মোহন মুন্সি এ মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে তার (কামারুজ্জামান) বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ সাক্ষী বলেছেন, কামারুজ্জামানের নির্দেশেই সবকিছু হতো। তার নির্দেশ ছাড়াও পাকিস্থানি সেনারাও কোনো কাজ করতো না।গত ৫ মার্চ কামারুজ্জামানের পক্ষে রিভিউ আবেদনটি দাখিল করা হয়। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ৫৭৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। গত বছরের ৩ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি (বর্তমানে প্রধান বিচারপতি) সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চ কামারুজ্জামানকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদ-ের রায় বহাল রেখে রায় দেয়। রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের সূযোগ থাকায় সে অনুযায়ী তারা আবেদন দাখিল করে।

রায় প্রকাশের পর কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। লাল কাপড়ে মোড়ানো এ পরোয়ানার সঙ্গে কামারুজ্জামানের আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপিও প্রেরণ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রিভিউ দায়ের করায় মৃত্যুদ- কার্যকর প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায় বলে এটর্নি জেনারেল জানান।একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুলাই কামারুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।সকাল পৌনে ১০টা থেকে শুরু করে মাঝে আধা ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের বক্তব্য শোনেন বিচারকরা।কামারুজ্জামানের পক্ষে খন্দকার মাহববু হোসেন ও রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলাম শুনানিতে অংশ নেন। পরে রায়ের জন্য সোমবার দিন ঠিক করে দেয় আপিল বেঞ্চ।গতবছর ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগের এই বেঞ্চই কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখে।রিভিউ আবেদনের শুনানিতে অংশ নেওয়ার আগে শনিবার কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নেন।

শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত ।এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানকে ফাঁসির রায় এসেছিল ২০১৩ সালের ৯ মে।আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করলেও আসামির আইনজীবীরা গত ৫ মার্চ রিভিউ আবেদন করলে সেই পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যায়।আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে দুই দফা তারিখ পেছানোর পর রোববার আবারও ওই রিভিউ আবেদন আপিল বিভাগে ওঠে।রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন এই যুদ্ধাপরাধী।জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি,যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের আগে রিভিউয়ের পর্যায়ে এসেছে।