দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মার্চ: আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটাররা যাতে সহিংসতামুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারে তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প-ইডব্লিউজি। সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মত ব্যক্ত করা হয়। ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সংগঠনের পরিচালক মো. আব্দুল আলীম। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন সংগঠনটির সদস্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, তালেয়া রেহমান, কামরুল হাসান, এইচ এম নোমান, হারুণ অর রশিদ ও বিনয় কৃষ্ণ মল্লিক।
নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা ওজবাবদিহি নিশ্চিত করতে ২০০৬ সালে দেশের ২৮টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জোট ইডব্লিউজি গঠিত হয়।আব্দুল আলীম বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে ৪৬ জন দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষক ও নির্বাচনের দিন এক হাজার পর্যবেক্ষক কাজ করবে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ২১ জন দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষক ও নির্বাচনের দিন ৭০০ জন পর্যবেক্ষক কাজ করবে।সংস্থাটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য তালেয়া রেহমান বলেন, সিটি নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণমূলক হওয়া উচিত। তবে এক্ষেত্রে প্রার্থীতা বাছাইয়ে রাজনৈতিক মনোনয়ন নিষিদ্ধের কথা বলেন আরেক সদস্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
সবার আগে নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে মনে করছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্র“প (ইডব্লিউজি)। সংগঠনটি মনে করছে, ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ ও এরপর উপজেলা নির্বাচনের পর সার্বিক নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে।এ বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ এবং নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রতিটি পদক্ষেপে পেশাগত আচরণ, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের পক্ষে মত দিয়েছে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গণতন্ত্রে নির্বাচনের অপরিহার্য ভূমিকার কারণে ইডব্লিউজি সব ধরনের নির্বাচনকে স্বাগত জানায়। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে হবে। প্রার্থী ও ভোটাররা যেন নির্ভয়ে থাকতে পারে, এজন্য নির্বাচন কমিশনকে ব্যাপকভিত্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন যেহেতু নির্দলীয়, কাজেই রাজনৈতিক মনোনয়ন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত নীতিমালার কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।সংবাদ সম্মেলনে নারী ভোটারদের ভোট গ্রহণে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচন কেন্দ্রে বাধ্যতামূলক পোলিং এজেন্ট নিয়োগসহ মোট ১১ দফা সুপারিশ করা হয়।
ইডব্লিউজি জানিয়েছে, ঢাকা সিটি নির্বাচনে তাদের ৪৬ জন দীর্ঘ মেয়াদি পর্যবেক্ষক ও নির্বাচনের দিন এক হাজার পর্যবেক্ষক কাজ করবেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ২১ জন দীর্ঘ মেয়াদি পর্যবেক্ষক ও ভোটের দিন ৭০০ জন পর্যবেক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা আছে।ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যবস্থা করার জন্য, আসন্ন নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইডব্লিউজি)।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৪ এর দশম জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। আশা করবো এই নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরিয়ে এনে মানুষের বিশ্বাসকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ড. তালেয়া রেহমান বলেন, বর্তমান দেশের যে রাজনৈতিক অবস্থা তাতে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন পর একটি নির্বাচন হচ্ছে তাকে গ্রহণযোগ্য করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যেন ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তালেয়া রেহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের হয়ে কাজ করতে জনপ্রতিনিধিত্ব করা। এক্ষেত্রে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ বা সহিংসতা কোনো রাজনৈতিক দলেরই কাম্য হতে পারে না।ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়না। তারপরও দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা ছাড়া আর সব কিছুই হয়। তবে এই নির্বাচনে যেন সবাই অংশগ্রহণ করে সেটা আমরা আশা করবো। কারণ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সবার অংশ গ্রহণ আবশ্যক।
লিখিত বক্তব্যে ইডব্লিউজির পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম বলেন, ২০১৪ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের আস্থা কমে গেছে। আশা করবো এই নির্বাচনের মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরিয়ে এনে মানুষের বিশ্বাসকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় ভীতিকর অবস্থা এড়াতে প্রত্যেক প্রার্থীই নির্বাচনী নীতিমালা মেনে চলবেন বলে আশা করি।ঢাকা সিটি করপোরেশন বিভক্ত হওয়ার পর প্রথম বারের মতো এই নির্বাচনে ইডব্লিউজি নারী ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতের জন্য পৃথকভাবে ভোট গণনা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ভোট গ্রহণের ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছে নির্বাচন কমিশনকে ।