DoinikBarta_দৈনিকবার্তা হাসিনা

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০১ এপ্রিল: বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আইন মেনে চলি। আইন যেভাবে বলবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এখন যদি কোর্ট থেকে নির্দেশ আসে তার (খালেদা) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে চলমান অবরোধ-হরতালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করার, তবে আমরা তা করবো- বলেন প্রধানমন্ত্রী।বুধবারবিকেলে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেহেতু আইন প্রণয়ন করি, তাই আমরা আইন রক্ষা করবো। যা কিছু হয় আইনের আওতায় হবে।তিনি বলেন, যদি কোর্ট থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশ আসে, তবে তার (খালেদার) সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। আমরা তো বিএনপি নেত্রীর মতো আইন অমান্য করতে পারি না।খালেদা জিয়ার নির্দেশিত ভুল পথে বিএনপি ‘নিশ্চিহ্ন’ হওয়ার পথে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যেমন ভুল করেছেন, তেমনি এখন যে দেশের মানুষ তার সাথে নেই, তা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন।দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এখন নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের দিকে ইঙ্গিত করে একথা বলেন তিনি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের হরতাল-অবরোধে নাশকতায় নিরীহ মানুষের প্রাণহানি নিয়ে যেমন সমালোচনা রয়েছে, তেমনি কর্মসূচির প্রভাবও এখন জনজীবনে দৃশ্যমাণ নয়। শেখ হাসিনা বলেন, তার (খালেদা জিয়া) এই কর্মসূচি বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে, আর এটাই হবে তার কথিত আন্দোলনের পরিণতি।সরকার প্রধান সংসদে জানান, বিএনপি জোটের ৮৫ দিনের কর্মসূচিতে পেট্রোল বোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে ১৩০ জন নিহত এবং সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মক আহত হয়েছেন। এই সময়ে ২ হাজারের বেশি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।এটা দেশের চলমান অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে রুখে দেওয়া গভীর ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। এই নৈরাজ্য দীর্ঘদিন চলতে দেওয়া যায় না।জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এ পর্যন্ত নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২৭ জনকে মোট ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। আরও ৩০ জনের পরিবারকে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায় রয়েছে। যে সব যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ৪২৬টির মালিককে মোট ৫ কোটি ৭৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আরও ৩৯৫টি ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহন মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।হরতাল-অবরোধ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়লেও গত ১৩ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণাই দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা।হাসিনা বলেন, এতগুলো মানুষ মারা গেল, অথচ তিনি তার বক্তব্যে তাদের প্রতি সমবেদনাটুকুও জানাননি। আসলে এই নিরীহ মানুষগুলোকে তিনি হত্যা করেছেন। তাই সমবেদনা জানানোর মানসিক শক্তিটুকু তার ছিল না।৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে ৩ জানুয়ারি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। পরে পুলিশ বেষ্টনি সরানো হলেও গুলশানের কার্যালয় ছাড়েননি তিনি।প্রায় তিন মাস ধরে কার্যালয়ে অবস্থানের মধ্যে জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় হাজিরা না দেওয়ায় খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে তা কার্যকর হতে এখনও দেখা যায়নি। আদালতে না গিয়ে খালেদা আইন ভেঙেছেন মন্তব্য করে সরকার প্রধান হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন যদি আদালতে আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়না যাওয়া মাত্র পুলিশ আইনানুগ পদক্ষেপ নেবে।

আবারও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে জঙ্গি নেত্রী আখ্যায়িত করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন।জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে কাজী নাবিল আহমেদের তারকা চিহৃত প্রশ্ন-৯৭ এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষই জঙ্গি নেত্রীর ধ্বংসের কর্মকাণ্ড সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করছে। জনগণই সন্ত্রাসের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। দেশের মানুষ জঙ্গি নেত্রীর কথা মানেন না।এমন কী বিএনপির নেতারাও তার (খালেদা) কথা শুনেন না, তার ফোন পর্যন্ত ধরেন না’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেত্রীর নাশকতা ছাড়া রাজনৈতিক কোনো আন্দোলন নেই। খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যেমন ভুল করেছেন তেমনি এখন দেশের কোনো মানুষ তার সঙ্গে নেই তা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন।

বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, শান্তিপূর্ণ ও স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। নাশকতামূলক ও ধ্বংসমূলক কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠী, অর্থায়নকারী ও পরিকল্পনাকারীদের তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়া সব ধরনের জঙ্গি, আসামি গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদবদ্রব্যসহ সব ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধারে পুলিশ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছে।