full_1346388189_1427111921

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মার্চ: সেমি-ফাইনালে তারা আগন্তুক নয়। আগের দশটি বিশ্বকাপে নিউ জিল্যান্ড ছয়বার সেমি-ফাইনাল খেলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা খেলেছে তিনবার। তবে এই সীমানা অতিক্রম করে কখনোই ফাইনাল খেলতে পারেনি তাদের কেউই। এবার অবশ্য যে কোনো এক দলের এই গেরো ছুটবে। ২০১৫ বিশ্বকাপের প্রথম সেমি-ফাইনালে যে মুখোমুখি এই দুটি দল।মঙ্গলবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক নিউ জিল্যান্ডের ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়।

এই বিশ্বকাপে দুই দেশেরই খেলার ধরণ প্রায় একইরকম। দুই দলই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংকে ম্যাচ জয়ের মন্ত্র হিসাবে নিয়েছে। শক্তির বিবেচনায় দুই দলের ব্যাটিং-বোলিং আর ফিল্ডিংও সমানে সমান।ছয় মাস আগেও কাউকে এই দুই দলের ম্যাচের ফেভারিট বাছতে বলে অনেকেই নির্দ্বিধায় দক্ষিণ আফ্রিকার নাম বলে দিতে পারতেন। এখন স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডকেও ফেভারিট ভাবতে হবে। সব মিলিয়ে এই ম্যাচের আগে কোনো এক দলকে এগিয়ে রাখা খুবই মুশকিল।

ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের চতুর্থ স্থানে থাকা নিউ জিল্যান্ড টানা নয়টি ম্যাচ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে এই লড়াইয়ে নামছে। এই ৯ ম্যাচের সাতটিই তারা জিতেছে এই বিশ্বকাপে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, কোরি অ্যান্ডারসন, টিম সাউদি, কেন উইলিয়ামসন, ড্যানিয়েল ভেটোরি, ট্রেন্ট বোল্ট এবং মার্টিন গাপটিল-দলের এই সাত খেলোয়াড়ই রয়েছেন দারুণ ফর্মে।দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ অভিযান অবশ্য এত মসৃণভাবে এগোয়নি। গ্র“প পর্বে ভারত ও পাকিস্তানের কাছে হারে তারা। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারটি সেমি-ফাইনালের ভেন্যু ইডেন পার্কেই। আর নিউ জিল্যান্ড এই বিশ্বকাপে ইডেন পার্কে খেলা একটি ম্যাচে জয় পায়, তাও আবার টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।

গ্র“প পর্বের হেঁচকিটা বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকা কিন্তু দারুণ ছন্দেই আছে। কোয়ার্টার-ফাইনাল শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম জয়টা তুলে নেয় এবি ডি ভিলিয়ার্সের দল।নকআউটে নিউ জিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা চার বছর আগে মুখোমুখি হয়েছিল। ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ২০১১ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ৪৯ রানে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।ডি ভিলিয়ার্স অবশ্য অতীতের কোনো পরিসংখ্যানেই তাকাতে চান না। নিজের দলের ওপর আত্মবিশ্বাস থাকার কথাই শুধু বললেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক।

আমি আগেও বলেছি; আমার বিশ্বাস, আমরা যদি আমাদের পুরো সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে এই টুর্নামেন্টে কেউ আমাদের থামাতে পারবে না।অকল্যান্ডের ম্যাচে নিজেদের প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে দুই দলের অবস্থাটা ভিন্ন রকম। টুর্নামেন্টের প্রথম কোয়ার্টার-ফাইনালটি খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই ম্যাচের আগে সময় তারা একটু বেশিই পায়। এমনকি ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন না করে বিশ্রাম নেওয়ার বিলাসিতাও দেখাতে পারে তারা।

অন্যদিকে নিউ জিল্যান্ড খেলেছে সবশেষ কোয়ার্টার-ফাইনালটি। শনিবার সেই ম্যাচ জিতে ওয়েলিংটন থেকে অকল্যান্ড আসে তারা। এরপর অনুশীলনও করেছে স্বাগতিকরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিউ জিল্যান্ডের কোয়ার্টার-ফাইনালের স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে রাখতে চাইবেন মার্টিন গাপটিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১১ ম্যাচে তার গড় ১১.৫০। এবার এই বাজে অবস্থা কাটাতে গাপটিল আত্মবিশ্বাসের পালে হাওয়া ভরে নিতে পারেন আগের ম্যাচে করা অপরাজিত ২৩৭ রান থেকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গাপটিলের ওই ইনিংসটি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসের রেকর্ড। এই বিশ্বকাপেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্রিস গেইলের করা ২১৫ রানের রেকর্ড ভাঙেন তিনি।নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক অবশ্য সবকিছু এড়িয়ে গিয়ে শুধু খেলাটা উপভোগ করতে বলেন।মাঠে নামো, নিজেকে মেলে ধর, উপলক্ষটা উপভোগ কর।এটা দারুণ একটা মঞ্চ। আপনি এর জন্যই খেলেন, এর জন্যই এত অনুশীলন, এর জন্যই বাড়ি থেকে দূরে থাকা। এর জন্যই আপনি এত কঠিন পরিশ্রম আর ত্যাগ করছেন”-যোগ করেন ম্যাককালাম।

একজন পঞ্চম বোলারের সমস্যা দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিশ্বকাপে শুরু থেকেই। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জেপি ডুমিনির ভালো বোলিং ডি ভিলিয়ার্সের দুশ্চিন্তা দূর করারই কথা। অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকও করেন ডুমিনি।নিউ জিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণে এই ম্যাচের আগে আবার হানা দিয়েছে চোট। গোড়ালির চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে পড়েছেন ফাস্ট বোলার অ্যাডাম মিল্ন। তার পরিবর্তে দলে এসেছেন পেসার ম্যাট হেনরি। এই সমস্যার কারণেই হয়ত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ম্যাচের আগের দিনই একাদশ দিতে পারল না নিউ জিল্যান্ড।

দলে চোটের সমস্যা নেই, এরপরও দক্ষিণ আফ্রিকাও ম্যাচের আগের দিন একাদশ ঘোষণা করেনি। ভার্নন ফিল্যান্ডার, নাকি কাইল অ্যাবট? এই নিয়ে মধুর সমস্যায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফিল্যান্ডারের ব্যাটিং করার সামর্থ্য হয়ত তাকে এগিয়ে রাখবে।