দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২ এপ্রিল: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনি যদি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন তাহলে আমি আশা করি আমার স্বামীর সন্ধান মিলবে। স্বামীকে ফিরে পেতে এভাবে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তার স্ত্রী।বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সালাহ উদ্দিন আহমেদের সন্ধান দাবিতে আয়োজিত সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি। সালাহ উদ্দিন আহমেদসহ গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ। এতে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী এই অভিযোগ করেন।
হাসিনা আহমেদ বলেন, আমার স্বামীর (সালাহ উদ্দিন) কোন অপরাধ নেই। তারপরও কোন অভিযোগ বা মামলা থাকলে তাকে আদালতে হাজির করন। আদালত তাকে বিচার করবে।তিনি বলেন, কাউকে নিখোঁজ করে দেওয়ার অধিকার কারো নেই। তুলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। কিন্তু সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বারবার অনুরোধ করেছি, কিন্তু কোন ফলাফল পায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই, আমার সন্তানরা তার বাবাকে ফেরত চায়। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে, তাদেরই তাকে ফেরত দিতে হবে।সংগঠনটির অভিযোগ, গড়ে প্রতিদিন দু’জন এবং কোনো কোনো দিন চার-পাঁচজনও বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার হচ্ছেন। যাদের বেশির ভাগ বিরোধীদলের নেতকর্মী।ক্রসফায়ার ও বন্ধুকযুদ্ধের নামে র্যা ব ও পুলিশ দেশে ফ্রি স্টাইলে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ।সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরে রুহুল আমিন গাজী বলেন, এই নিখোঁজের ঘটনায় দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ সত্ত্বেও রাষ্ট্র সম্পূর্ণ নির্বিকার ভুমিকা পালন করছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রীরা এমন মন্তব্য করেছে যা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া কিছুই নয়।গত কয়েক মাসে দেশে গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড নিয়ে দেশে বিদেশী মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।তিনি বলেন, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব নাগরিকের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া। এ ব্যাপারে রাষ্ট্র ব্যর্থ হলে নাগরিকরা কোথায় যাবে? সালাহ উদ্দিনকে উদ্ধারের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু উল্টো সরকার পরিহাস করে চলেছে।
বাংলাদেশ যেন এক গুমের রাজ্যে পরিণত হয়েছে এমন মন্তব্য করে রুহুল আমিন বলেন, শেখ হাসিনার সরকার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একের পর এক গুম আর গুপ্ত হত্যার ঘটনায় মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে।তিনি আরো অভিযোগ করেন, পাইকারী হারে হতাকা- চালাতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ঘাতক বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে। যার পরিণাম শুভ হতে পারে না। যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করার ফল বুমেরাং হতে বাধ্য।
আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আয়োজনকে সরকারের অপকৌশল আখ্যা দিয়ে বিএনপিপন্থি এই পেশাজীবী নেতা বলেন, গুম, আর বিচার বহির্ভূত হত্যার পাশাপাশি নীল নকশার অংশ হিসেবে সরকার হঠাৎ করে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। তারা পাঁচ জানুয়ারির ভূয়া নির্বাচনের মতো সিটি করপোরেশনকে দখলে নেয়ার অপকৌশল নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিকে নির্বাচনী কার্যক্রমে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রকাশ্যে মাঠে নামতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রায় ৪৪টি কার্যালয় বন্ধ।তিনি অবিলম্বে সিটি করপোরেশনের সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরীর আহ্বান জানান।বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তুলে নিয়ে গেছে, এটা এখন সবার কাছে স্পষ্ট।
তিনি বলেন, তারা যেহেতু বিষয়টি অস্বীকার করছেন, তাই সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোজঁ হওয়ার দু’দিন আগে তার গাড়িচালক ও ব্যক্তিগত স্টাফদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য (সেটা ডিবি হোক বা ৠাব হোক যারাই) গ্রেফতার করেছিলেন তাদের গণমাধ্যমের সামনে হাজির করুন। গণমাধ্যমই তাদের (আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী) জিজ্ঞেস করুক, সালাহউদ্দিন আহমেদকে কারা তুলে নিয়ে গেছে।সালাহউদ্দিন আহমেদ গভীর আত্মগোপনে আছেন- সরকারের মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে সংবাদ সম্মেলনে শওকত মাহমুদ বলেন, তিনি যদি আত্মগোপনেই থাকেন, তাহলে তাকে খুঁজে বের করার দায়িত্বওতো সরকারের।আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজে বের করার দায় এড়াতে পারে না বলেও দাবি করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা।সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারনের উপদেষ্টা ও বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ও উইট্যাবের প্রেসিডেন্ট আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, এ্যাবের মহাসচিব ইঞ্জি: হারুন অর রশীদ প্রমুখ।