দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মার্চ: আগামী ২৭ ও ২৮ মার্চ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজন করতে যাচ্ছে সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’২০১৫। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গণসঙ্গীতকে ছড়িয়ে দেয়া, গণসঙ্গীতের প্রচার ও প্রসার এবং গণসঙ্গীতকে সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদীচী’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সত্যেন সেনের জন্মদিবস উপলক্ষে প্রতিবছর এই উৎসব আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এবার ষষ্ঠবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে এ উৎসব ও প্রতিযোগিতা। বুধবার সকাল ১১টায় উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয় (১৪/২, তোপখানা রোড- জাতীয় প্রেসক্লাবের বিপরীতে) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উৎসব ও প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উৎসব প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি শংকর সাঁওজাল। এতে তিনি জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আগামী ২৭ মার্চ শুক্রবার বিকাল ৪টায় উৎসবের উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত গবেষক ও শিল্পী স্বপন কুমার হালদার। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী শুভ প্রসাদ নন্দী মজুমদার। এ অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিকদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। তিনি আরো জানান, উৎসবের দ্বিতীয় দিন ২৮ মার্চ বিকাল ৪টায় জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সম্মাননা ও সনদ প্রদান করা হবে। এছাড়া, প্রতিদিন আমন্ত্রিত শিল্পী, প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত গণসঙ্গীত শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে।
শংকর সাওজাল বলেন, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কৃষকনেতা, শিল্পী-সংগ্রামী ও উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেন-এর জন্মদিন ২৮ মার্চ। তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সাল থেকে উদীচী ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করে আসছে ‘সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের পেছনে উদীচীর মূল লক্ষ্য হচ্ছে গণসঙ্গীতকে গণমানুষের আরো কাছে নিয়ে যাওয়া, নতুন প্রজন্মকে গণসঙ্গীতের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং প্রতিভাবান গণসঙ্গীত শিল্পী খুঁজে বের করা। ধারাবাহিকভাবে এ উৎসব ও প্রতিযোগিতা আয়োজনের মধ্য দিয়ে গণসঙ্গীতের আরো বিকাশ ঘটার পাশাপাশি গণসঙ্গীত গ্রাম-গ্রামান্তরে ছড়িয়ে পড়বে বলে উদীচী বিশ্বাস করে। দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ক্রমবর্ধমান নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ; চোরাগুপ্তা হামলা ও হত্যা, মারামারি, ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতায় টিকে থাকার হীন কার্যকলাপ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার নানামুখী ষড়যন্ত্র, হত্যাকা-, ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় এবারের গণসঙ্গীত উৎসবটি অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে লিখিত বক্তব্যে জানান শংকর সাওজাল।
উদীচী বিশ্বাস করে, এ দুঃসময়ে জনমানুষের চৈতন্যে আলোর মশাল জ্বালাতে ‘সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা’ প্রেরণা জোগাবে। এবারের উৎসবের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- “পথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্যকে গড়েছি”। ৫০-৬০-এর দশকে চট্টগ্রামের আর্য সঙ্গীত সমাজে এ গান শেখানো হতো ও গাওয়া হতো। এছাড়া সা¤্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলার লক্ষ্যে গণনাট্য সংঘের শিল্পীরাও পথে পথে এ গানটি গেয়ে বেড়াতেন।
এবারের গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতায় নতুন নতুন গান, তরুণদের উৎসাহী অংশগ্রহণ আশাব্যঞ্জক। এবারে অনূর্ধ্ব ১২ বছর, ১২ থেকে ১৮ বছর ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রতিযোগীদের তিনটি পৃথক বিভাগে বিভক্ত করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিযোগিতা। রয়েছে দলীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা শেষে আটটি বিভাগীয় পর্যায়ের (ঢাকা পূর্ব ও পশ্চিমসহ) প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। উদীচীর তিন শতাধিক শাখার শিল্পীবৃন্দসহ সংগঠনের বাইরে থেকেও অনেক প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। ২৭ মার্চ সকাল ১০ টায় শিল্পকলা একাডেমীতে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন এবং অমিত রঞ্জন দে উপস্থিত ছিলেন।