1414041936364+6485

দৈনিকবার্তা-মেহেরপুর, ২৭ মার্চ: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হওয়ার পথে অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বেশ কয়েকটি আধুনিক যন্ত্রপাতি। হাসপাতালটিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর, আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিন ও অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ (চোখ) থাকলেও তা পরিচালনার জন্য দীর্ঘদিন থেকে কোনো জনবল নেই। ফলে রোগিরা বেশি অর্থ দিয়ে বাইরে থেকে এসব সেবা নিচ্ছেন। আর হাসপাতাল প্রতি বছর বঞ্চিত হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা আয় থেকে।শুধু তাই নয়, হাসপাতালটিতে জেনারেটরের জন্য তেল কেনার টাকা বরাদ্দ না থাকায় এটি ফেলে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, অকেজো যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় যন্ত্রগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিতে পারছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০০১ সালে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে দেশের যে চারটি জেনারেল হাসপাতালে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়, তার একটি হচ্ছে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি এখানে দেয়া হয় একটি ৬০ কেভিএ অত্যাধুনিক জেনারেটর। কিন্তু অপারেটর ও জ্বালানি বরাদ্দ না থাকায় তা চালু করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে বর্তমানে এটি বিকল হয়ে পড়ে আছে।

একই প্রকল্প থেকে ২০০২ সালের ১৮ জুন চোখ পরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্র স্টি­টল্যাম্প দেয়া হয়। আর ২০০৬ সালের ২৪ জুন কেন্দ্রীয় ওষুধ ভান্ডার (সিএমএসডি) থেকে দেয়া হয় চোখের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারের জন্য অত্যাধুনিক অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ (চোখ)। এর সেবা দেয়ার জন্য কনসালট্যান্ট (চোখ) পদ থাকলেও দীর্ঘ নয় বছর ধরে পদায়ন হয়নি। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে একজন কনসালট্যান্ট ( চোখ) যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে অপারেটিং মাইক্রোস্কোপ বিকল রয়েছে। এতে চোখের অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। এ সেবা নিতে মেহেরপুরের মানুষের রাজশাহী কিংবা ঢাকা শহরে যেতে হচ্ছে রোগিদের।এদিকে রোগিদের স্বল্পমূল্যে আলট্রাসনোগ্রাফি পরীক্ষার লক্ষ্যে এডিবি স্বাস্থ্য প্রকল্প থেকে ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুটি আলট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্র পায় মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল। এটি চালু ছিল বেশ কয়েক বছর। কিন্তু ব্যবহার না হওয়ায় ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি দুটিই বিকল ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে আরও জানা গেছে, এক্সরে ও প্যাথলজিসহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে যন্ত্রপাতিগুলো চালু আছে, তাতে প্রতি বছর প্রায় অর্ধকোটি টাকা আয় হয়। বিকল হওয়া যন্ত্রপাতিগুলো চালু হলে এ আয় দ্বিগুণ হতে পারে। অন্যদিকে স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চোখের গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচারসহ সব চিকিৎসাসেবা মেহেরপুরেই পাবেন রোগিরা।এ বিষয়ে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালের পরীক্ষা সেবা থেকে যা আয় হয়, তা রাজস্ব হিসেবে জমা দেয়া হয়। এ থেকে খরচ করে যন্ত্রপাতি মেরামতের বিধান নেই। কিন্তু জেনারেটর চালানোর জ্বালানি তেল (ডিজেল) বরাদ্দের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়নি স্বাস্থ্য অধিদফতর। তাছাড়া জনবলের অভাবে অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে আছে। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে প্রেরণ করা প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রো মেডিকেল ইন্সট্রুমেন্ট (নিমিইউ) কার্যালয়ে যন্ত্রপাতিগুলো মেরামতের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে।