দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ মার্চ: বিএনপির ‘নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। তিনি আবারও দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। তাঁকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ কামনা করেন তিনি।রোববার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে হাসিনা আহমেদ বলেন,আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে। কাজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তাঁকে জনসমক্ষে হাজির করা। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বারবার বিনীতভাবে আবেদন করছি, উনি যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন তারা যেভাবে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে, ঠিক সেভাবেই যেন আমার স্বামীকে অক্ষত অবস্থায় আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়।হাসিনা আহমেদ বলেন, তিনি শুধু একটি খবরই জানতে চান, তাঁর স্বামী কোথায় আছেন? তিনি স্বামীকে ফিরে পেতে সবার সহায়তা চান।নাগরিক সমাজের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকোমল বড়–য়া তাতে বক্তব্য দেন।
গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে বলে দাবি তাঁর স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ও বিএনপির। অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। আদালতের একটি রুলের পরিপ্রেক্ষিতে তারা আদালতকে জানিয়েছে, সালাহ উদ্দিনের কোনো খোঁজ তাদের কাছে নেই।তিনি বলেন, আমার স্বামীকে ১২ দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়ে গেছে। আমিসহ আমার ছেলে-মেয়েরা এক অসম্ভব অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।আমি বিনীতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারও আবেদন জানাচ্ছি, তিনি যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন- যেভাবে তারা আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে গেছে, অক্ষত অবস্থায় আমার স্বামীকে তারা যেন ফিরিয়ে দেয়। আমাকে মানসিক অস্থিরতা থেকে রেহাই দেন।
ফেব্র“য়ারির শুরু থেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে অবরোধের পাশাপাশি হরতালের ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের খোঁজ না পাওয়ার কথা বলছে তার পরিবার।পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে সালাহ উদ্দিনকে তুলে নেওয়া হয়েছে।তবে সরকারের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তাকে আটক করতে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।স্বামীর খোঁজে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন হাসিনা আহমেদ।স্বামীকে ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন তিনি। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি। তার কোনো খোঁজও পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে আগামী ৮ এপ্রিল হাই কোর্টে আবার শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।
প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে হাসিনা আহমেদ বলেন, ছেলে-মেয়েসহ আমরা এক অসম্ভব অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। কখন সুসংবাদ আসবে- এই প্রতীক্ষায়। ছেলে-মেয়েরা জানতে চায়, কখন তাদের বাবা ফিরে আসবে।আল্লাহর প্রতি আমার অগাধ বিশ্বাস আছে, আমার স্বামীকে তিনি অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সমর্থিত বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও ছিলেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া।অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, শাহ মো. খসরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সহসভাপতি আখতার আহমেদ খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আকরাম হোসেন, প্রয়াত চাষী নজরুল ইসলামের স্ত্রী জ্যোৎস্না চাষী উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন।তাদের দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সৈয়দ ইব্রাহিম আহমেদ কানাডায় ও বড় মেয়ে পারমিজ আহমেদ ইকরা মালয়েশিয়াতে লেখাপড়া করেন। ছোট ছেলে সৈয়দ ইউসুফ আহমেদ ও ছোট মেয়ে ফারিবা আহমেদ রাইদা দেশেই থাকেন।