555555

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ মার্চ: ড্যান্ডি ডায়িংয়ের ৪৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিবাদী করার পর তার ঠিকানায় আদালতের সমন পাঠানো হয়েছে। খালেদার সঙ্গে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়েও এ মামলায় বিবাদী। সোনালী ব্যাংকের অন্যতম আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতের বিচারক ফাতেমা ফেরদৌসের স্বাক্ষরিত সমন রোববার খালেদা জিয়াসহ নতুন বিবাদীদের ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।সচরাচর বিবাদীর বাড়ির ঠিকানায় সমন পাঠানো হলেও সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা খালেদা জিয়া গত আড়াই মাস ধরে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন।আগামী ১২ এপ্রিল এ মামলায় বিচার্য বিষয় নির্ধারণের (ইস্যু গঠন) দিন রয়েছে।

ড্যান্ডি ডায়িং ঋণখেলাপি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে আগামী ১২ এপ্রিল হাজির হতে আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদেরকে স্বশরীরে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হতে হবে।সোনালী ব্যাংকের দায়ের করা ৪৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের এ মামলাটির আসামি ছিলেন কোকো। তিনি মারা যাওয়ায় গত ১৬ মার্চ আদালত তার মা খালেদা জিয়া এবং স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে বিবাদীভূক্ত করেন।আগামী ১২এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশ দাখিল ও ইস্যু (বিচার্য বিষয়) গঠনের দিন ধার্য রয়েছে। বাদীপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে রোববার (২২ মার্চ) ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক রোকসানা আক্তার হ্যাপি মামলাটিতে কোকোর স্থলে ওইদিনই আদালতে হাজির হতে চারজনের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন সমন জারির আবেদন জানান। তিনিসহ বাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বেগম ও বিবাদীপক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবাহ শুনানিতে অংশ নেন।এদিকে আদালত শেষবারের মতো আসামিপক্ষকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়ে বলেছেন, হাইকোর্টের আদেশ দাখিল করা না হলে ওইদিন ইস্যু গঠন করা হবে।

গত ৮ মার্চ খালেদাসহ অন্যদের বিবাদীভূক্ত করার আবেদন জানিয়েছিলেন সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি আবেদনে বলেন, আরাফাত রহমান কোকো এ মামলার বিবাদী। তিনি মারা যাওয়ায় খেলাপি ঋণ দেওয়ানি কর্মবিধি আইনের ২২নং আদেশের নিয়ম ৪ অনুসারে তার সম্পদের ওয়ারিশরা বিবাদীভূক্ত হবেন। তাই তার ওয়ারিশ হিসেবে খালেদা জিয়া, স্ত্রী শর্মিলা রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে বিবাদীভূক্ত করার আবেদন জানানো হয়।আদালত গত ১৬ মার্চ তা মঞ্জুর করেছেন।এদিকে কোনো ছেলে না থাকায় বড় ভাই তারেক রহমানও কোকোর সম্পদের ওয়ারিশ। তবে তারেক রহমান এ মামলায় আগে থেকেই বিবাদী হওয়ায় তাকে নতুন করে বিবাদীভূক্ত করার আবেদন জানানো হয়নি।২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ঢাকার প্রথম অর্থঋণ আদালতে মামলাটি করেন সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় শাখার সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। ৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করা হয়।পরদিন ৩ অক্টোবর মামলাটি মধ্যস্থতা করার জন্য অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামকে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেন বিচারক। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোনো মধ্যস্থতা না হওয়ায় বিচারক মামলাটিতে ইস্যু গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু বিবাদীপক্ষে এ মামলাটির কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। ১২ এপ্রিল হাইকোর্টের আদেশ দাখিল ও ইস্যু গঠনের দিন ধার্য রয়েছে বলে জানান বিবাদীপক্ষের আইনজীবী জাহেদুল ইসলাম কোয়েল।জাহেদুল ইসলাম কোয়েল বলেন, ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত মামলার বিষয়বস্তু হলে ব্যাংকের ম্যানেজার মধ্যস্থতা করতে পারেন। কিন্তু ৫ কোটি টাকার উর্দ্ধে হলে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান/ম্যানেজিং ডাইরেক্টর পর্যায়ের কাউকে মধ্যস্থতায় থাকতে হবে।এ মামলায় ব্যাংকের পক্ষে তেমন কোনো কর্মকর্তা উপস্থিত থাকেন না। এ বিষয়টিসহ অন্যান্য বিষয়ে মামলার কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।এ মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন, ড্যান্ডি ডায়িং লি.,প্রয়াত সাঈদ এস্কাদরের ছেলে শামস এস্কান্দার ও সাফিন এস্কান্দার, মেয়ে সুমাইয়া এস্কান্দার, স্ত্রী বেগম নাসরিন আহমেদ, তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মামুনের স্ত্রী শাহীনা ইয়াসমিন, কাজী গালিব আহমেদ, শামসুন নাহার ও মাসুদ হাসান।মামলার ১০ নম্বর বিবাদী মোজাফফর আহমেদ মারা যাওয়ায় তার স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ছেলে মাসুদ হাসানকে এ মামলায় বিবাদীভূক্ত করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, বিবাদীরা ড্যান্ডি ডাইংয়ের পক্ষে ১৯৯৩ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি সোনালী ব্যাংকে ঋণের জন্য আবেদন করেন। ওই বছরের ৯ মে সোনালী ব্যাংক বিবাদীদের আবেদনকৃত ঋণ মঞ্জুর করে।২০০১ সালের ১৬ অক্টোবর বিবাদীদের আবেদনক্রমে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সুদ মওকুফ করেন। এরপর ঋণ পুন:তফসিলিকরণও করা হয়।কিন্তু বিবাদীরা ঋণ পরিশোধ না করে বারবার কালক্ষেপণ করতে থাকেন।মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধের জন্য চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হলেও বিবাদীরা কোনো অর্থ প্রদান করেননি।আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম জানান, অর্থঋণের মামলায় কোনো বিবাদী মারা গেলে তার সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের বিবাদী হিসাবে স্থলাভিষিক্ত করার নিয়ম রয়েছে।সেই বিধান অনুযায়ী কোকোর জায়গায় তার মা খালেদা জিয়া, স্ত্রী শার্মিলা রহমান সিঁথি ও তার দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমানকে বিবাদী করার আবেদন করেছিলেন তারা।গত জানুয়ারিতে কোকোর মৃত্যুর পর দেশে এলেও দাফন শেষে মেয়েদের নিয়ে মালয়েশিয়া ফিরে যান শার্মিলা রহমান। মুদ্রাপাচার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত কোকো গত ছয় বছরের বেশি সময় ধরে পরিবার নিয়ে সেখানেই থাকছিলেন। ড্যান্ডি ডায়িং মামলার ১০ নম্বর বিবাদী মোজাফফর আহমেদের মৃত্যুর পরও তার স্ত্রী শামসুন্নাহার ও ছেলে মাসুদ হাসানকেও বিবাদী করেছিল সোনালী ব্যাংক।

৪৫ কোটি ৫৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৫ টাকা ঋণ খেলাপের অভিযোগে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম অর্থ ঋণ আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন- ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেড, খালেদার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদার ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের ছেলে শামস এস্কান্দার, সাফিন এস্কান্দার, মেয়ে সুমাইয়া এস্কান্দার, স্ত্রী নাসরিন আহমেদ, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, তার স্ত্রী শাহিনা বেগম ও কাজী গালিব অহমেদ।মামলার আর্জিতে বলা হয়, ১৯৯২ সালে তিন কোটি টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করে ড্যান্ডি ডায়িং লিমিটেড।১৯৯৩ সালের ৫ মে সোনালী ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ঋণ নেন বিবাদীরা। এরপর ১৯৯৬ সালে সাঈদ এস্কান্দারের আবেদনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আবার ঋণ মঞ্জুর করে।২০১০ সালের ৪ এপ্রিল ড্যান্ডি ডায়িংকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। সোনালী ব্যাংক বলছে, ড্যান্ডি ডায়িং খেলাপি হয়ে পড়লে কিস্তি পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।এর আগে ২০০১ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানটির ১২ কোটি ১৬ লাখ টাকার সমপরিমাণ ঋণের সুদ মওকুফ করেছিল।