দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মার্চ: যতো বাধা-বিপত্তিই থাক, আগামী ১ এপ্রিল থেকেই এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।মঙ্গলবার (বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনভার্সিটির (ইউআইইউ) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ইউআইইউ’র আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।শিক্ষামন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদায় অভিষিক্ত। আশা করি সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে চলবে।
‘কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও তাদের ন্যূনতম শর্তপূরণ করতে পারেনি। এভাবে তারা বেশিদিন চলতে পারবে না। যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সফল হতে পারেনি, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার পরিবেশ ও নির্ধারিত শর্তপূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যারা মুনাফার লক্ষ্য নিয়ে চলতে চান, তাদের জন্য আমরা সময় বেঁধে দিয়েছি। তারা আইন অনুসারে সঠিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেশের বাস্তবতা এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে ভর্তি ও টিউশন ফিসহ সব ব্যয় একটি সীমা পর্যন্ত নির্ধারিত রাখতে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
সরকারি- বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমরা পার্থক্য সৃষ্টি করতে চাই না উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী সব বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান অনুসন্ধানের জন্য সে ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে বলেন।সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এক হাজার ৪৫২ জন শিক্ষার্থীকে গ্রাজুয়েশন ও পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি প্রদান করা হয়। কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৫ শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়।নবীনদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাজীবন শেষ হলেও কর্মজীবন এখান থেকে শুরু হলো। অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করতে হবে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনায় ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র গড়তে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে তার বাস্তবায়নে আধুনিক যুগের জ্ঞান, প্রযুক্তি, দক্ষতা অর্জন করে সামনের সারিতে থাকা নবীনদের ঐতিহাসিক কর্তব্য সম্পাদনের আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ততদিন দেশ উন্নত হবে না, যতদিন দেশ পরিচালনা ও দেশের অর্থনীতির হাল ধরার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক সৃষ্টি করতে না পারি। নবীনদের দেশের জন্য, দশের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করে ভালো মানুষ হয়ে বিশ্বসভায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে হবে।সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।সনদপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কর্মজীবনের পথ মোটেও বন্ধুর নয়। আপনাদের কাছে সর্বোচ্চ মেধা মনন ও পরিশ্রম আশা করছে দেশ। সন্ত্রাস, হত্যা পেট্রোল বোমা হামলা, নারীর প্রতি অন্যায়কে ছাড়িয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে।অন্যান্যের মধ্যে ইউআইইউ’র উপাচার্য ড. এম রিজওয়ান খান, ইউআইইউ’র বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ভাইস চেয়ারম্যান ফরিদুর রহমান খান বক্তব্য রাখেন।অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচারর্য, ইউআইইউ’র বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক-কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, সকল বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করেই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।বিএনপি জোট হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলেও নির্ধারিত সময়ে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে বিভিন্ন মহলের চাপ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি পরীক্ষার্থীদের সূচি অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।নাহিদ বলেন, হরতাল-অবরোধের মধ্যে পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছে।আর এ ক্ষেত্রে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোরও সহযোগিতা চান তিনি।