দৈনিকবার্তা-চরফ্যাশন, ৩০ মার্চ: ভোলার চরফ্যাশনের গ্রামগুলোতে তরমুজ তোলার উৎসব চলছে। ঢাকা, বরিশাল এবং চট্রগ্রামের পাইকার, পরিবহন কোম্পানী, মধ্যস্বত্ত্বভোগী ফড়িয়া, দালাল থেকে শুরু করে গ্রামের নারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী এবং কৃষক-কৃষাণী এই উৎসবে মাতোয়ারা। অনুকূল আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন এবং প্রত্যাশিত বাজার দর থাকায় তরমুজকে ভিত্তি করে গ্রামগুলোর অর্থনীতি বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ব্যাপক তরমুজ অধ্যুষিত চরফ্যাশনের মুজিব নগর, নজরুল নগর, চরকলমী,,আবু বকরপুর, ওসমানগঞ্জ, নুরাবাদ এবং নীল কমল ইউনিয়নের গ্রামগুলো ঘুরে তরমুজ নিয়ে কৃষক পরিবারের উৎসবমূখর ব্যস্ততা চোখে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, এ বছর চরফ্যাশনে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল১১.৮০০ হেক্টর। কিন্ত ব্যাপক লাভ আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এখানে আবাদ হয়েছে ১৫.২৭৫হেক্টর। পুরো মৌসুম আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হয়েছে বাম্পার ফলন। এখন কৃষক পরিবারে চলছে তরমুজ তোলা আর বিক্রির মাধ্যমে নগদ টাকা বুঝে নেয়ার আয়োজন। বরিশাল, ঢাকা এবং চট্রগ্রাম থেকে আসা ফড়িয়া, দালাল এবং পরিবহন কোম্পানীর লোকজন ভীর করেছে গ্রামগুলোতে। বিক্রির জন্য ক্ষেতের ধারে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। নদী বা খালের পাড়ে লোড হচ্ছে কার্গো এবং ট্রলারগুলো।
আবুবকরপুর গ্রামের তরমুজ চাষী শাহ আলম জানান, আকার ভেদে একটি কার্গো ট্রলার ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার তরমুজ বহন করতে পারে। ট্রলারগুলো বরিশালের জন্য তরমুজ প্রতি ৪ টাকা, ঢাকার জন্য তরমুজ প্রতি ১৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। ট্রাকগুলো ঠিকা হিসেবে পরিবহন করছে। ৩ থেকে সারে ৩ হাজার তরমুজ নিয়ে একটি ট্রাক ৬০ হাজার টাকায় ঢাকা এবং ৬৫ হাজার টাকায় চট্রগ্রাম যাচ্ছে। ভাড়ার এই পরিমান গত মৌসুমের দ্বিগুণ বলে জানায় কৃষকরা। বাম্পার ফলন এবং একই সাথে তরমুজ কাটার ধুমপরায় পরিবহন মালিকরা সুযোগ নিচ্ছে। বাড়িয়ে দিচ্ছে ভাড়ার পরিমান।হরতালের কারণে মোকাম দর অস্থির। প্রতিনিয়ত দর পতন হচ্ছে। পাশাপাশি হরতালের কারণে তরমুজ পাঠানো যাচ্ছে না। কখনো পথের মাঝে ট্রাকগুলো দাড়িয়ে যায়। ফলে তরমুজ নষ্ট হয়ে বাজার দর হারায়। চাষীরা জানান, হরতাল অবরোধের মতো অস্থিরতার কারণে ভালো দাম পাওয়ার সুযোগ থাকলেও এখন আর তারা ঢাকা, বরিশাল বা চট্রগ্রামের বাজারে সরাসরি তরমুজ পাঠানোর ঝুকি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছেন। এসব এলাকার দালাল, ফড়িয়া এবং মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা কৃষকের ক্ষেতে রেখ ঠিকায় তরমুজ কিনে নিয়ে কৃষকদের ঝুঁকি এড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন।
মুজিব নগর গ্রামের চাষী নুর ইসলাম জানান, তার ৩ কানি (১৫০ শতাংশ = ১ কানি) জমির তরমুজ ঠিকায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। ঢাকা বা চট্রগ্রামের মতো বাজারে সরাসরি এই তরমুজ বিক্রি করলে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করা যেতো। এতে চাষাকে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পরিবহন খরচ গুনতে হলেও লাভটা বেশী হতো। নজরুল নগরের চাষী মমিন জানান, ১৫০ একর জমিতে ৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ইতি মধ্যে ১৬ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছেন। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে আরো ১০ লাখ টাকার বিক্রিী কবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাড়তি লাভের ঝুঁকি নিয়ে পুরো চালানটা হারাতে চান,না চাষীরা।তরমুজ চাষে এই সাফল্য প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতাষ সিকদার বলেছেন, তরমুজ চাষীদের কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক চাষীদের পরামর্শ প্রদানসহ ক্ষেত পরিদর্শন করছে। কয়েক বছর ধরে বাম্পার ফলন, অনুকূল আবহাওয়া এবং ব্যাপক লাভের কারণে আগামী দিনগুলোতে এখানে তরমুজ চাষে আরো বিস্তৃতি ঘটবে বলে কৃষি বিভাগ আশা করছে।