দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ মার্চ: আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ গ্রহণ প্রশ্নে বিএনপি ইতিবাচক মনোভাবে আসলেও এই উপলক্ষে আন্দোলন থামাতে রাজি নন দলের হাইকমান্ড। নির্বাচনে যদি তারা অংশ নেন তবে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম নগরীতে অবরোধ অব্যাহত রেখে শুধু হরতাল শিথিল করার চিন্তাভাবনা আছে দলের। তবে সারাদেশে যথারীতি হরতাল এবং অবরোধ চলমান গতিতে চলবে।শনিবার দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা এ কথা জানান।সূত্র জানায়, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি এখনো। তবে বেগম জিয়া এবং দলের অধিকাংশ নেতাই বিনা চ্যালেঞ্জে এই নির্বাচন ছাড়তে রাজি নন।দলের হাইকমান্ড মনে করেন, আন্দোলন এবং নির্বাচন সমানতালে চলবে। নির্বাচনে নামলে আগামী ২৬ মার্চের পর রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রাম শহরের হরতাল তুলে নেয়া হবে। কারণ তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিতব্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ মার্চ। মনোনয়নপত্র বাছাই ১ ও ২ এপ্রিল। প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ এপ্রিল। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে থেকে হরতাল না রাখার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। প্রার্থী নিয়েও দলে আলোচনা চলছে।
বিএনপির গুলশান অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন,দলীয় চেয়ারপার্সন যে কোন পরিস্থিতিতে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। তিনি মনে করেন, আন্দোলন থেকে ফিরে গেলে তা হবে ’ভুল’ সিদ্ধান্ত।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। আজ দেশের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বেশি ভাবতে হবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার ধারণা বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তবে ঢাকা এবং চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনী এলাকায় আন্দোলন শিথিল হতে পারে। তবে সারাদেশের আন্দোলন এই নির্বাচনের ইস্যুতে বন্ধ হওয়ার কোন কারণ দেখি না।স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সিটি নির্বাচন আর আন্দোলন দুটি পৃথক বিষয়। আন্দোলন তার লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত চলবে।এদিকে সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক-এমন খবরে দলে লবিং চলছে পুরোদমে। গুলশানে অবস্থানরত নেতা ও কর্মকর্তাদের ফোন করছেন অনেকে। আবার যে সব সিনিয়র নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন তাদের কাছেও ধর্না দিচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
ইতিমধ্যেই ঢাকা সিটির উত্তরে আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং দক্ষিণে দলের ৬ বছর কারাগারে বন্দি থাকা নেতা সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুন নবি খান সোহেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখের পক্ষে লবিং চলছে বলে জানা গেছে।সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে আসন্ন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তা করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি শুক্রবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত্ শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি চেয়াপারসন আমাদের জানিয়েছেন- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা পেলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তার দল ইতিবাচক চিন্তা করবে।’নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের রূপরেখায় পরিবর্তন আসতে পারে বলেও জানান তিনি। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সিনিয়র সাংবাদিক ড. মাহফুজ উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এসএ ইসলাম, অধ্যাপক মামুন হোসেন, তাহমিনা আক্তার পপি, বোরহান উদ্দিন, ওবায়দুল ইসলাম ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইউম উপস্থিত ছিলেন।
তিন সিটি করপোরেশন নিবার্চন নিয়ে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে এখনো সিন্ধান্ত নেয়নি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট। বিএনপি নেতারা বলছেন, আপাতত সরকার বিরোধী আন্দোলন এগিয়ে নেয়ার দিকেই বেশী মনোযোগ তারা । তবে প্রার্থী দিলে জয়ের আশা করছেন তারা।সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে পর্যালোচনা চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলে। একদিকে আন্দোলন, অন্যদিকে গুরুত্বপূর্ণ তিন সিটি নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলন থেকে সরে এসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ কিংবা বর্জনের সম্ভাব্য লাভ-ক্ষতি নিয়েই এ পর্যালোচনা। সরকারের তরফে সিটি নির্বাচনের ঘোষণা দেয়ার পর বিএনপি ও জোটের কয়েকজন সিনিয়র নেতা, থিঙ্কট্যাঙ্ক, পেশাজীবীরা কৌশলে নানা মহলের মতামত নিয়েছেন। বিশেষ করে জোর দেয়া হয়েছিল বিএনপি ও জোটের তৃণমূল নেতৃত্বের। তবে মতামতে প্রাধান্য পেয়েছে নেতিবাচক মনোভাব। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিগত স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও অভিজ্ঞতা এবং সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে তারা এ নির্বাচনকে দেখছেন সরকারের ফাঁদ হিসেবে।
ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর বিএনপি ও জোটের একাধিক নেতা এবং সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, শিগগিরই বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান জানানো হবে। সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সুপ্রিম কোর্ট বারের নবনির্বাচিত সভাপতি ও তার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ডিসিসি ও সিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে নীতি-নির্ধারকরা দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত হলে তা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নেবে বিএনপি। এদিকে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, আন্দোলন থেকে সরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। বিএনপি এখন জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। চলমান আন্দোলনের যৌক্তিক পরিণতির মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন হলে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে শতভাগ বিজয়েও পরিস্থিতি উত্তরণের ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই।
তারা বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন চলমান আন্দোলন সরকারের নানামুখী প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আড়াই মাস অতিক্রম করেছে। জনগণের সমর্থন আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এখন তিনটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আন্দোলন থেকে সরে এলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে জাতীয় নির্বাচনের দাবিটি। তারা মনে করে, সরকার বিরোধী চলমান আন্দোলনকে দমন করতে সারা দেশে শ’ শ’ নেতাকর্মীকে গুম, খুন করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাবন্দি। ঘরছাড়া লাখো নেতাকর্মী-সমর্থক। এই অবস্থায় নেতাকর্মীদের রক্তের ওপর পা রেখে সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। অঙ্গ ও সহযোগী দলের নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দাবি করেছে বিরোধী জোটসহ নানা মহল। কিন্তু সরকার সেটাকে পাত্তা দেয়নি। এখন বিরোধী দল যখন আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণতির দিকে তখনই সিটি নির্বাচনের মাধ্যমে দৃষ্টি ফেরাতে চাইছে সরকার। এখানে বিএনপির অংশগ্রহণ হবে সরকারি কৌশলের বিজয়। নেতারা বলেন, নির্বাচনের পথে হাঁটলেও সরকার বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেবার মতো পরিবেশ দেবে না। কেবল তৃণমূল বা অঙ্গসংগঠনের নেতারাই নয়, খোদ বিএনপি নীতি-নির্ধারক ফোরামের সদস্যরাও এ নির্বাচনকে ইতিবাচক বিবেচনা করছে না। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে। শীর্ষ থেকে তৃণমূল সবার বিরুদ্ধেই মামলা। শ’ শ‘ নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। চোখে দেখা না গেলেও সারা দেশ আজ বিএনপি নেতাকর্মীর রক্তের ওপর ভাসছে।
এ অবস্থার মধ্যে বিএনপি নির্বাচনে যেতে পারে না। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, আমরা আন্দোলনে আছি, আমাদের নেতা- নেত্রীরা কারাবন্দি। এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা শিগগিরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করবো। ওদিকে বিএনপি ও জোটের কয়েকটি সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ আন্দোলনের একটি কৌশল হতে পারে। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের কারণে নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া। অনেকেই বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তানের মুখ পর্যন্ত দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না। সিনিয়র নেতাদের বড় অংশটিই আত্মগোপনে বা নিরাপদ অবস্থানে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীরা গ্রেপ্তার ও হতাহত হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচনে গেলে পাল্টে যেতে পারে পরিবেশ। তারা আরও বলেছেন, নির্বাচন করতে চাইলে সরকারকে প্রকাশ্য রাজনীতি ও জনসংযোগের সুযোগ দিতে হবে। আর এ সুযোগে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা আবার মানুষের সঙ্গে মিশতে এবং প্রকাশ্যে কাজ করতে পারবে। তারা মনে করেন, এমননিতেই রাজধানী ও চট্টগ্রাম মহানগরে আন্দোলন জোরদার করা যায়নি। ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এছাড়া সরকারকে ফের বুঝিয়ে দেয়া যাবে তাদের জনসমর্থন শূন্যের কোটায়। আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার সুযোগ করে দেয়া ঠিক হবে না। ভিন্ন ফরমেটে আন্দোলন ধরে রেখে তিন সিটি নির্বাচনের ফল অনুকূলে আনতে পারলে সরকারের ওপর নতুন করে চাপ বাড়বে। তবে দলের আরেকটি অংশ ও তৃণমূল নেতৃত্ব এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করছেন।
তাদের মতে, আগের পরিস্থিতি ও এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। তখন জনসমর্থনের বিষয়টি সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পরিষ্কার করার বিষয় ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে, সরকার বিষয়টিকে পাত্তাই দেয়নি। যেখানে ৮টি সিটি করপোরেশনের জনমতকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি সেখানে তিনটি নির্বাচনে জিতলেও সরকার আমলে নেবে না। তারা বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিএনপি দলীয় মেয়র ছিল। কিন্তু সেটা না সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে পেরেছে না বিরোধী দলের সহায়ক হয়েছে। এছাড়া বর্তমান সরকার অবস্থা বুঝে নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কৌশল পরিবর্তন করতে করতে দ্বিধা করে না। তারা জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে অনির্বাচিত সরকারের দোহাই দিলেও ঢাকা মহানগরে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে সরিয়ে প্রশাসক বসিয়েছে। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতার কাছে প্রশ্ন ছিল- বিগত স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় নেতা, বিকল্প প্রার্থী এমনকি আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছিল ২০ দল। এবার সে পথে হাঁটবে কিনা। জবাবে নেতারা বলেছেন, হায়ার করা নেতা কিংবা আওয়ামী লীগের গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে বিজয়ী করেছে বিএনপি। কিন্তু পরবর্তী অভিজ্ঞতা সুখকর হয়নি। সেখানে রাজনৈতিকভাবে মোটেই লাভবান হয়নি বিএনপি। এছাড়া গ্রহণযোগ্য বিকল্প প্রার্থীও নেই। তারা বলেন, এক বছর আগের পরিস্থিতিতে হলে সিদ্ধান্ত ইতিবাচকই হতো।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করে শিগগিরই ২০ দল নিজেদের অবস্থান জানাবে। তবে তারা প্রশ্ন তোলে বলেন, নির্বাচনে অংশ নিয়ে কি লাভ? বর্তমান সরকার জনগণের ভোটের কোন মূল্য দিচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনে যেমন দেয়নি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে যেসব সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করলেও বিগত দিনগুলোতে মেয়ররা তাদের প্রাপ্য মর্যাদা পাননি। বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়েছেন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থ বরাদ্দ ও উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদনে। সবচেয়ে বিবেচনার বিষয় হচ্ছে, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের একের পর এক কারাবন্দি ও বহিষ্কার করা হচ্ছে। তাহলে এতে ত্যাগ স্বীকার ও পরিম্রম করে প্রার্থীরা কিসের আশায়, কোন ভরসায় নির্বাচনে যাবে? এখন তো অনেকে প্রার্থী হবারই সাহস দেখাচ্ছে না। এদিকে ২০ দলের মুখপাত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল¬াহ বুলু গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলেছেন, বর্তমান সরকার গণতন্ত্র মানে না, গণরায়ের পরোয়া করে না। নির্বাচনের মাধ্যমে দেয়া জনগণের রায় অগ্রাহ্য করার জন্য সরকার গাজীপুর, সিলেট ও রাজশাহীসহ অসংখ্য সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র এবং উপজেলা চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আটক করছে। রিমান্ডের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য করে তাদের স্থলে দলীয় লোকদের বসানো শুরু করেছে।
এদিকে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে দলের মধ্যে দুই মত থাকার কথা জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছেন, শিগগিরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।শুক্রবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, বিএনপি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচনে যাবে কি যাবে না, কী করা উচিৎ- তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শিগগিরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গত বুধবার রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। ওই তিন করপোরেশনে ভোট হবে আগামী ২৮ এপ্রিল, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে ২৯ মার্চের মধ্যে।দীর্ঘ আট বছর ধরে নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকা ঢাকা সিটি করপোরেশন এখন দুই ভাগ হলেও ২০০২ সালে অবিভক্ত সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। আর চট্টগ্রামের মেয়রের দায়িত্বে থাকা এম মনজুর আলমও ২০১০ সালের নির্বাচন পার হয়েছিলেন বিএনপির সমর্থন নিয়ে। মনজুর আলম নিজে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী হলেও দলের চেয়ারপার্সনের সিদ্ধান্তের’ অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন। তবে বিএনপিপন্থি কাউন্সিলরদের অনেকেই প্রয়োজনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোটে দাঁড়ানোর ইংগিত দিয়েছেন ইতোমধ্যে।
ঢাকার পরিস্থিতিও মোটামুটি একইরকম। সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেমে হরতাল-অবরোধে থাকলেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এই ভোটে অংশ নেওয়ার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেননি দলের কোনো নেতা।শুক্রবার সকালে বিএনপির ‘নিখোঁজ’ যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের গুলশানের বাসায় গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সহানুভূতি জানানোর পর নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাহবুবুর রহমান।তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে দলে দুই রকমের ভাবনা-চিন্তা চলছে। তৃণমূল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। একপক্ষ বলছেন, দলের ব্যাপক জনসমর্থন রয়েছে। এই নির্বাচনে সরকারকে ফাঁকা মাঠে ছেড়ে দেওয়া উচিৎ নয়। আরেক পক্ষ বলছেন- কীভাবে নির্বাচন হবে? দলের প্রার্থী যারা হবে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। নেতা-কর্মীরা অনেকেই জেলে আছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে কীভাবে নির্বাচনে আমরা অংশ নেব?নিজের ব্যক্তিগত অভিমত তুলে ধরে সাবেক এই সেনা প্রধান বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি আজ সৃষ্টি হয়েছে, আজ আমাদের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বেশি ভাবতে হবে। দশম যে সংসদ চলছে, তা একটি প্রশ্নবিদ্ধ সংসদ। তাই দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে এখন গুরুত্ব দিতে হবে।তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলে যে মত শক্তিশালী হবে সে অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত হবে বলে প্রত্যাশা করছেন মাহবুবুর রহমান।আবারও মেয়র হওয়ার লড়াইয়ে নামার আগ্রহ থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) মেয়র মনজুর আলম।দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আসা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন তা দেখার অপেক্ষায় তিনি।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাড়া পেলেই নির্বাচনের ময়দানে নামার ইঙ্গিত দিয়েছেন তার এই উপদেষ্টা।