bnp

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ মার্চ: জমে উঠেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে দলীয় ব্যানারে প্রার্থী দেয়ার বিধান না থাকলেও বাস্তবে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চলছে ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরাও দলীয় পরিচয়ে মাঠে নেমেছেন।তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ৩ হাজার ৪৯ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে রয়েছেন ৭৬ ও কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৯৭৩ জন। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ঢাকা উত্তরে ২৮, দক্ষিণে ৩০ এবং চট্টগ্রামে ১৮ জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত মেয়র পদে ১০ এবং কাউন্সিলর পদে ২২৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদিকে রোববার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম, আসাদুজ্জামান রিপন ও নাসির উদ্দিন পিন্টুর মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে, যদিও দল কাকে সমর্থন দেবে তার চূড়ান্ত ঘোষণা এখনো আসেনি।

রোববার দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার আইনজীবী ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম।এছাড়া বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ও মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব সালামের পক্ষে তার স্ত্রী ফাতেমা সালাম এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টুর পক্ষে তার স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়নপত্র জমা দেন।আর বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন নিজেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন।নির্বাচনের সুযোগ পেলে জয়ের আশা প্রকাশ করে তারা সবাই বলেছেন, দল সমর্থন না দিলে তা তারা মেনে নেবেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকা উত্তরে ব্যবসায়ী আনিসুল হক ও দক্ষিণে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকনকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করলেও বিএনপি তেমন কোনো ঘোষণা দেয়নি। গত শুক্রবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার পর বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক হলেও ঢাকায় এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি।মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে তার আইনজীবী বলেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গুমের পরিস্থিতি চলছে, নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। আমরা নির্বাচন করতে চাই। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এর অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে।৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও উপজেলার নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অংশগ্রহণের কথা মনে করিয়ে দিলে যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সালাম বলেন, সেটা ছিল চর দখলের নির্বাচন। সে ধরনের নির্বাচন হলেও তো অংশ নেওয়া সম্ভব না। শেষ পর্যন্ত দল সমর্থন না দিলে মির্জা আব্বাসও নির্বাচন করবেন না বলে জানান তিনি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা আব্বাসের আরেক আইনজীবী একেএম শাজাহান বলেন, মির্জা আব্বাস পলাতক নয়। তার বিরুদ্ধে অনেক রাজনৈতিক মামলা আছে, কিন্তু এ অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা নাই।দুই আইনজীবীর সঙ্গে আব্বাসের চাচাতো ভাই মির্জা আব্দুস সালাম আরিফসহ বেশ কয়েকজন কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপনও বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। ভোটের বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসাবে মেনে নেবেন বলে জানান তিনি।স্বামীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর ফাতেমা সালাম সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। সে উদ্দেশে আমি আমার স্বামী আবদুস সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছি।

মেয়র পদে সমর্থন নিয়ে বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না দিলেও দল থেকে প্রস্তুতি নিতে বলায় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন বলে জানান ফাতেমা। তিনি বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখন নেই। তবে আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন শিগগিরই এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হয, লেভেল প্লেইং ফিল্ডে সব দল-মতের লোক নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং দলের সমর্থন পেলে সালাম জয়ী হবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তার স্ত্রী।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ন্ত। সমর্থন না পেলে আমরা তা মেনে নেব এবং সে অনুযায়ী কাজ করব। একই কথা বলেছেন নাসির উদ্দিন পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা, যিনি ঢাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ছাত্রদল নেতা ছাইদুর রহমান নিউটনের বোন।

কল্পনা বলেন, নাসির উদ্দিন পিন্টু একজন ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা। জনগণই তাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছে। সরকার মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রেখেছে।পিন্টু দলের সমর্থন পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কর্মীরা তার পক্ষে আছে, আমরা আশা করি দল তাকে সমর্থন দেবে। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা আমরা মেনে নেব।আরেক প্রশ্নে কল্পনা বলেন, আমি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলাম। এ কারণে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কথা হয়নি। আজ মনোনয়নপত্র দিয়ে গেলাম। এখন ম্যাডামের সঙ্গে কথা বলব। শেষ পর্যন্ত পিন্টু নির্বাচন করতে পারলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার আবেদন করা হবে বলেও জানান তার স্ত্রী।সাবেক সাংসদ পিন্টুকে গতবছর পিলখানা হত্যা মামলার রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। তিনি ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করেছেন। এ মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী শামীম সর্দার বলেন, বিচারিক আদালত ১৫২ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়ায় হাই কোর্টে মামলাটি গেছে ডেথ রেফরেন্স আকারে। হাই কোর্ট আসামিপক্ষের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করায় ওই সাজার আদেশ আপনা-আপনি স্থগিত হয়ে গেছে।

রোববার বেলা ১২টার দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তারা কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সাঈদ খোকন । এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ আজিজ, সাংসদ ফজলে নূর তাপস, দলের নেতা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক তার সঙ্গে ছিলেন।মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর খোকন বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।নির্বাচনে কাকে প্রতিপক্ষ মনে করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিএনপি নির্বাচনে আসবে। তাহলে বিএনপির প্রার্থীই আমার প্রতিপক্ষ।ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো কাউকে সমর্থনের ঘোষণা আসেনি। তবে দলের অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসসহ কয়েকজন মনোনয়নপত্র তুলেছেন।

বিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য বাইরে গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যেতে হবে, সেখানে যেতে পারবেন সর্বোচ্চ পাঁচজন।তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার সামনের চেয়ারগুলোতে সাঈদ খোকনের সঙ্গে দলের চার নেতা বসলেও তার সঙ্গে ওই কার্যালয়ে ঢোকেন ৫০ জনের বেশি নেতাকর্মী।এর ব্যাখ্যায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খোকন বলেন, আমার পায়ে সমস্যা থাকায় গাড়িটা ভিতরে ঢুকিয়েছি। নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তার কাছে আমরা পাঁচজনই গিয়েছি। অন্যান্য যাদের দেখেছেন ওরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী।

অবশ্য সাঈদ খোকন যখন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান সে সময় সেখানে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন নিখিল ভদ্র নামের এক সম্ভাব্য প্রার্থী। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য খোকনের পাশাপাশি মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ সেলিমও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।তবে গত বুধবার গণভবনে এক বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা নির্বাচনে সাঈদ খোকনকে জিতিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা না দিয়ে ওই রাতেই চিকিৎসার কথা বলে ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন হাজি সেলিম।এরপর গত শুক্রবার গণভবনে এক অনুষ্ঠানে সিটি নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে সাঈদ খোকনের সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পরিচয় করিয়ে দেন শেখ হাসিনা।ওই অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসাবে ব্যবসায়ী অনিসুল হককে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে ভোট হবে।

গত ১৮ মার্চ তফসিল ঘোষণার পর এই কয়েক দিন ধরে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগ্রহীরা। রোববারই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়।এদিকে, বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ে ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরের ছেলে ববি হাজ্জাজ।দলীয় প্রার্থী ঠিক হওয়ার পরেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ায় সম্প্রতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার পদ হারিয়েছেন তিনি।ববি হাজ্জাজের ঘণ্টাখানেক পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ঢাকা উত্তরে জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ব্যবসায়ী আনিসুল হক।মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন রোববার বেলা সোয়া ৩টার দিকে আগারগাঁওয়ে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়পত্র জমা দেন তিনি।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আনিসুলের সঙ্গে এ সময় সংগঠনের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ,বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান ও আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।অন্যদিকে, আসন্ন ঢাকা উত্তরের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি ও বিকল্পধারার মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী। রোববারবিকেলে আগারগাঁওয়ের জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন।এ সময় জোনায়েদ সাকি সাংবাদিকদের বলেন, আশা করি নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করবে।এখন পর্যন্ত যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। কারণ নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি।

মাহী বি চৌধুরী নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাবি করে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি অন্যরা দলীয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজকের পর থেকে নির্বাচনের আসল কার্যক্রম শুরু হবে। তখনই বোঝা যাবে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে কি-না।মাহী বি চৌধুরী বলেন, আমি কোনো দলের পক্ষ থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছিনা। ঢাকার তরুণদের পক্ষ থেকেই আমি এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবার সমর্থন প্রত্যাশা করি। তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। রোববার বিকেল পর্যন্ত ১৯জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন মোট ৩০ জন। এদিনই ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন।

এছাড়া ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি উত্তর) নির্বাচনে মেয়র পদে কারাবন্দি নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হলে জমা দেওয়া হয়নি।রোববার বিকাল ৫টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় থাকলেও মান্নার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে মান্নার পক্ষে রাজধানীর আগারগাঁও ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আতিকুল ইসলাম।তবে নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত সময়ে মধ্যে মনোনয়নপত্র মান্নার পক্ষ থেকে কেউ জমা দেননি।ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তরে মেয়র পদে ৩০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও জমা দেওয়ার শেষ দিনে ২১ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।

সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। চট্টগ্রামে তারা বিদায়ী মেয়র এম মনজুর আলমকে প্রার্থী করেছে। তবে এই সিটিতে আরেক বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। ঢাকা উত্তরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টু। দক্ষিণের সম্ভাব্য প্রার্থী মির্জা আব্বাস। এদের বাইরেও ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু, আসাদুজ্জামান রিপন, আবদুস সালাম ও অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া মেয়র পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থীদের আজ মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কথা রয়েছে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে সব মিলিয়ে ২৮, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৩ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৬১ জনসহ মোট ১ হাজার ১২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৩০, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ১২৮ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২০৮ জনসহ ১ হাজার ৩৬৬ জন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৮, কাউন্সিলর পদে ৫৫৯ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯৪ জনসহ মোট ৬৭১ জন রয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটিতে মেয়র পদে ৩ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭ জনসহ মোট ৮৪ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩ জনসহ মোট ৯৪ জন এবং চট্টগ্রাম সিটিতে মেয়র পদে ৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৪৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪ জনসহ মোট ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন :ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে শনিবার গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী ও আমিরুল ইসলাম মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। একই দিনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭৩ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এ নিয়ে মেয়র পদে ২৮ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৬১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। শনিবার সিপিবি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল কাফি রতন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র পদে এ সিটি নির্বাচনে তিনজন মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে আগাম প্রচারণা চালানোর দায়ে এ পর্যন্ত ২৪ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শনিবার মেয়র পদে কেউই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। এ সিটিতে ইতিপূর্বে ৩০ জন মেয়র পদে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৯ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। এ নিয়ে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মোট ১ হাজার ১২৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২০৮ জন মনোনয়নপত্র নিলেন। এ সিটিতে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘন করে আগাম প্রচারণা চালানোর দায়ে এ পর্যন্ত ৮১ জন সম্ভাব্য প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন :শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১৮ জন মেয়র প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ৪১ ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৫৫৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত এম মনজুর আলম, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিএনপি সমর্থিত বিদ্রোহী প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি (বিএনএফ) সমর্থিত অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট সমর্থিত এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ সমর্থিত এইচএম মুজিবুল হক শুক্কুর, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সমর্থিত আলহাজ ওয়ায়েস হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়া সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, ফোরকান চৌধুরী, আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ ইলিয়াছ, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবিসহ আরও ১১ প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ : গণভবনে দলের বৈঠক করে নির্দলীয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনে দলের প্রার্থী পরিচয় করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আচরণবিধি লংঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী সিপিবি নেতা আবদুল্লাহ আল কাফি রতন।শনিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ অভিযোগ করেন তিনি। কাফি আরও অভিযোগ করেন, টাকা ও পেশি শক্তি, সরকারি প্রভিশন ব্যবহার করে প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিলবোর্ড, পোস্টার দিয়ে বড় রাজনৈতিক দলগুলো আচরণবিধি লংঘন করছে। শনিবারও প্রধানমন্ত্রী দু’জন প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

এটা নির্বাচনী আচরণবিধি পরিপন্থী।এ অভিযোগের জবাবে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো এ রকম (আচরণবিধি ভঙ্গ) কিছু করেন না। যদি করে থাকেন তবে বিষয়টি দেখতে হবে। দেখে কমিশন ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এ নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয়ভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। দলীয়ভাবে প্রচারণার সুযোগ নেই। এটা নির্দলীয় নির্বাচন।আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির সক্রিয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কোথাও কোথাও ব্যত্যয় ঘটবে। কিন্তু এরপরও ইসি বসে রয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়। আমরা বসে নেই। যারা আচরণবিধি ভাঙছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এখন আর মুখের কথা নয়, প্রকৃতভাবে কাজে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ইসি নির্দেশনা দিয়েছে বলেও জানান তিনি।