দৈনিকবার্তা-নীলফামারী, ২৩ মার্চ: আকাশ সংস্কৃতি এবং পাইরেসীসহ দর্শকদের অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলগুলো। নীলফামারীর ২৫টি সিনেমা হলের মধ্যে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ২৪টি। টিকে আছে মাত্র সৈয়দপুরের তামান্না নামে একটি সিনেমা হল। বর্তমানে সেটিও জোড়াতালি দিয়ে চলে আসছে। অনেকে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বাজারে মোবাইলে নানা ধরণের দৃশ্য কম্পিউটারের মাধ্যমে ডাউনলোড করা হচ্ছে। এছাড়া মুক্তির আগে ও পরে সিনেমার সিডি বাজারে চলে আসছে। পাশাপাশি রয়েছে ডিশ লাইনের কানেকশন। সব মিলিয়ে সিনেমা হলগুলো আর আগের মতো দর্শক টানতে পারছে না। অপরদিকে ছবি নির্মাতারাও ছবি নির্মাণে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কারণ একটি ছবি নির্মাণ করতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার প্রয়োজন হয়। ছবি নির্মাণের পর সেই টাকা উঠে আসেনা। ফলে লোকসান গুনতে গুনতে তারা আজ দিশেহারা।
নীলফামারী জেলা সিনেমা হল মালিক সমিতি অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ওই বিলুপ্ত কমিটির পক্ষ থেকে জানা যায়, আমরা যারা হল মালিক ছিলাম আজ তরা নি:স্ব। পুঁজি হারিয়ে আজ আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কেউ কেউ ব্যাংক ঋন পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হয়ে গেছে। নীলফামারী জেলার ৬টি উপজেলায় সিনেমা হল ছিল ২৬টি। এর মধ্যে চিলাহাটিতে ছিল ২টি আনন্দমহল ও মুন সিনেমা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। ভাউলাগঞ্জের তৃপ্তি সিনেমা সেটিও বন্ধ। জলঢাকার দুটি জনতা ও মিলন সিনেমা বন্ধ। ডিমলায় ৩টি বান্ধবী, রোকসানা ও সীমা এই তিনটি হলও বন্ধ হয়ে গেছে। ডোমারে ৩টি কণিকা, মায়া ও মিলন বন্ধ রয়েছে। কিশোরীগঞ্জের ৪টি বাবু টকিজ, অনামিকা সিনেমা, আশা টকিজ ও বলাকা টকিজ, নীলফামারীতে ২টি মমতাজ মহল ও দীপালি টকিজ, টেঙ্গনমারীতে ৩টি আশা টকিজ, চন্দন টকিজ ও আনন্দ মহল, সৈয়দপুরে ৪টি গ্যারিসন সিনেমা, বিজলী টকিজ, তামান্না সিনেমা ও লিবার্টি সিনেমার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ৩টি। জোড়াতালি দিয়ে চলছে বর্তমানে তামান্না সিনেমা। সৈয়দপুর গ্যারিসন সিনেমায় এখন চলছে সেনা কমিউনিটি সেন্টার, বিজলী টকিজ ভেঙ্গে ফেলে তৈরি করা হচ্ছে চৌধুরী টাওয়ার, লির্বার্টি সিনেমা হলটিও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সেখানে তৈরি করা হবে বহুতল মার্কেট। এমনিভাবে প্রায় প্রতিটি সিনেমা হল ভেঙ্গে ফেলে বহুতল মার্কেট, কোথাও অন্য ব্যবসার জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে হলগুলো।
সিনেমা হলের ভাড়াটিয়া মালিকরা জানান, প্রতিমাসে সমস্ত স্টাফ খরচ বাবদ ব্যয় হয়ে থাকে সোয়া লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটর ব্যয়, হল ভাড়া, পৌর কর, সরকারি ট্যাক্স, ছবি চালানোর কার্বন ব্যয়, প্রচার- প্রচারণা পোষ্টারের খরচের পাশাপাশি রয়েছে ছবি নিয়ে আসার ব্যয়। বর্তমানে ভালো সুস্থ্য ধারার ছবি নির্মাণ হচ্ছে। তারপরেও দর্শক থাকছে হলশুন্য। কারণ হিসাবে তারা বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অব্জলসহ শহরের মানুষের হাতে হাতে রয়েছে মোবাইল সেট। কম্পিউটারের মাধ্যমে মোবাইলে বিভিন্ন দৃশ্য লোড করে দেখছে সবাই। অপরদিকে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে পানের দোকানেতেও সিডি চলছে। পাশাপাশি ডিশ লাইন ঘরে ঘরে। ফলে দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না সিনেমা হলে। অথচ এক সময় ছিল সিনেমা হলগুলো দর্শকে পরিপূর্ণ। সেসময় ছবি দেখার টিকিট কাটা নিয়ে অনেক হলে মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। এখন বিদেশী চ্যানেল বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে বসে সবেই দেখা যাচ্ছে টেলিভিশনে। এসব কারণে মার খাচ্ছে সিনেমা হলের মালিকগণ। সুদৃষ্টির অভাবে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই শিল্পকে বাঁচিতে রাখতে হলে নির্মাতা, সরকার, শিল্পীসহ সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।