দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ এপ্রিল: তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন,গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেউ আইনের ঊধের্্ব নয়৷ যত বড় নেতানেত্রীই হোক না কেন, অপরাধ করলে তাকে কারাগারে যেতে হবে, আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে৷ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশে হলুদ সাংবাদিকতা : প্রবণতা ও প্রকরণ’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উত্সবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন৷ পিআইবি’র চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার ও প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ৷
আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, প্রথম আলো’র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও গ্রন্থের লেখক ভোরের কাগজের বার্তা সম্পাদক শানত্মনু চৌধুরী৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন, পিআইবি’র মহাপরিচালক শাহ আলমগীর৷তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের সমালোচনা অত্যনত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ৷
তাই আমরা সমালোচনা সহ্য করবো৷ কিন্তু মিথ্যাচার, তথ্যবিকৃতি, উস্কানি সহ্য করবো না৷ সমালোচনা সহ্য করা হবে কিন্তু বাংলাদেশে জাতিতে জাতিতে, ধর্মে ধর্মে হানাহানি, মারামারি, উস্কানির কোন অপচেষ্টা আমরা সহ্য করবো না৷
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার অত্যনত্ম নমনীয় সরকার, এই সরকার সমালোচনাও সহ্য করে, আবার মিথ্যাচারও সহ্য করে৷ আমরা আশা করি, গণমাধ্যম শুধরে যাবে৷ গণমাধ্যমের অপসাংবাদিকতার দুর্বলতা মোকাবেলা, রাজনীতির ভেতরে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ এবং জঙ্গিবাদি উস্কানির দুর্বলতা মোকাবেলা করার যৌথ উদ্যোগ গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক কর্মীদেরই নিতে হবে এবং একসঙ্গেই লড়াই করতে হবে৷ইনু বলেন, রাজনীতি থেকে দলবাজি, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ বিতাড়ন এবং গণমাধ্যম থেকে অপসাংবাদিকতা ও হলুদ সাংবাদিকতা দূর করতে হবে৷ গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য এটা অত্যনত্ম জরুরি৷ কারণ বর্তমানে চক্রানত্মকারী শক্তি, অশুভ অগণতান্ত্রিক শক্তি, জঙ্গিবাদি শক্তি ও অপসাংবাদিকতার গভীর যোগসাজস চলছে৷ এটা গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের জন্য বিপজ্জনক৷ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতা ও বদ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য স্বৈরাচার, সামরিকতন্ত্র, সাম্প্রদায়িক উগ্রবাদি, জঙ্গিবাদি-সন্ত্রাসী ও অগণতান্ত্রিক অশুভ শক্তির একটি বড় অস্ত্র হচ্ছে অপসাংবাদিকতা এবং হলুদ সাংবাদিকতা৷ এসব অশুভ শক্তি অপসাংবাদিকতাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে৷
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে হলুদ সাংবাদিক ও অপসাংবাদিকতার একটি রাজনৈতিক মাত্রা আছে৷ বর্তমানে যে জঙ্গিবাদি ও আগুনসন্ত্রাসী কার্যক্রম চলছে তারা গণমাধ্যমের এসব অপসাংবাদিকতাকে অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে সরকারকে ঘায়েল করার জন্য৷ এটা অত্যনত্ম খারাপ নজির৷ গণতন্ত্র ও গণমাধ্যমের যে ঘাটতি আছে সে ঘাটতি দূর করার মধ্য দিয়ে আমরা গণমাধ্যমকে রক্ষা করবো৷ গণমাধ্যমের দুর্বলতা হচ্ছে- হলুদ সাংবাদিকতা ও অপসাংবাদিকতা৷
তথ্যমন্ত্রী বলেন,মিথ্যাচার, অতিরঞ্জন,তথ্য বিকৃতি,তথ্য ধামাচাপা দেওয়া, সাম্প্রদায়িকতা চর্চা, সাম্প্রদায়িক উস্কানি, চরিত্র হনন কিংবা বাণিজ্যিক সাফল্যের জন্য চটকদার খবর প্রচার করা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা এবং প্রতিনিধিত্বমূলক খবর ছাপানোর চেয়ে অপ্রনিধিত্বমূলক খবর ছাপিয়ে কর্তৃপক্ষকে খাটো করার প্রবণতা হচ্ছে গণমাধ্যমের দুর্বলতা৷ এ দুর্বলতা সত্ত্বেও আমাদের গণমাধ্যম একটি বলিষ্ঠ অবস্থানে বিরাজ করছে এবং গণতন্ত্রের একটি গুরম্নত্বপূর্ণ একটি সত্মম্ভ হিসেবে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখনো যে ভূমিকা রাখছে তা প্রশংসনীয়৷তিনি বলেন, গণমাধ্যমের এই ভূমিকার জন্য আমাদের শাসন-প্রশাসন এবং গণতন্ত্রের ত্রম্নটি-বিচু্যতি সংশোধন করতে আমরা সৰম হ”িছ৷ গণতন্ত্র ও রাজনীতির ভেতরে যে স্বৈরাচারী প্রবণতা, দুর্নীতির প্রবণতা, ৰমতার অপব্যবহারের যে প্রবণতা, গণমাধ্যমের ভূমিকার ফলে আমরা এগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম হচ্ছি৷ এদিক বিবেচনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম এখনো জীবনত্ম৷
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রসারমান, বিকাশমান৷ শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার অবাধ তথ্য চলাচলে তথ্য অধিকার আইনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তাই, বাংলাদেশে চলমান জঙ্গিবাদি আক্রমণ এবং আগুন সন্ত্রাসের সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতির মধ্যেও গণমাধ্যম কাজ করতে সক্ষম হচ্ছে৷ এ সত্ত্বেও কতিপয় বিদেশি সংস্থা ও ব্যক্তি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে৷ তারা কোন তথ্যের ভিত্তিতে, কোন মাপকাঠিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়৷