দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ২৫ মার্চ: কলাপাড়া পৌর শহরের মাঝখানের খালটি দখলের মহোৎসব চলছে। যে যেভাবে পারছে দখল করে পুকুর, মাছের ঘের কিংবা বসতবাড়ি স্থাপন করছে। অনেকে আবার খালকে চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে স্থাপনাসহ মাছের ঘের করার কাজ অব্যাহত রেখেছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এসব দেখার এবং কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়ার কেউ নেই। শহরের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত খালটির পানি ওঠা-নামার জন্য রয়েছে একটি স্লুইস। শহরের পানি ওঠা-নামা ছাড়াও শহরের সকল বর্জ্য খাল দিয়ে অপসারণ হয়। ফলে এ খালটিকে শহরবাসীর প্রাণ বলা হয়। খালটি দিয়ে শহরটি দুই দিকে বিভক্ত রয়েছে। আন্ধার মানিক নদীর সঙ্গে সংযুক্ত এখালটি শহরে প্রবেশ করে তিন দিকে প্রবাহিত হয়ে গেছে। চিঙ্গরিয়া, এতিমখানা হয়ে রহমতপুর, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক হয়ে টিয়াখালী এবং নতুনপাড়া চৌরাস্তা হয়ে নিশানবাড়িয়া চাকামইয়া নদীতে মিলেছে।
বর্তমানে খালটি অস্তিত্ত্ব সঙ্কটে পড়েছে। খালটির অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকা দখল করে অসংখ্য বাঁধ দেয়া হয়েছে। কবি নজরুল ইসলাম সড়ক এলাকায় এমন দৃশ্য বিরাজমান রয়েছে। এ প্রক্রিয়া এখনও অব্যহত রয়েছে। খালটির গোড়া স্লুইসঘাট থেকে দুই পাড়ে ছোট-বড়, পাকা-আধাপাকা শত শত অবৈধ স্থাপনা তোলা হয়েছে। এসব স্থাপনার মালিকরা সমস্ত খোলা টয়লেটের আউটলাইন খালের সঙ্গে দিয়ে রেখেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে খালটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে শহরে বসবাস করা অসম্ভবপর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কবি নজরুল ইসলাম সড়কের শত শত বাসিন্দা ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে খালটি উদ্ধারে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন। যেখানে দেখা গেছে খালটির কয়েকটি দাগকে চাষযোগ্য জমি দেখিয়ে ৭৭৯ কে/৮৬-৮৭ কেসের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এলাকার লোকজনের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন ১৯৯৩ সালে ভূ,রা, পটুয়া/এ-১৮৬/৮৭-২৬ স্মারকে ১৯৯৪ সালের ৮ অক্টোবর বন্দোবস্ত কেসটি বাতিল করেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত খালের দখল জনসাধারণের স্বার্থে মুক্ত হয়নি। বর্তমানে ওই খাল প্লট করে করে বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বর্তমানে খালটিতে ৭/৮ফুট পানি বহমান রয়েছে।
স্থানীয় বাসীন্দা নিখিল চন্দ্র জানান, পানি চলাচলের পথ বন্ধ থাকায় বর্ষা মৌসুমে তাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। মিল্টন হালদার জানান, খালটি দখলমুক্ত করতে আমরা বছরের পর বছর আবেদন করে যাচ্ছি ভূমি প্রশাসনে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দখলদারদের এক আত্মীয় রয়েছে (পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে)। যার কারণে কলাপাড়া থেকে পাঠানো কাগজপত্র তিনি গায়েব করে দেন এমন মন্তব্য সকলের। স্থানীয় ভূমি অফিস খালটির দখলদার উচ্ছেদ কিংবা খালের প্রকৃত সীমানা কখনও চিহ্নিত হয়নি। দুই বার খালটির বিরাট অংশ খনন করা হয়েছে। কিন্তু খালের সীমানা চিহ্নিত না করায় সরকারের টাকা খালেই লোপাট হয়ে গেছে। পৌর মেয়র মুক্তিযোদ্ধা এসএম রাকিবুল আহসান জানান, খালটি রক্ষায় তারা সর্বদা চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার রায় জানান, সরকারের খাল দখল ও ভরাটের সুযোগ নেই। খাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে