দৈনিকবার্তা-ঈশ্বরদী, ২৫ মার্চ: দীর্ঘ পাঁচশত বছর আগে পদ্মা নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা ঝাকজমকপূর্ণ জনপদ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার কোমরপুর হতে সাড়া-ঝাউদিয়া এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার তিলকপুর হতে গৌরীপুরের নদী শাসনের আওতায় আসায় এখন আবার সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত হচ্ছে। জনশ্র“তি যে, এ জনপদে একসময় থানা ছিল, রেলওয়ে স্টেশন ছিল, নদী বন্দর ছিল, ইংরাজ সাহেব বাবুদের হাট ছিল, পাবলিকদের হাট ছিল। অথচ কালের বিবর্তনে প্রমত্তা পদ্মার দংশনে বিলীন হয়ে এ জনপদটি বিলীন হয়ে যায়। নিঃস্ব, অসহায় ও গৃহহীন হয়ে পড়ে এখানকার অর্ধ লক্ষাধিক পরিবার।
আনন্দের খবর হলো এখন আর অবহেলিত জনপদ হিসেবে ভাবা যাবে না এ অঞ্চলকে। প্রত্যেকের মনের আনন্দ পদ্মা নদীর বাম তীর নদী শাসনের আওতায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আর্থিক সহায়তায় সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আজ এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করলেন ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ এম.পি.। ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এখানে ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় পশ্চিম অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্মৃতি রোমন্থন করে ভূমি মন্ত্রী বলেন, চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী, ঠিক তেমনি পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর কোমরপুর হতে সাড়া থেকে ঝাউদিয়া, নাটোর জেলার লালপুরের তিলকপুর থেকে গৌরীপুর তথা পশ্চিমাঞ্চলের দুঃখ এ পদ্মা। তিনি বলেন, একসময় সাঁড়া ঘাটে স্টিমার চলতো। এছাড়া সাংস্কৃতিক ও ব্যবসাবাণিজ্যের পিঠস্থল ছিল সাঁড়া। এখানে নদী বন্দর ছিল, রেলওয়ে স্টেশন ছিল, আরামবাড়িয়ায় বড় বাজার ছিল, থানা হেডকোয়ার্টার ছিল, সাহেব নগর চরে বারোশত পাকা ঘরবাড়ি ছিল, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, শহীদমিনার সবই ছিল। কিন্তু পদ্মার দুঃশাসন সব কেড়ে নেয়।
ভূমি মন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ মৃত সাঁড়াকে আবার ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করার মাধ্যমে জীবিত করার আশ্বাস দিয়ে বলেন, এখানে আবারও রাস্তাঘাট সম্প্রসারণ হবে, এখানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় অন্তত দুইশত পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মাথাগোঁজার ঘরবাড়ি নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হবে। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় আনা হবে।
পাবনাজেলার ঈশ্বরদী উপজেরার কোমরপুর হতে সারা-ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোরের লালপুর উপজেলার তিলকপুর হতে গৌরীপুর পর্যন্ত পদ্মা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো- পদ্মা নদীর বামতীরের ভাঙ্গন হতে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেরার কোমরপুর হতে সাড়া-ঝাউদিয়া পর্যন্ত এবং নাটোর জেলার লালপুর উপজেরার তিলকপুর হতে গৌরিপুর পর্যন্ত এলাকা রক্ষা করা। পদ্মা নদীর ভাঙ্গন হতে ‘পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প’ এর পদ্মা নদীর বামতীর বন্যা বাঁধের অংশ বিশেষ রক্ষা করারসহ ব্যাপক এলাকার কৃষি জমি ও মূল্যবান স্থাপনা রক্ষা করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন পূর্বক ৮৬৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার বিপুল পরিমাণ সরকারি-বেসরকারি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রক্ষা করা। প্রকল্পটি ০৫ ফেব্র“য়ারি ২০১৩ খ্রি. তারিখে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৩ হতে জুন ২০১৫ পর্যন্ত। সংশোধিত ডিপিপি অনুসাওে প্রকল্পের ভৌত কাজের মোট ২০টি প্যাকেজের মধ্যে বর্তমানে ৭টি প্যাকেজের কাজ চলমান আছে। গত ০৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে ৫টি প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে যা ০৯ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে গ্রহণ করা হবে এবং আরও ৮টি প্যাকেজের দরপত্র দ্রুত আহ্বান করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।