দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ মার্চ:অজয় রায়মুক্তমনা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ রায়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারিক ফারসীম মান্নান নামের বুয়েটের এক শিক্ষক জড়িত বলে সন্দেহ করছেন বাবা অজয় রায়। শিবিরের কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতাসহ হত্যাকাণ্ডের দিনের নিজ অনুসন্ধানের সার্বিক চিত্র গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তুলে ধরেছেন বলে দাবি করেন তিনি। এর পরও এক মাসে কোনো অগ্রগতি না থাকায় তিনি হতাশা প্রকাশ করেন।শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে নাগরিক সমাবেশে এ কথা বলেন অভিজিতের বাবা।২৬ ফেব্র“য়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বই প্রকাশনা উৎসবে অভিজিৎ ও তাঁর স্ত্রীর বিকেল সাড়ে ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত অবস্থান এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নিজ অনুসন্ধান চিত্র তুলে ধরেন অধ্যাপক অজয় রায়।
অজয় রায় বলেন, ফারসীম মান্নানের গতিবিধি ও তাঁর চরিত্র আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে হচ্ছে। যিনি ফেসবুকের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। যাতে ১১ জন অতিথির মধ্যে অনাহূত চার-পাঁচজনের উপস্থিতি ছিল।অনাহূত ব্যক্তিরা শিবিরের উল্লেখ করে অজয় রায় বলেন, তাদের বুয়েটের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই শিক্ষকই ডেকে আলোচনা স্থলে এনেছে বলে অনাহূত ব্যক্তিরা বলেছে।ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে অজয় রায় জানান, উদ্যানে শুদ্ধস্বরের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটা পর্যন্ত অবস্থান করে অভিজিৎ ও স্ত্রী বন্যা। সবশেষে অভিজিৎ বক্তব্য দিয়ে ছায়াবীথি ও অবসর প্রকাশনীর মাঝখানে ত্রিপল বিছানো উন্মুক্ত জায়গায় বসেন তাঁরা।
অভিজিতের বাবা বলেন, এখানে রাত আটটা পর্যন্ত আলোচনা হয়। যেটা ফেসবুকের মাধ্যমে ফারসীম মান্নান আয়োজন করে। জিরো টু ইনফিনিটি ও পাই নামে সংগঠনের লোকজন উপস্থিত ছিল এখানে। যাদের সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংগঠন দুটির সম্পাদক শিবিরের আবদুল্লাহ আল মামুন অনাহূত লোকদের গালাগাল করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।অজয় রায় বলেন,তোমাদের কারা আমন্ত্রণ করেছে?-জানতে চাইলে অনাহূতেরা দাবি করেন, স্যার (ফারসীম মান্নান) তাদের ডেকেছেন। এরপর অভিজিৎকে দেখে তারা সেখান থেকে উঠে চলে যায়।বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে অনুসন্ধান চা)িয়ে এসব তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জানানো হয়েছে বলে জানান অভিজিতের বাবা।কিছুটা হতাশা প্রকাশ করে অজয় রায় বলেন, সিআইডি, গোয়েন্দা বিভাগ ও ডিবিকে সবার নামসহ সার্বিক বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এরপর অনেকদিন, এক মাসের মতো সময় পার হতে যাচ্ছে, দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। এফবিআই ইতিমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করায় তাদের সহায়তা করারও আবেদন জানান অজয় রায়।অভিজিতের বাবা বলেন, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এফবিআই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বের করতে পারবে আশা করি। সেই সঙ্গে তাদের মদদদাতা মৌলবাদী গোষ্ঠীর মুখোশও উন্মোচিত হবে।ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত বাবা বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবার মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। পিতার আগে পুত্রের মৃত্যু ঘটেছে। তাঁর লাশ বহন করা আমার কাছে অত্যন্ত কঠিন। তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। অভিজিতের অনেক কিছু দেওয়ার ছিল, মৌলবাদী শক্তি তাকে বাঁচতে দিল না।অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে নাগরিক কমিটি আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন, খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ডা.সারোয়ার আলী, পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ শুভাকাঙ্খীরা উপস্থিত ছিলেন।