দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ মার্চ: মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি আইন-২০১৫ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উন্নয়ন সারচার্জ ও লেভি (আরোপ ও আদায়) আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার এই অনুমোদন দেওয়া হয়।বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারারফ হোসাইন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি সিম ও রিম কার্ড ব্যহারের ক্ষেত্রে এক শতাংশ অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে ব্যবহারকারীদের। এর ফলে বছরে প্রায় ১৪০ কোটি টাকা আয় হবে। যা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত উন্নয়নে ব্যয় করবে সরকার।এছাড়াও বাংলাদেশ মেডিকেল ডেন্টাল কাউন্সিল আইন-২০১৫ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদনও মন্ত্রিসভা থেকে দেয়া হয়।
মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মোবাইল কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের কাছ থেকে যে বিল নিচ্ছে তার সঙ্গে এই ১ শতাংশ সারচার্জ যোগ হবে।সরকার মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে এই সারচার্জ আদায় করবে। মোবাইল ফোনে যতো ধরনের সেবা রয়েছে তার সবগুলোর ওপরই এই সারচার্জ প্রযোজ্য হবে।জাতীয় সংসদে আইন পাস হলে এই সারচার্জ কার্যকর হবে বলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তিনি বলেন, এ আইনের আওতায় মোবাইল অপারেটর কর্তৃক সিম বা রিম কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে প্রদত্ত সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।এ বাবদে বছরে অতিরিক্ত ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এই অর্থ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।সুনির্দিষ্ট কোনো খাতে জনগণের কাছ থেকে অর্থ তুলতে সারচার্জ আরোপ করে সরকার। এক সময় যমুনা সেতু (বঙ্গবন্ধু সেতু) তৈরিতে সরকার সারচার্জ আরোপ করেছিল। তখন বাস- ট্রেনের টিকিট, সিনেমার টিকিট কাটার সময় অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হতো, যা যমুনা সেতুর তহবিলে যেত।
চলতি বছর প্রস্তাবিত বাজেটে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের কোনো প্রস্তাব না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুল্ক আরোপের কয়েকটি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা এবং মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের এই প্রস্তাব করেন।সংসদে দেয়া বক্তৃতায় তিনি বলেন, মোবাইল ফোনের আমদানির ওপর শুল্ক কিছুটা হ্রাস করতে পারেন। মোবাইল ফোনের ব্যবহারের ওপর সারচার্জ বসাতে পারেন। এ থেকে যে রাজস্ব আসবে সেটা শিক্ষা ও স্বা¯’ খাতের উন্নয়নে ব্যবহার করতে পারি।প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব গ্রহণ করে অর্থমন্ত্রী মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দেন এবং অর্থবিলে তা পাস হয়।সরকারের ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট বিভাগ ১ শতাংশ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব রেখে একটি সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।এর আগে গতবছর বিষয়টি প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় উঠলে মোশাররাফ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এনবিআর হিসাব করে দেখিয়েছে, দেশের মোবাইল ব্যবহারকারীরা প্রতি মাসে গড়ে ২০০ টাকা ব্যবহার করেন। এর ১ শতাংশ হিসাবে জনপ্রতি সারচার্জ দাঁড়ায় গড়ে ২ টাকা।
প্রত্যেক সিম ব্যবহারকারী প্রতি মাসে গড়ে ২ টাকা করে পরিশোধ করবেন। এতে সরকারের খাতায় জমা হবে বছরে ১৪০ কোটি টাকা।নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির গত জানুয়ারি মাসের হিসাবে দেশে মোবাইল ফোন সংযোগের সংখ্যা ১২ কোটি ১১ লাখের বেশি হলেও সব সিম একসঙ্গে কার্যকর থাকে না। এদিকে, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১৫ মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হলেও তা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেনিতবে মন্ত্রিপরিষদের এই নিয়মিত সভায় বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষে তথ্য বিনিময় চুক্তি পুনঃসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এই আইনে মূলত বাংলাদেশ ও আরব আরিাতের সঙ্গে নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। ফলে দুদেশের মধ্যে সন্ত্রাস, মানবপাচার, মাদকদ্রব্য বন্ধে এই আইন গুরুত্ব পাবে বলে জানানো হয়।
মন্ত্রিপরিষদের এ সভায় বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিনিময় চুক্তি’ অনুসমর্থনের প্রস্তাবের মাধ্যমে অনুমোদন করা হয়। আসামি বিনিময় আইনে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক আরব আমিরাতে অন্যায় করলে সে অবশ্যই সেই দেশের আইনে দন্ডপ্রাপ্ত হবে। তবে সেখানে কিছুকাল সাজা ভোগের পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনলে সাজার বাকি অংশ এখানে এসেও ভোগ করতে হবে বলে জানানো হয়। পাশাপাশি আরব আমিরাতের কোনো নাগরিক এদেশের আইনে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তাদের ক্ষেত্রে একই আইন অনুসরণ করা হবে।উল্লেখ্য, বিভিন্ন অপরাধের ভিত্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি দণ্ডপ্রাপ্ত আছেন।