দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৮ মার্চ: প্রায় তিন মাসের কাছাকাছি সময় ধরে চলা হরতাল-অবরোধে ব্যাংকিংখাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এছাড়া, ব্যাংকগুলোর আমানতে সুদের হার কমানো ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে বেশি মাত্রায় ঝুঁকে পড়াকেও কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় পুরো ব্যাংকিংখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। চলতি বছরের ১৯শে ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত ব্যাংকখাতে ৭ লাখ ৮ হাজার ২৫২ কোটি আমানত থেকে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৯৯১ ওেকাটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো গড়ে তাদের আমানতের ৭০ দশমিক ৭৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
তবে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে পড়েছে বেশকিছু ব্যাংক। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ঋণ বিতরণ কমেছে ৯টি ব্যাংকের। এর মধ্যে ৪টি বিদেশী, ৪টি বেসরকারি এবং ১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত ও ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ব্যাংকের ঋণ ও আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অনেক ব্যাংক এখন আমানতে সুদের হার কমিয়েছে। পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি থাকায় মানুষ এখন সঞ্চয়পত্রের দিকেই বেশি ঝুঁকছে।
এ কারণে ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমতে পারে বলে মনে করছেন তারা। আর বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসায়ের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিচ্ছেন না; ফলে ঋণ বিতরণ কমছে বলে জানান তারা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর। এর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে উরি ব্যাংক। ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। এরপর ঋণ বিতরণ কমেছে এইচএসবিসি ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটে। এ ইউনিটে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ কমেছে ২০ শতাংশের বেশি।
আর স্টান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার কমেছে ৮ শতাংশেরও বেশি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে স্টান্ডার্ড ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটে। এ ইউনিটে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ। ঋণ বিতরণ কমার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থানে আছে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড।
ব্যাংকটির ইসলামী ও সাধারণ দুই শাখাতেই ঋণ বিতরণ কমেছে। এর মধ্যে সাধারণ শাখায় কমেছে ৫ শতাংশের বেশি আর ইসলামী শাখায় কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। পূবালী ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটেও ঋণ বিতরণ কমেছে। ব্যাংকটির এ ইউনিটে ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। আর গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এনসিসি ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। এছাড়া, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ঋণ বিতরণ কমেছে এক শতাংশের কিছু বেশি। আলোচ্য সময়ে আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে ৭টি ব্যাংকের। এর মধ্যে ৫টিই বিদেশী ব্যাংক। সবচেয়ে বেশি আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে এইচএসবিসি ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটে।
এ ইউনিটে আমানত সংগ্রহ কমেছে ২৪ শতাংশের বেশি। স্টান্ডার্ড ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ কমেছে ১৪ শতাংশ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের আমানত সংগ্রহ কমেছে ১০ শতাংশ, উরি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ কমেছে ৫ শতাংশ এবং আল-ফালাহ ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটে আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংকের ইসলামী ইউনিটে আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমেছে যথাক্রমে ৩৪ ও ৬ শতাংশের কিছু বেশি।