দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মার্চ: ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি।দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে থাকলেও মাঠে থাকতে পারবেন কি না তা নিযে দলে উৎকণ্ঠা বাড়ছে।সূত্র জানায়, প্রার্থীদের এবং তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের অবাধে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির দাবি নিয়ে শিগগির দলের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে। এ নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে।এর আগে বিএনপি সমর্থক শত নাগরিকের কয়েকজন প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনে গিয়ে বিষয়গুলো কমিশনকে জানিয়েছিলেন।তাঁরা কমিশনকে মনোনয়ন পত্র জমাদেওয়ার সময় তিন দিনবাড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন।কিন্তুতা রাখা হয়নি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলেই এ অনুরোধ রাখতে পারতো।তা না করায় মনে হচ্ছে কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশও তৈরি করবে না।এরপর থেকে নির্বাচন না করার বিষয়টিও দলে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তারপরও বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ, বিশেষ করে প্রার্থী ও কর্মীদের যাতে গ্রেপ্তার করা না হয়, কমিশনের কাছে সে নিশ্চয়তা চাইবে।
বিএনপির সূত্র জানায়, এর আগে শত নাগরিক এর প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিল। তা নিয়ে দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও তৈরি হয়েছে। অনেকেবলেছেন,এতে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ফুটে উঠেছে। এ অংশটিকে শান্ত রাখতে সরাসরি বিএনপির প্রতিনিধি দল কমিশনে পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।ইতিমধ্যে নির্বাচনে মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। বিএনপি এখনো ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে সমর্থনদেয়নিতবে ঢাকা উত্তর থেকেমেয়র পদে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও তাঁর ছেলে তাবিথ আউয়াল। আর দক্ষিণে মেয়র পদে বিএনপির বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন আহমেদ পিন্টু ও বিএনপির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল বাশারের মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে।
বিএনপির সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তারা নির্বাচনে থাকতে চায়। কিন্তু নেতা-কর্মীদের নামে মামলা থাকায় গ্রেপ্তারের আশঙ্কা দলটিকে ভাবাচ্ছে বেশিগ্রেপ্তারের আশঙ্কায় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য রিপন ছাড়া আর কেউ সশরীরে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাননি। তাঁদের মধ্যে নাসির উদ্দিন কারাগারে।এ ছাড়া মির্জা আব্বাস, এম এ সালাম, আবদুল আউয়াল মিন্টু-এঁরা সবাই গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। এ অবস্থায় তাঁরা কীভাবে নির্বাচনী প্রচারে নামবেন, তা এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ তাঁদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে এক বা একাধিক মামলা আছে। একই অবস্থা ওড়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও।তা ছাড়া তাঁদের হয়ে যেসব নেতা-কর্মী কাজ করবেন, তাঁদের একটি বড় অংশ আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের অনেকে মামলার আসামি। এ ছাড়া অনেক মামলা আছে যেখানে আসামিদের একটি অংশ অজ্ঞাতনামা। যাঁদের নামে মামলা নেই তাঁরা ভয় পাচ্ছেন এসব মামলাকে। এ অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হবে না-এমন নিশ্চয়তা না থাকলে সবাইকে মাঠে নামানো কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকেরা। তাঁরা চান, অন্তত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, বিএনপি সরাসরি না হলেও শত নাগরিকের প্রতিনিধি দল কিছু দাবি নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে ধরেছে।ওই প্রতিনিধি দলে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাও ছিলেনকিন্তু কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নিভয়ে আতঙ্কে প্রার্থীরা সশরীরে মনোনয়নপত্র জমা দিতেওযেতে পারেননি। তারপরও বিএনপি বিভিন্নভাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। কিন্তু সরকার কোনোভাবেই এগিয়ে আসছে না।দলীয় একাধিক নেতা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মনোনয়ন জমা দিলেও এখন পর্যন্ত তাঁদের কাউকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। সূত্র জানায়, প্রার্থী বাছাই শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অপেক্ষা করবে। দলটির আশঙ্কা কারও কারও প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। যাঁরা বৈধ প্রার্থী হিসেবে থাকবেন তাঁদের মধ্য থেকে সমর্থন দেওয়া হবে।মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন নিয়েছেন এমন একজন প্রার্থী বলেন, দলীয় সমর্থন কাকে দেওয়া হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। কার কার আবেদন শেষ পর্যন্তবৈধ থাকবে তা দেখার বিষয়। দলের চেয়ারপারসন সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এ জন্যই একাধিক নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।এদিকে, নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের মাঠে নামা নিয়ে শঙ্কায়আছেন মনোনয়নপত্র জমাদেওয়া বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আটজন কাউন্সিলর।
আত্মগোপনে থাকা কাউন্সিলরদের মধ্যে কয়েকজন শঙ্কার কথা জানালেও প্রয়োজনে কারাগারে থেকে ভোটের থাকার কথা জানিয়েছেন।অন্যদিকে পুলিশ বলছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় আইন অনুযায়ী কাজ করবে তারা।এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার কী করে, তা দেখার অপেক্ষোয় রয়েছি।আগামী ২৮ এপ্রিল ভোটে অংশ নিতে রোববারশেষদিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৪টি নারী কাউন্সিলর পদে মোট ৩৫৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন নাশকতার মামলার আসামি আটজন কাউন্সিলর।
এদের মধ্যে বিএনপিতে যুক্তরা হলেন- ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের মাহবুবুল আলম, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীর আব্দুস সাত্তার সেলিম, ৩১ নম্বর আলকরণের দিদারুর রহমান লাভু, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটার ইসমাইল বালি, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরের হাসান মুরাদ, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহরের সরফরাজ কাদের রাসেল।এছাড়া ৮ নম্বর শুলকবহর ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থক কাউন্সিলর শামশুজ্জামান হেলালী ও ১৩ নম্বর পাহাড়তলীর মাহফুজুল আলমও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।গত ৫ জানুয়ারির পর অবরোধ শুরুর পর থেকে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতার মামলায় আসামি হয়েছেন তারা।এদের মধ্যে চান্দগাঁও এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় গত ৮ এপ্রিল থেকে কারাগারে আছেন মাহবুবুল আলম।গ্রেপ্তার এড়াতে তারা সবাই মনোয়নপত্রও সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন পরিবারের সদস্য, আইনজীবী কিংবা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে।নির্বাচন কমিশন ১ ও ২ এপ্রিল মনোনয়ন বাছাই শেষে ৯ এপ্রিল চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে। ৯ এপ্রিলই মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।এরপরই প্রার্থীরা ঝাঁপিয়ে পড়বেন প্রচারে। কিন্তু অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনী আমেজে থাকলেও প্রচারে নেমে গ্রেপ্তারের শঙ্কায় আছেন আটজন কাউন্সিলর প্রার্থী।
আত্মগোপনে থাকা ৩৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইসমাইল বালি বলেন, গত ১৩ মার্চ আমি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ১৬ মার্চ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।সমর্থকরা রোববার আমার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। আমি উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য আবেদন করব। জামিন পেলেই প্রচারণা শুরু করব।প্রয়োজনে কারাগারে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা বলেছেন এই কাউন্সিলর। ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সেলিম মামলায় হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। তিনিও আগামী ২ এপ্রিল উচ্চ আদালত খুললে জামিনের আবেদন করবেন জানিয়েছেন। তবে জামিন না পেলে নির্বাচনী প্রচারে তাদের সমস্যা হবে বলে মনে করেন তিনি।আসামি প্রার্থীদের বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মণ্ডল বলেন, আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে।কমিশন যা বলবে আমরা তা মানব।তবে যারা ফৌজদারি অপরাধে অপরাধী তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে হাঁটাচলার অধিকারও হারিয়ে ফেলেন। যে কোনো সময় চাইলে তাদের গ্রেপ্তার করা যায়। গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি বলেন, আদালত থেকে জামিন না পেলে আসামিদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী যে রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়, ভোটে প্রার্থী হলেও তাদের বিরুদ্ধেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এসব প্রার্থীদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়।রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, ঢাকার নির্বাচন কমিশন থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব আমরা।