দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মার্চ: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে দুর্নীতি দমনের কথা বলছে, আসলে দুদক কি দুর্নীতিমুক্ত ?এমনটাই প্রশ্ন করেছেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।দেশের প্রতিটি স্তরে আগ্রাসীভাবে দুর্নীতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন,যে যেখানে পারছে সেভাবেই লুণ্ঠন করছে।সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় শিল্পকলা একাডেমিতে দুদক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন প্রশ্ন রাখেন। অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের মাঝে সংবর্ধনা প্রদানের জন্য এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দুদককে আমরা যতই স্বাধীন বলি না কেন, আসলে সেই অর্থে স্বাধীন নয়। রাজনীতির পরিবেশ সবকিছুতেই প্রভাবিত। আমরা বলি দুদক স্বাধীন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন, মানবাধিকার কমিশন স্বাধীন। তারপরও এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে এত গোলমাল কেন? তারপরও এগুলোর বিষয়ে কথা উঠে যে- কেন এরা কেউ স্বাধীন নয়। এজন্য রাষ্ট্রকে ভুমিকা নিতে হবে। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে দেখা যাচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকারগুলো দুর্নীতিকে স্বাধীনতা দিয়ে আসছে। এর ফলে কমিশনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, দুদক যদি সত্যিকারভাবে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে আন্তরিক হয় তাহলে দৃশ্যমান কিছু করে দেখাতে হবে। সেটা না হলে স্বপ্ন হোচট খেয়ে যেতে পারে। আমরা দুদকের কাছে প্রত্যাশা করি, আগামী বছর অন্তত শীর্ষ দশজন দুর্নীতিবাজ শাস্তি পায়। অথবা শাস্তি না পেলেও অন্তত যেনো কোনঠাসা হয়ে যায়। বর্তমানে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে যেখানে পারছে লুণ্ঠন করছে। আর এ লুণ্ঠনের আরেক নাম হচ্ছে দুর্নীতি। এখন বলা যায় দুর্নীতির অবস্থা আমাদের দেশে খুবই আশঙ্কাজনক। দুর্নীতি যত চলবে সমাজ ততই দরিদ্র হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, প্রতিটি জায়গায়, প্রতিটি অফিসে প্রতিটি স্থানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক পর্য্যন্ত লুণ্ঠন করছে।আমরা এখন সারাটা জাতিকে দস্যুতে পরিণত করে ফেলেছি। যে যেখানে পারছে সেভাবেই লুণ্ঠন করছে। আর এ লুণ্ঠনের আরেক নাম হচ্ছে দুর্নীতি।
দুদকের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, সত্যিকারের শক্তির প্রয়োগ না হলে দুর্নীতি প্রতিরোধের স্বপ্ন ব্যর্থ হবে। দুদককেরও প্রমাণ বিষয় আছে। এ প্রতিষ্ঠানকেও একটি ভূমিকা পালন করতে হবে।প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, দুদক যে দুর্নীতি দমনের কথা বলছে, তারা কী দুর্নীতিমুক্ত? দুর্নীতি দমন বা প্রতিরোধের আগে তাদেরই দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে।অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন,যেখানে উন্নয়ন হওয়ার কথা সেখানে উন্নয়নের বদলে চলছে দুর্নীতি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। সম্প্রতি দেখা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ এনে একটি দাতা সংস্থা বরাদ্দ ফেরত নিয়ে গেছে। এটা জাতির মঙ্গলজনক দৃষ্টান্ত নয়। এটা বলার উপায় নেই যে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ও স্তরে দুর্নীতি চলছে। দুদক চেষ্টা করছে দমন ও প্রতিরোধে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, জাতিসংঘের দুর্নীতি বিরোধী সনদে আমরা স্বাক্ষর করেছি তখন থেকেই আন্তর্জাতিকভাবে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।দুদক দুর্নীতি দমনের পাশাপাশি প্রতিরোধেও কাজ করছে।অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, দুদক সচিব ড. মো: মাকসুদুল হাসান খান, দুদকের মহাপরিচালকবৃন্দসহ সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।অনুষ্ঠানে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমে মূল্যায়ন করে নির্বাচিত ২৮টি শ্রেষ্ঠ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিকে একটি করে ক্রেস্ট, নগদ অর্থ এবং সনদপত্র দিয়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। সবশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।