দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ মার্চ: খালেদা জিয়াস্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া৷ তবে তাঁর দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে৷এর আগে গত একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে যাননি খালেদা জিয়া৷ গত ৩ জানুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়া গুলশানে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷ ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রথমে কয়েক দিন তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখা হলেও পরে নিজ থেকেই তিনি কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷
বিএনপির সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়া তাঁর কার্যালয়ে থাকতে চান৷ তাদের আশঙ্কা ছিল, খালেদা জিয়া একবার কার্যালয় থেকে বের হলে তাঁকে আবার ওই কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না৷ এ কারণে তিনি শহীদ মিনারে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন৷ এবারও অনেকটা একই কারণে স্মৃতিসৌধে যাননি তিনি৷ তা ছাড়া বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিও চলছে৷ সাধারণত নিজেদের ডাকা হরতাল-অবরোধে খালেদা জিয়া বের হন না৷ প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের সকালে স্মৃতিসৌধে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান তিনি৷বিএনপির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ও আবদুল মঈন খানের নেতৃত্বে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ সেখান থেকে ফিরে সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানান নেতা-কর্মীরা৷ এ সময় কয়েকশ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন৷
পরে মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন৷ তার পরও বিএনপি এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে৷ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের মুক্তি, সভা-সমাবেশ এবং প্রচার-প্রচারণায় স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে৷ তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বড় একটি উপাদান হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন৷ ফলে, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা বিএনপির প্রধান লক্ষ্য৷ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে চলমান আন্দোলনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়াই বিএনপির চ্যালেঞ্জ৷
তবে তার পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ও আবদুল মঈন খানসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা শ’খানেক কর্মীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় সাভারে শহীদবেদীতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন৷এ সময়ে তারা কিছুসময় বেদীর সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধে জীবন উত্সর্গ করা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান৷
আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৩ জানুয়ারি থেকে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান করছেন৷ গত আড়াই মাসের বেশি সময় তিনি সেখান থেকে বের হননি৷রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় মারা যান৷ তার লাশদেশে আনার পর ওই কার্যালয় থেকেই ছেলেকে শেষ বিদায় জানান বিএনপিনেত্রী৷
লাগাতার অবরোধ ডেকে নিজের কার্যালয়ে থাকা খালেদা বিভিন্ন মামলার শুনানিতেও অনুপস্থিত থাকছেন৷ এ কারণে জিয়া ট্রাস্টের দুই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে৷গত ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষাশহীদ দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে না যাওয়ায় সমালোচনায় পড়তে হয় খালেদা জিয়াকে৷ খালেদার ওই কার্যালয়ে অবস্থান করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা প্রশ্ন তুলে আসছেন৷
বিএনপি স্পষ্ট না বললেও আইনজীবীদের কথায় স্পষ্ট যে, খালেদা একবার কার্যালয় থেকে বের হলে তাকে আর সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে তারা আশঙ্কা করছেন৷প্রতিবার স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর খালেদা জিয়া চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানালেও এবার তিনি সেখানেও যাননি৷
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়া যে বিবৃতি দিয়েছেন, তাতে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে বলা হয়েছে অস্বাভাবিক ৷দেশবাসীসহ প্রবাসীদের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেছেন, এবারের এমন এক অস্বাভাবিক পটভূমিতে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এসেছে, যখন দেশ থেকে গণতন্ত্র নির্বাসিত৷
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মানুষের লুন্ঠিত অধিকার ফিরিয়ে আনতে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া৷সাভারের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের মুখে লও লও লও সালাম/ শহীদ বীররা লও সালাম, লও লও লও সালাম/ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়া/ লও লও লও সালাম স্লোগান শোনা যায়৷
দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান, জিয়াউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করীম শাহিন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সেলিম রেজা হাবিব, মহানগর বিএনপির আবু সাঈদ খান খোকন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের নুরে আরা সাফা, মহানগর সভাপতি সুলতানা আহমেদ, রাশেদা বেগম হীরা, উলামা দলের হাফেজ আবদুল মালেক, মত্স্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার এম এ মালেক, মনির খান, সালাহউদ্দিন ভুঁইয়া শিশির, কৃষক দলের শাহজাহান মিয়া সম্রাট, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রফিকুল ইসলাম বাচ্চুসহ যুব দল, ছা্ত্র দল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ছিলেন৷
পরে মাহবুবুর রহমান ও মঈন খানসহ নেতা-কর্মীরা শেরে বাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে গিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন৷ তারা প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করেন৷পরে মহানগর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, ড্যাব, জাসাস, ছাত্র দলের পক্ষে আলাদাভাবে জিয়ার কবরে ফুল দেওয়া হয়৷
শেরেবাংলা নগরে সংসদ ভবন সংলগ্ন এই সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড থাকায় চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি এদিন কম ছিল৷