দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৭ মার্চ: ঢাকা দক্ষিণের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র নেওয়া হয়।মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র নেওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম । মির্জা আব্বাস নব্বইয়ের দশকে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন। মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলাও রয়েছে।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন নেতারা।নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২৯ মার্চের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ১ ও ২ এপ্রিল যাচাই বাছাই শেষে মনোনয়ন প্রত্যাহার করা যাবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। শুক্রবার আব্বাসের আইনজীবী অ্যাডভোকেট একে এম শাহজাহান, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন শুক্রবার মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।আজাদ পরে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মির্জা আব্বাসের পক্ষে আমরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি।আগাম জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা মনোনয়ন নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো দেয়নি। তবে ঢাকা দক্ষিণ থেকে ভোটে লড়তে এরইমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন দলের চারজন।
গত ২৫ মার্চ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়।মনোনয়নপত্র নেওয়া হয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও বিএনপি সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের প্রধান সেলিম ভুঁইয়ার পক্ষেও।পিন্টু পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে এবং সেলিম ভুঁইয়া নাশকতার মামলায় কারাগারে আছেন। নাশকতার মামলা আছে সালাম ও আব্বাসের নামেও। গত কিছুদিনে এই দুজনের কাউকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। দক্ষিণের মনোনয়ন নিয়ে একাধিক দাবিদার ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন ও যুগ্ম আহ্বায়ক হাজি মোহাম্মদ সেলিম দুজনেই মনোনয়নপত্র নেওয়ার পর জ্যেষ্ঠ নেতাদের কথাতেও সমর্থন নিয়ে দ্বিধা ছিল স্পষ্ট।তবে বুধবার গণভবনে এক বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সাঈদ খোকনকে জিতিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। মনোনয়ন জমা না দিয়ে ওই রাতেই চিকিৎসার কথা বলে ভারতের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন হাজি সেলিম, যার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত মনোনয়ন জটিলতার অবসান হয়।
অন্যদিকে ঢাকার এই অংশে মেয়র প্রার্থী হিসাবে আবদুস সালামকেই বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে সমর্থন দেওয়ার কথা এর আগে শোনা গেলেও মির্জা আব্বাসের নামে ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে বিষয়টি নতুন মাত্রা পেল।মির্জা আব্বাস চার দলীয় জোট সরকারের আমলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ছিলেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ঢাকা নগর বিএনপি পুনর্গঠনের অংশ হিসাবে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে আব্বাসের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করে দেন খালেদা জিয়া। খোকার ওই কমিটির সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবার আব্বাসের কমিটিতে আছেন উপদেষ্টা হিসাবে।সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর মহানগর বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম গত ২৫ মার্চ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে দল নির্বাচন করবে না- এটাও বলেনি। তাই আগে থাকতে ফরম তুলে রাখছি। যদি দল নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, তখন প্রত্যাহার করা হবে।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, যিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। এই অংশ থেকে বিএনপির সমর্থনপ্রত্যাশী আর কেউ এ পর্যন্ত মনোনয়ন সংগ্রহ করেননি।