দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মার্চ: চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি; যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার দুই গুণেরও বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি।জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ঝুঁকিহীন এবং বেশি মুনাফার কারণে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রি সংক্রান্ত জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্র“য়ারি) সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ১৮ হাজার ২৮৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ হাজার ২২৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বেশি। এ বছর নিট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।জানা যায়, চলিত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ১২৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৮৯ কোটি ৭২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে আট মাসে মোট বিনিয়োগ হয়েছে ৩ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এরমধ্যে মূল্য পরিশোধ বাবদ ৮ হাজার ২৫০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ১০৮ কোটি ২ লাখ টাকা।
সঞ্চয়পত্র বিক্রির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে ফেব্র“য়ারিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি ২০ লাখ টাকা। ফেব্র“য়ারি মাসে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৯২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৮২০ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে বিনিয়োগ হয়েছে ৫৩১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মূল্য পরিশোধ বাবদ ১০৪৪ কোটি ১১ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর সুদ হিসেবে পরিশোধ করা হয়েছে ৭৩৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর আগের মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ৬০৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে এতো বেশি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা থাকেনি।
ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তার আগে নভেম্বর, অক্টোবর, সেপ্টেম্বর, আগস্ট ও জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ আসে যথাক্রমে ১ হাজার ৪৬৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে।২০০৫ সালের ১১ জুন থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলের টাকা ৫ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু কর কমিশন কর্তৃক স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল ছাড়া গ্রাচুইটি ফান্ডের অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুযোগ ছিল না।