Bangladesh-agriresearch-council-=g-m-muzibur=====3

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মার্চ: রাষ্ট্রযন্ত্র যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে হাজার কর্মসূচি করেও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।শনিবার দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আয়োজনে সততা সংঘের সমাবেশ ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র তো নিজে নিজে চলে না, তার যেসব নিয়ম-কানুন ও শাসন কাঠামো আছে, সেসবের মধ্য দিয়ে চলে। সেখানে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করা হয় তখন হাজারো সেমিনার ও কর্মসূচি করলে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় বটে কিন্তু রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতি নির্মূল করা যায় না।বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে হিতোপদেশ দেয়ার আগে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোকেই সেটা পালন করতে হবে। তারা সহযোগিতার নামে যেসব শর্ত আরোপ করেন সেগুলো দুর্নীতিমুক্ত নয়; দুর্নীতিযুক্ত- এটা অত্যন্ত জোরালো কণ্ঠে বলা যায়।

তিনি উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা কিছু হলে বলেন- ওমুক দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত। সাহায্যের নামে আপনারা যে শর্তগুলো দেন সেগুলো কি খুব সুনীতিগ্রস্ত? আপনারা যখন আমাদের মন্ত্রণায়লগুলোতে আসেন তখন বলেন- ওমুকরে কাজ দেন তমুকরে কানসালট্যান্ট করেন। এগুলো কি সুনীতির মধ্যে পড়ে?সহযোগীদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, উন্নয়ন সংস্থারা যখন সুনীতির কথা বলবে, তখন তাদের নিজেদেরও সেটা প্র্যাকটিস করতে হবে।ড. ইউনূসকে ইঙ্গিত করে নাম উচ্চারণ না করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আপনারা জানেন ট্যাক্স ফাঁকির জন্য এনবিআর একজনকে ডেকেছেন। তিনি অনেক প্রথিতযশা। তার অনেক ডক্টরেট ডিগ্রি আছে।অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় দেখেছি অনেকে লম্বা লম্বা বক্তৃতা দিয়েছেন। তারাই পরে জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। তাদের একজন তিনি।

উন্নয়ন সহযোগী এবং ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের উদ্দেশে তিনি বলেন, মুখে এক রকম আর কাজ-কর্মে অন্যরকম, এ ধরনের স্ববিরোধিতা যতোদ্রুত আমরা দূর করতে পারবো ততোদ্রুতই আমাদের মঙ্গল।কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা একসময় দুর্নীতিতে এক নম্বরে ছিলাম। এখন সে অবস্থায় নেই।দুর্নীতির জন্য দারিদ্র্যকে প্রধানত দায়ী করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তাই দুর্নীতি নির্মূলে দারিদ্র্য দূর করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে তিনি রাষ্ট্রের ভূমিকাও বড় করে দেখছেন।দুর্নীতির সঙ্গে দারিদ্র্যের সম্পর্কের ব্যাখ্যা দিতে মতিয়া বলেন, কয়লার দোকানের পাশে সাদা কাপড় পড়ে থাকলে কাপড় ময়লা হবেই।রাষ্ট্র যদি দায়িত্ব না নেয় বা রাষ্ট্রের পরিবেশ যদি অসুস্থ থাকে, তাহলে দুর্নীতিমুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। দুর্নীতি প্রতিরোধে জনগণের ন্যূনতম দারিদ্র্য মেটানোর দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।বিদেশি দাতাদের শর্ত মোটেও সুনীতির নয়। দাতাদের নিজেদের আগে দুর্নীতি বিরোধী আচরণ চর্চা করতে হবে। এরপরই তারা আমাদের হিতোপদেশ দিতে আসতে পারেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আগে আমরা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন জাতি ছিলাম, কিন্তু এখন পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এতে আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের আরও অনেক দূর যেতে হবে।প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, এদেশে হাউজি, জুয়া ও দুর্নীতি জিয়ার হাত ধরেই আসে। তিনি একদিকে বিসমিল্লাহ দিয়ে সংবিধান চালু করেছেন অপরদিকে তিনি ৩৬০টি মদের লাইসেন্স দিয়েছেন। অথচ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরেই বাংলাদেশ থেকে মদের দোকান নিষিদ্ধ করে দেন।মতিয়া চৌধুরী বলেন, আগে রেসকোর্স (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দান ছিল ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার নামে জুয়ার আখাড়া। একাত্তরের ১০ মার্চ বঙ্গবন্ধু বললেন, আজ থেকে রেসকোর্স ময়দানে সকল প্রকারের জুয়া নিষিদ্ধ করা হলো। বঙ্গবন্ধুই মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেছেন আর জিয়া এগুলোর অনুমোদন দিয়েছেন।

তিনি বলেন,রাষ্ট্র যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে দুর্নীতি প্রসার লাভ করে। ৭৫ এর পর দেখা গেছে কীভাবে দুর্নীতি বেড়েছে। রাষ্ট্রতো আর নিজে চলে না শাসন কাঠামোর মধ্যে চলে।তিনি আরো বলেন, মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এগুলোর নিশ্চয়তা থাকলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে।সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরির জন্যই আমরা দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহ পালন করি। প্রতিবছরের মতো এবছরও ২৬ মার্চ থেকে এটা শুরু হয়েছে। চলবে ১ এপ্রিল পর্যন্ত। সপ্তাহব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে তারই অংশ হিসেবে আজকের এ সততার সমাবেশে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান।’

তিনি সততা সংঘ সম্পর্কে বলেন, আমরা দুর্নীতির সচেতনতা যেনো গোড়া থেকে উপলব্ধি করতে পারি এজন্য স্কুল পর্যায়ে কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এ সততা সংঘ গড়ে তোলা হয়েছে। তারাই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাদের যদি আমরা ছোটবেলা থেকে দুর্নীতির ভয়াবহ রূপ সম্পর্কে সচেতন করতে পারি তাহলে দুর্নীতি অনেকাংশে কমবে।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ২১ হাজার স্কুল-কলেজে সততা সংঘের শাখা আছে। আমাদের এ কার্যক্রমের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খুব সুনাম হয়েছে।তিনি বলেন, সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্নীতি হলো ইন্টেলেকচুয়াল দুর্নীতি। যারা ইতিহাসকে বিকৃত করে প্রতিষ্ঠিত সত্যকে বিকৃত করে তাদের মতো বড় দুর্নীতিবাজ আর কেউ নেই।অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) ড. শাসছুল আরেফিন প্রমুখ।অনুষ্ঠানের শুরুতে সততা সংঘের সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান দুদক চেয়ারম্যান। অনুষ্ঠান শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়