দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ এপ্রিল: এ কদিকে আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন; অন্যদিকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতারে পুলিশের অযাচিত বাড়াবাড়ী গোটা নির্বাচনী পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ, কলুষিত ও আতঙ্কিত করে তুলেছে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় যেকোনো নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকার নির্বাচন কমিশনের যেকোনো পরামর্শ ও নির্দেশনা মানবে এটাই বিধান। কিন্তু ‘ইসির নির্দেশ মানতে সংসদ সচিবালয় বাধ্য নয়’ মর্মে ইসিতে প্রেরিত চিঠি একদিকে যেমন নির্বাচন কমিশনকে বিস্মিত করেছে; অন্যদিকে সমগ্র দেশবাসীও হতাশ হয়েছে। সংসদ সচিবালয় কর্তৃক নির্বাচন কমিশনের প্রতি এহেন অসহযোগিতামূলক আচরণ নি:সন্দেহে নির্বাচন কমিশনকে অবজ্ঞা করারই সামিল। সেক্ষেত্রে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন কতটুকু স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে পারবে তা এখন দেশবাসী দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। শনিবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ।আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থতার পরিচয় দিলে কোনমতেই সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। নির্বাচনী মাঠে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরকার সমর্থিত প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিয়ে ক্রমাগত বিমাতাসূলভ আচরণ নির্বাচনী পরিবেশকে আরো বেশী মাত্রায় সন্দেহপ্রবণ, কন্টকাকীর্ণ ও দুষণীয় করে তুলেছে। সারাদেশে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান চলছে; এতে করে বিরোধী প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের জান বাঁচানোই দায় হয়ে পড়েছে, তাছাড়া তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারে পুলিশের ভিন্ন মাত্রা অবলম্বন নির্বাচনে এক পক্ষকে বিজয়ী করার কৌশল হিসেবেই দেখছে দেশের সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ। ৫ জানুয়ারী জাতীয় নির্বাচনে প্রহসনের খেলা খেলে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকে যেভাবে সহায়তা করে নিজেদেরকে স্বাধীন সত্ত্বার প্রশ্নে বিশ্ববাসীর নিকট হেয় ও দেউলিয়া প্রমান করেছিল ঠিক সেভাবে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারেও তার পূনরাবৃত্তি ঘটালে নির্বাচন কমিশন নামক প্রতিষ্ঠানটি পূনরায় জাতির নিকট কালিমায্ক্তু ও আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর আজ্ঞাবহ যন্ত্রের স্বীকৃতি পাবে। তাই দেশবাসী অন্তকরণে এটাই প্রত্যাশা করে যে, অতীত ভুল ও পক্ষাবলম্বনের অপবাদ থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়ে নির্বাচন কমিশন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অবাধ, সকল প্রার্থীর সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ ও নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগের ক্ষেত্রে পক্ষপাতমুক্ত হয়ে কাজ করবে। আর সেটির ব্যত্যয় ঘটলে জাতির ভবিষ্যৎ কোনদিকে ধাবিত হবে তা ভবিতব্যই বলতে পারে। তাই সরকার ও নির্বাচন কমিশন ২০ দলীয় জোট ও জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে জাতির আকাঙ্খা পূরণে সচেষ্ট হয়ে দেশকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিবে-এটাই কামনা।
তিনি বলেন, বিএনপি’র অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ গুম হওয়ার ঘটনায় দল ও তার পরিবারের শত আকুতি সত্ত্বেও সরকারের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও পর্যন্ত তার সন্ধান দিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তার পরিবারসহ গোটা দেশাবাসী গভীরভাবে শঙ্কিত। দেশবাসী আশা করে-সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অবিলম্বে সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ বিরোধী দলীয় গুমকৃত নেতা-কর্মীদেরকে জনসমক্ষে হাজির করে উৎকন্ঠিত পরিবারগুলোকে আশার আলো দেখাবে। পাশাপাশি গণদাবি অনুযায়ী নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশব্যাপী চলমান মহাসংকট থেকে উত্তরণে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী উদ্যোগী হবে।
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করত: অবিলম্বে তাদের মুক্তি এবং সারাদেশ বিশেষ করে তিন সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদেরকে গ্রেফতারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতারী অভিযানের নামে তল্লাশীর তান্ডব বন্ধ করে আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমূখর করার জোর দাবী জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপি’র অন্যতম যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ ২০ দলীয় জোটের গুমকৃত সকল বিরোধী নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে সুস্থ ও অক্ষত অবস্থায় ফেরত দান, ২০ দলীয় জোটের কারান্তরীণ শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মুক্তি এবং গণগ্রেফতারসহ মামলা হামলা বন্ধ করে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে চলমান অবরোধের পাশাপাশি আগামীকাল ৫ এপ্রিল রোজ রবিবার সারাদেশে জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও সকল মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আহবান জানানো হয়।