দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০২ এপ্রিল: প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অংশ উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্রতিবন্ধীর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে তাদের প্রতি আরো সহানুভূতিশীল হতে সকলের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন৷তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ৷ তারা আমাদের সম্পদ, বোঝা নয়৷ এসব প্রতিবন্ধীর প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হলে তারা তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের মাধ্যমে সমাজে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে৷তিনি আরো বলেন, সুতরাং আমি সকলের কাছে এ আহ্বান রাখতে চাই আপনারা কেউ তাদের অবহেলার চোখে দেখবেন না৷ বরং আরো সহানুভূতি ও ভালোবাসা দিয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করবেন৷প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৮ম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান৷
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এতে সভাপতিত্ব করেন৷ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম৷অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল অটিজম এডভায়জরি কমিটির চেয়ারপার্সন সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়৷অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট প্রমোদ মানকিন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোজাম্মেল হোসেন এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম বক্তব্য রাখেন৷অটিজম নিয়ে বিরূপ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার ওপর গুরম্নত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধীত্ব কোন রোগ নয় বরং এটি একটি সৃষ্টি-বৈচিত্র্য৷তিনি বলেন, অটিজমে আক্রানত্ম শিশুদের বিষয়ে কারো কোন হাত নেই৷ কিন্তু আমাদের সমাজে অটিজম নিয়ে কিছু নেতিবাচক ধারণা রয়েছে৷ আমাদের এ ধরণের নেতিবাচক ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে৷শেখ হাসিনা বলেন, অটিজমে আক্রানত্ম এসব কোমলমতি শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হলে তারাও হতে পারে সমাজের মূল্যবান সম্পদ৷এ প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আলবার্ট আইনস্টাইন, ডারউইন, নিউটন, উইলিয়াম বার্টলার ইয়েটস ও স্টিফেন হকিংয়ের মতো বিশ্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি জন্মগতভাবেই ছিলেন অটিস্টিক৷ কিন্তু তাদের মেধা বিকাশে অটিজম কোন বাধা হতে পারেনি৷
অটিস্টিক ব্যক্তিদের কম্পিউটার,ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনসহ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুস্থ মানুষের মতো তারা এখন দক্ষতা প্রদর্শন করতে সমর্থ হচ্ছে এবং তাদের অনেক সমস্যা সমাধান করতে পারছে৷তিনি অটিস্টিক শিশুদের উপযোগী হাডওয়্যার ও সফটওয়্যার তৈরি করতে সংশিস্নষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান৷ একই সঙ্গে তিনি অটিস্টিক শিশুদের ব্যবহার উপযোগী ওয়েবসাইট তৈরি করতে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিও আহবান জানান৷অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার অটিস্টিক শিশুদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী তাদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ তৈরি করেছে৷
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নেতত্বাধীন সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে ইতোমধ্যে ডিজ্যাবল পারসন্স রাইট এ্যান্ড প্রটেকশন এ্যাক্ট- ২০১৩’ এবং নিউরো-ডেভলপমেন্টাল ডিজ্যাবল প্রটেকশন ট্রাস্ট এ্যাক্ট-২০১৩’ প্রণয়ন করেছে৷তিনি বলেন, শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিৰার জন্য বিভিন্ন পদৰেপ নেয়া হয়েছে কারণ তাদেরকে পেছনে রেখে সমাজ কখনো এগিয়ে যেতে পারে না৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে ফিজিওথেরাপি ও চিকিত্সা প্রদানে ৬৪টি জেলায় ১০৩টি সেবা ও সহায়তা কেন্দ্র (ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার) চালু করেছে৷ তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় এ সেবা ছড়িয়ে দেয়া হবে৷তিনি প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি চাকরির কোটা সংরক্ষণ ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা বৃত্তি চালুসহ তাদের কল্যাণে নেয়া সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন৷প্রধানমন্ত্রী শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসাসহ তাদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এজন্যে একটি বিশেষ সমন্বিত শিৰা নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে৷
ভবিষ্যতে এসব কর্মকান্ড আরো বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন,এ নীতির আওতায় প্রায় ১০ হাজার মানসিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষার জন্য ৫০টি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে৷ এ উদ্দেশ্যে প্রায় সাড়ে নয় কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন,অটিস্টিক শিশুসহ সকল প্রতিবন্ধীকে শিক্ষার মূল ধারায় আনতে শিৰা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিশেষ একাডেমি স্থাপনে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে৷ এছাড়া তিনি বলেন, অটিস্টিক শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা প্রদানের লৰ্যে ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ক্যাম্পাসে একটি অটিজম রিসোর্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে৷আনত্মর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা প্যারা অলিম্পিক এবং স্পেশাল অলিম্পিকে বেশ কয়েকবার বিরল পুরস্কার অর্জন করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে৷তিনি বলেন, প্রতিবন্ধীদের খেলাধূলার বিসত্মার ঘটাতে আমরা একটি আনত্মর্জাতিক মানের ক্রীড়া কমপ্লেঙ্ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছি৷
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৭ তম অধিবেশনে গৃহিত বাংলাদেশের প্রসত্মাবের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এ প্রসত্মাব করা হয়েছে, তিনি একজন অটিজম বিশেষজ্ঞ ও শিশু মনোবিজ্ঞানী৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ অটিজম সম্পর্কে সামান্যই সচেতন ছিলেন৷ তিনি বলেন, কিন্তু আমার মেয়ে এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে একটি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছেন৷শেখ হাসিনা বলেন, যাই হোক না কেন, তিনি তাঁর মেয়ের কাছ থেকে অটিজম সম্পর্কে জেনেছেন এবং শিখেছেন৷ তিনি বলেন, ‘আমি পুতুলের কাছ থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ গ্রহণ করছি, সে অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরী করতে বিশ্বব্যাপী একটি গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তাকে আমি আমার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷পরে প্রধানমন্ত্রী অটিস্টিক শিশুদের আয়োজিত একটি বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন৷