25-03-15-PM_Handover Independence Award-12

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মার্চ: বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ সাতজন বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।বুধবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে মনোনীতদের হাতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য শাহ এ এম এস কিবরিয়া ছাড়াও প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ও শহীদ মামুন মাহমুদকে এবার স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে।

সাহিত্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংস্কৃতিতে চলচ্চিত্র অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে ড. মোহাম্মদ হোসেন মণ্ডল এবং সাংবাদিকতায় প্রয়াত সন্তোষ গুপ্ত এ পুরস্কার পেয়েছেন। এই সাতজনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদও এবার স্বাধীনতা পদকের জন্য মনোনীতদের তালিকায় থাকলেও তিনি তা নেননি।এ পর্যন্ত স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থেও তার নাম নেই।

মোজাফফর আহমেদের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেছেন, উনি নিতে আগ্রহী নন। এজন্য উনার নাম ড্রপ করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ২১২ জন ব্যক্তি ও ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে আঠারো ক্যারেটের ৫০ গ্রামের একটি স্বর্ণপদক, দুই লাখ টাকা ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া এ বছর মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পান।

বৃহত্তর সিলেটে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় প্রয়াত কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরীকে এবার এ পদক দেওয়া হয়। সাবেক এই সাংসদ নিজে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির দায়িত্বে থেকেও পাকিস্তানি বাহিনীর বদলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মামুন মাহমুদ। মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে শহীদ হন তিনি।বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে। একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন তিনি।

দেশের সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা আব্দুর রাজ্জাক, এদেশের মানুষের কাছে যিনি নায়ক রাজ রাজ্জাক’হিসেবে পরিচিত।বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন মণ্ডলকে এবার স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রে অবদানের জন্য।

আর সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য এ পুরস্কার পেলেন প্রয়াত সাংবাদিক সন্তোষ গুপ্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়াও এ দেশের সব আন্দোলনেই তিনি অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন, আর এবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও নিলেন না ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ।৯৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য।

চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য অধ্যাপক মোজাফফরসহ আটজনের নাম ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে ন্যাপ সভাপতি যে এই সম্মাননা নেবেন না, তা আগেই দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তিনি নিজেও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সাতজনের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অধ্যাপক মোজাফফরের অনাগ্রহের কারণে শেষ পর্যন্ত তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থেও তার নাম রাখা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, উনি নিতে আগ্রহী নন। এজন্য উনার নাম ড্রপ করা হয়েছে।এ পর্যন্ত ২১২ জন ব্যক্তি ও ২৫টি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। তবে কারো প্রত্যাখ্যানের ঘটনা এই প্রথম।

মোজাফফর আহমেদ বলেন, রাজনীতির অর্থ দেশ সেবা, মানুষের সেবা। পদ বা পদবীর জন্য কখনো রাজনীতি করি নাই। শেখ মুজিব আমাকে অনেক কিছু বানানোর চেষ্টা করেছিলেন আমি হই নাই। আমি মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা ভাসানীর অনুসারী।

তিনি বলেন, পদক দিলে বা নিলেই সম্মানিত হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি বিশ্বাসী নই। দেশপ্রেম ও মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম, কোনো পদক বা পদ-পদবি আমাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। সত্যিকার অর্থে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তারা কেউই কোনো প্রাপ্তির আশায় নেননি।অধ্যাপক মোজাফফর পদ-পদবীর বিষয়ে অনীহা দেখালেও স্ত্রী আমিনা আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত আসন থেকে সাংসদের দায়িত্ব পালন করছেন। গত নবম সংসদেরও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন ন্যাপের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার কাকরাইলে মোজাফফর আহমেদের বাবার বাড়ি লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু হলে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান ভারতের আগরতলায়।তাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা হলে তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকেও সদস্য করা হয়।