দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ মার্চ: মগুরা সদর উপজেলার মঘিরঢাল এলাকায় শনিবার রাতে ট্রাকে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। এরা হলেন- রওশন আলী (৩৫) ও শাকিল আহমেদ (২৮), মো. মতিন (৩০)। তাদের বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার মালিক গ্রামে।দগ্ধ অন্যরা হলেন- আরব আলী (২৫), ফারুক আহমেদ (৪০), নাজমুল হোসেন (২৫), ইলিয়াস হোসেন (৩৫), ইয়াদুল ইসলাম (৩৮) ও ট্রাকচালক ইমরান আলী (৫০)।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে জাতীয় প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘মাগুরায় ট্রাকে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে শনিবার রাত সোয়া ২টার দিকে রওশন আলী মারা যান। এরপর রোববার বেলা ১২টার সময় শাকিল আহমেদ নামের আরেক শ্রমিক মারা গেছেন। বিকেলে মো. মতিনের মৃত্যু হয়।তিনি বলেন, দগ্ধ শাকিলের শ্বাসনালীসহ শরীরের ৬৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। চেষ্টা করেই তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তাছাড়া বাকি ছয় জনের অবস্থাও আশাঙ্কাজনক।
শনিবার রাত ৮টার দিকে মাগুরা জেলা সদরের মাঘিরঢাল এলাকায় মাগুরা-যশোর মহাসড়কে বালুর ট্রাকে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারে দুর্বৃত্তরা। এসময় ওই ট্রাকে থাকা ৯ জন শ্রমিক দগ্ধ হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বাংলামেইলকে জানান, জেলা সদরের মাঘিরঢাল এলাকায় মাগুরা-যশোর মহাসড়কে বালুর ট্রাকে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে ৯ শ্রমিক দগ্ধ হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।অবরোধকারীদের পেট্রোল বোমায় মতিনের শরীরের ৫৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল বলে বার্ন ইউনিটের আবাসিক চিকিৎসক পার্থ শংকর পাল জানিয়েছেন।
মতিনের আগে বেলা ১২টার দিকে ওই ঘটনায় দগ্ধ শাকিল আহমেদ মারা যান বলে এই চিকিৎসক জানান।ার শরীরের ৬৫ শতাংশের মতো দগ্ধ হয়েছিল বলে জানান তিনি।মাগুরা থেকে দগ্ধ নয়জনকে মধ্যরাতে ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে তাদের মধ্যে রওশন আলী বিশ্বাসকে (৩৫) মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় বলে চিকিৎসক পার্থ জানান।আগুনে রওশনের শরীরের ৯০ শতাংশের মতো পুড়ে গিয়েছিল। মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আরো তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান তিনি।তাদের মধ্যে ইয়াদুলের শরীরের ৮৮ শতাংশ, ইমরান হোসেনের ৫০ শতাংশ ও ইলিয়াস বিশ্বাসের শরীরের ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে।এদের বাইরে দগ্ধ নাজমুল হোসেন, ফারুক ও আরব আলীর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয় বলে পার্থ জানিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধের মধ্যে শনিবার রাতে মাগুরা সদর উপজেলার মঘীর ঢাল এলাকায় এই পেট্রোল বোমা হামলার শিকার হন শ্রমিকরা।
মাগুরার সহকারী পুলিশ সুপার সুদর্শন কুমার রায় জানান, মাগুরার শালিখার আড়পাড়া এলাকায় বালু নামিয়ে শ্রমিকরা ট্রাকে করে বাড়ি ফিরছিলেন। মঘির ঢাল এলাকায় পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়।স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ৫ জানুয়ারি অবরোধের ডাক দেওয়ার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ ও হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।নাশকতার এসব ঘটনায় ১২৮ জনের মতো প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।
এদিকে, হরতাল অবরোধ দিয়ে জ্বালাওপোড়াও আর নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। গশনিবার মাগুরার মঘিরঢালে ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় দুর্বৃত্তরা চিহ্নিত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। রোববার বিকেল ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে রোগীদের দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী একথা বলেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আবারো হতভাগ্য মানুষগুলোর মুখ দেখলাম। ভেবেছিলাম সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তারা (বিএনপি) হরতালের নামে জ্বালাওপোড়াও করে, খোলা ট্রাকে পেট্রোলবোমা মারে। কোনো নিরীহ শ্রমিক হয়তো কাজ থেকে ফিরছে, তারাও রক্ষা পাচ্ছেন না। তাদের আক্রোশে মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ মারা গেলেন। এগুলোর জন্য জনগণের কাছে বিএনপিকে জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, খালেদাকে বলছি, হরতাল অবোরোধের নামে এসব বন্ধ করুন। হরতাল অবরোধ দিয়ে জ্বালাওপোড়াও আর নির্বাচন একসঙ্গে হতে পারে না।অন্যদিকে, চারদিন আগে চাঁদপুরের চান্দ্রা চৌরাস্তায় দুর্বৃত্তের পেট্রোল বোমায় দগ্ধ আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে শরীফ উদ্দিনের (৪০) মৃত্যু হয় বলে জানান হাসপাতাল ফাঁড়ি পুলিশের পরিদর্শক মোজাম্মেল হক।বিএনপি জোটের হরতাল চলাকালে গত বুধবার রাতে চাঁদপুরের চান্দ্রা চৌরাস্তায় ট্রাকে ছোড়া দুর্বৃত্তের পেট্রোল বোমায় ওইদিনই মৃত্যু হয় চালকের।এ নিয়ে ওই হামলায় দুজনের মৃত্যু হলো।পুলিশ পরিদর্শক মোজাম্মেল হক জানান, আগুনে শরীফের ৮৮ শতাংশ পুড়ে গেছে।ওই ঘটনায় দগ্ধ খোরশেদ ও রুবেল নামে আরো দুজন ভর্তি রয়েছেন এ হাসপাতালে। তাদের শরীরের যথাক্রমে পঁয়ত্রিশ ও পঁচিশ শতাংশ পুড়ে যায় বলে জানান মোজাম্মেল।ঘটনার পর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. আমির জাফর জানিয়েছিলেন, চট্টগ্রাম থেকে কাগজ নিয়ে যশোরের দিকে যাওয়ার পথে রাত ১২টার দিকে চান্দ্রা চৌরাস্তা এলাকায় অবরোধকারীরা পেট্রোল বোমা ছুড়লে ট্রাকের সামনের অংশে আগুন ধরে যায় এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান চালক জাহাঙ্গীর। এতে দগ্ধ হন অপর তিনজন।