দৈনিকবার্তা-খাগড়াছড়ি, ২৩ মার্চ: পার্বত্য তিন জেলায় রাংগামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবান এলাকায় বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ আংশিক প্রত্যাহার করে উঠিয়ে নিলো সরকার । এখন থেকে আগের নিয়মেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে পার্বত্য ৩জেলায় যে কোন বিদেশিরা ভ্রমন করতে পারবে । এর জন্য স্বরষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পূর্ব অনুমোদন নিতে হবে না । তবে বিদেশি গবেষকদের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে । এই অনুমতির জন্য ২০দিন আগে আবেদন করতে হবে ।গত ৫জানুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের এক সভায় ৩পার্বত্য জেলায় বিদেশীদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে ১মাস পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রানালয়ে অনুমতির আবেদনসহ ১১দফা নির্দেশনা জারী করা হয় । এ নির্দেশনা জারীর পর দেশের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় । দেশের একটি অংশ সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও দেশের দেশী-বিদেশী সমর্থক ও পৃষ্টপোষকরা এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করতেথাকে।শান্তি চুক্তি সম্পাদনকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র(পিসিজেএসএস) সন্তু লারমা গ্র“প ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের আদেশ বিরুদ্ধে সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রতিবাদ জানিয়েছিল ।
রোববার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । সকাল ১১টায় পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি ও প্রাসংগিক বিষয়াদির পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকদের পার্বত্যঞ্চলে ভ্রমনবিষয়ক নীতিমালা ও পরিপত্র প্রণয়নে সভা অনূষ্ঠিত হয় । এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান । উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় সচিব ড.মোজাম্মেল হক খান, বডার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ আজিজ আহম্মেদ, পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধবতন কর্মকর্তারা ।সভা সূত্রে জানা যায়, বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমনের সময় নিরাপত্তার বিষয়টি সভায় ব্যাপকভাবে আলোচিত হয় । এতে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেন, ভ্রমনকালে বিদেশিদের যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া হবে ।
সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, পার্বত্য ৩জেলায় বিদেশিরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অনুমতি ছাড়াই আগের নিয়মে ভ্রমন করতে পারবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে । এ ছাড়া কোনো বিদেশি গবেষক যদি ওই এলাকায় যেতে চান তাহলে ২০দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে । প্রজ্ঞাপন জারির পর এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানা গেছে ।এসব সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ আসাদুজ্জামান খান । এক প্রশ্নে জবাবে তিনি গনমাধ্যকে বলেন,’পার্বত্য অঞ্চলে বিদেশিদের ভ্রমন কিভাবে আরো সহজ করা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে’ ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি-রাংগামটি-বান্দরবানে বিদেশিদের যেতে হলে আগে থেকেই নিয়ম রয়েছে-জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে যেতে হবে । গত ৫জানুয়ারি থেকে ২০দলীয় জোটের অররোধকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটতে থাকে । এ অবস্থায় ৭জানুয়ারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের সংগে বৈঠকে বিদেশিদের ভ্রমনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয় । বলা হয়-বিদেশিদের ভ্রমনের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অনুমতি লাগবে । একই সংগে নিদের্শনা জারি করা হয়-কুটনীতিক বাদে যে কোন বিদেশি নাগরিককে ৩পার্বত্য জেলায় যাওয়ার এক মাস আগে অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে আবেদন করতে হবে । কড়াকড়ি আরোপের পর থেকে যে কজন বিদেশি পার্বত্য এলাকায় ভ্রমন করতে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অনুমতি নিয়ে গেছে ।খাগড়াছড়ি সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মাসুদ করিম(বর্তমানে জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ে উপ-সচিব) বলেন, ’আমি খাগড়াছড়ি ডিসি হিসেবে গত ২০১৪ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছি । দায়িত্ব পালনকালে দেখেছি, সপ্তাহে ৭/৮জন বিদেশি আসতেন’ । তবে আমার সময়ে ইউরোপের লোকজনই বেশি আসতে দেখেছি ।রাংগামাটি জেলা প্রশাসক মোঃ শামসুল আরেফিন জানান, ’আমি এখানে নতুন এসেছি । দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখেছি, যে কজন বিদেশি এসেছে তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে অনুমতি নিয়ে এসেছে ।
যেভাবে যায় বিদেশিরাঃ সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, কোন বিদেশি নাগরিককে খাগড়াছড়ি-রাংগামাটি ও বান্দরবান যেতে হলে ৭২ঘন্টা আগে জেলা প্রশাসককে জানানোর নিয়ম রয়েছে । জেলা প্রশাসককে জানানোর পর সেটি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অবহিত করেন জেলা প্রশাসক ।
এদিকে বিদেশি পর্যটকদের পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পূর্বানুমতির নির্দেশনা তুলে নিলেও নির্দেশনার অন্যান্য ধারা বহাল রয়েছে বলে জানা গেছে । ওই সভায় গৃহীত উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলো ছিলো বিগত ১০বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউএনডিপি’র কর্তৃক ১৬০মিলিয়ন মার্কিন ডলারের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও ফলাফল প্রেরনের জন্য অনুরোধ করা হয় । শান্তিচুক্তি বিরোধী স্বশস্ত্র সংগঠন এবং স্থানীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্র“প কর্তৃক চাদাবাজি, খুন, অপহরন, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র চোরাচালান রোধকল্পে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসারের সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । কোন আইনগত ভিত্তি না থাকায় সিএইচটি কমিশনের নাম সংশোধন করে ’কমিশন’ শব্দটি বাদ রেখে অন্য কোন নাম রাখার বিষয়ে অনুরোধ করা হয় । কুটনৈতিকগন ছাড়া সাধারন বিদেশি নাগরিকগন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমন করতে চাইলে অন্ততঃ একমাস পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে অনুমতি জন্য আবেদন করবেন । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার ইতিবাচক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অনুমতি প্রদান করবে । অনুমতি প্রাপ্ত বিদেশি নাগরিকগন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক/পুলিশ সুপারের নিকট তাদের উপস্থিতি/ভ্রমনসূচি দাখিল সাপেক্ষে ভ্রমন করবেন । কুটনৈতিকগন পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে অনুমতি গ্রহন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমন করবেন । কোন দেশি-বিদেশি ব্যক্তি/পার্বত্যাঞ্চলে আদিবাসীদের সাথে সাক্ষাত কিংবা বৈঠক করতে চাইলে স্থানীয় প্রশাসন এবং সেনাবাহিনী/বিজিবি’র উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে । পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক আইন-শৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ২৪পদাতিক ডিভিশনের চট্্রগাম জিওসি সাথে পারষ্পরিক সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ দায়িত্ব পালন করবে । ভারত ও বাংলাদেশের সাথে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের ৪৭৯কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে ইতিমধ্যে গৃহীত/বাস্তবায়িত প্রকল্পসমূহের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনাসহ আবশ্যকীয় স্থাপনা নির্মানের প্রস্তাব বিজিবি প্রেরন করবে । পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্যমান চেকপোষ্ট গুলোকে শক্তিশালী করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে ্ পার্বত্য চট্টগ্রামে পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে কর্মরত শান্তিবাহিনীর সাবেক সদস্যদের ৩জেলা থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলীর সুপারিশ করা হয়েছে । এসব নিদের্শনার একটি বাদে আর বাকিগুলো বহাল রইলো ।