Jhenidah1

দৈনিকবার্তা-ঝিনাইদহ, ২১ মার্চ: আগামী ২৫ মার্চ ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে৷ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পর পর জেলা সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন৷জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সম্মেলনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে৷

এই সম্মেলনকে ঘিরে সর্বসত্মরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে৷ ইতিমধ্যে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক রঙিন ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে৷ পদপ্রত্যাশী নেতারা দলীয় সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি সম্বলিত ডিজিটাল ব্যানার দিয়ে তৈরি করেছেন বিশাল বিশাল তোরণ৷ সেই সঙ্গে ভবন জুড়ে বিশাল বিশাল আকৃতির ব্যানারে সম্মেলন সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মিছিল-সস্নোগানে মুখরিত হয়ে উঠছে রাজপথ৷ সম্ভাব্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা প্রতিদিন শোডাউন করছেন, স্থাপন করেছেন ক্যাম্প অফিস৷ সেখানে ভিড় করছেন দলীয় কর্মী সর্মথকরা৷

দলীয় সূত্র মতে, ২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ এতে সরাসরি ভোটে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল হাই সভাপতি ও এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন৷ কাউন্সিলের ৬ বছর পর ২০১১ সালে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষিত হয়৷ এদিকে গত ১৯ মার্চ শৈলকুপা উপজেলা কমিটির সম্মেলন হয়েছে৷ কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি৷ অন্যদিকে কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার সম্মেলন কয়েক বছর আগে অনুষ্ঠিত হলেও জেলা কমিটির অনুমোদন লাভ করেনি৷ এছাড়া ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকু-ু এবং কালীগঞ্জ উপজেলায় যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি৷ পৌরসভাগুলোর মধ্যে সদ্য কালীগঞ্জ পৌর কমিটির সম্মেলন হয়েছে৷ ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার সম্মেলন করার আগেই ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে৷ দলীয় কোন্দল থাকায় সবগুলো ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলা কমিটির সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল একটি সূত্র৷ এ অবস্থায় বুধবার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে৷

এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী হচ্ছেন৷ এদের মধ্যে সভাপতি পদে ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই প্রার্থী হচ্ছেন৷ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক আবদুল ওয়াহেদ জোয়ারদার এবং অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক আবেদ আলী তার সাথে প্রতিদ্বন্দি্বতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন- বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ও পৌরমেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, এ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ এবং যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনামুল হক মিলন৷ এ দুটি গুরত্বপূর্ণ পদের যে কোনো একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সফিকুল ইসলাম অপু৷

দলীয় একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলা কমিটির সম্মেলন ঘিরে ঝিনাইদহ-২ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি দূর থেকে কলকাঠি নাড়ছেন৷ ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকু-ু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিগুলোর ওপর তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি নুর-এ আলম সিদ্দিকীর বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে৷জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই জানান, ‘সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন৷ নেতাকর্মীদের সমাগম এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বরণ করতে প্রস্তুত জেলা আওয়ামী লীগ৷’ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দুই মেয়াদের মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচন এবং বিরোধী জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবিলায় নেতাকর্মীরা ব্যসত্ম থাকায় যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি৷ তবে এতে সাংগঠনিক কর্মকা-ের কোনো প্রভাব পড়েনি৷ এবারের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দল আরো সুসংগঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘সিলেকশন নয়, ইলেকশনের মধ্য দিয়ে নেতা নির্বাচন করা গেলে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে৷’ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘যাদেরকে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন করলে দল সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, তাদেরকেই নেতা হিসেবে দেখতে চাই৷’

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে৷ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যেমন কর্মী-সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন, তেমনি নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকা- তরান্বিত হবে৷’

এদিকে তৃণমূলসহ উপজেলা ও জেলাপর্যায়ের একাধিক নেতাকর্মী অভিযোগ করেন, দল ক্ষমতায় থাকলে নেতাদের সাংগঠনিক দিকে তেমন খেয়াল থাকে না৷ বিরোধী দলে থাকলে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত থাকে৷ সম্মেলনও ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ তারপরও দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের পাণের দাবি পূরণ হতে যাওয়ায় খুশি তারা৷ ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যৰ নবী নেওয়াজ বলেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন৷