দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ মার্চ,২০১৫: বিদেশি ক্রেতাদের বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের জন্য ন্যায্য দাম দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ৷তিনি বলেন, সবকিছুর জন্যই টাকার প্রয়োজন৷ কারখানা-বিনিয়োগ কোনো কিছুই টাকা ছাড়া সম্ভব না৷ কিন্তু বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উপযুক্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে না৷ রানা প্লাজার ঘটনার পর আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি পোশাকের ওপর অনেক শর্ত দেয়া হয়েছিল৷ আমরা সেসব শর্তের অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়ন করেছি৷ শর্ত বাস্তবায়নে কারখানা ও উত্পাদন ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি উত্পাদিত পণ্যের দাম৷
রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দ্বিতীয় বছরপূর্তিকে সামনে রেখে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত বাংলাদেশ ফ্রেমিং দ্যা ফিউচার’ শীর্ষক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফোয়েল আহমেদ৷বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাস এবং ড্যানিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উচ্চ পর্যায়ের এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷ এতে ড্যানিশ ও বাংলাদেশের বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের ঊধর্্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাসহ ২০০ জনের বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন৷
শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উত্পাদন খরচ বেড়েছে উল্লেখ করে তৈরি পোশাকের ন্যায্য দাম দেয়ার জন্য ক্রেতাদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তোফায়েল ৷মন্ত্রী বলেন, কারখানা চালানোর জন্য টাকা হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ রানা প্লাজার পরে আমাদের কারখানাগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে, তা ধরে রাখতে পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের প্রয়োজন৷ বিনিয়োগ থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ও গুণগত পন্য তৈরি করতে পারবে৷ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকায় ইইউকে ধন্যবাদও জানান তোফায়েল৷
বর্তমানে বাংলাদেশের শ্রমিকদের কোনো অসন্তোষ নেই- এমন দাবি করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের জন্য ২১৯ শতাংশ পর্যন্ত বেতন বাড়িয়েছেন৷ বর্তমানে শ্রমিকরা নিম্নতম মজুরি পাচ্ছেন ৯৭ ডলার করে৷ সরকারের উদ্যোগ ও কর্মপরিবেশের কারণে শ্রমিকদের মধ্যে কোনো অসন্তোষ নেই৷ প্রতিটি কারখানায় শ্রমিক ইউনিয়নে ভোটের মাধ্যমে শ্রমিক নেতা নির্বাচন হচ্ছে৷ এটা আমাদের কথা না৷ আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থা ‘ওয়ার্কার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (ডবি্লউডবি্লউএ) কথা৷ তারা বলেছে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের মধ্যে কোনো ধরনের অসন্তোষ নেই৷ ম্রমিকরা সুন্দর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশে কাজ করছে৷’ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে৷ চলতি অর্থবছরে ৩৩ মিলিয়ন ডলারের ওপরে রফতানি আয় হবে৷ ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের একটি দেশে হয়ে উঠবে৷তিনি বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর আমাদের ওপর বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছিলো৷ আমরা সব শর্ত সফলভাবে পালন করেছি৷ ট্রেড ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ ভোটের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়নের নেতা নির্বাচিত হচ্ছেন৷
তোফায়েল বলেন, ট্রেড ইউনিয়ন করতে আমাদের ওপর বিভিন্ন ধরণের চাপ আসছে৷ অথচ আমেরিকায় সরকারি ক্ষেত্রে মাত্র ৭ শতাংশ এবং বেসরকারিতে ৩৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়ন আছে৷ড্যানিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী মগেন্স জেন্সেন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন৷ এতে বিশেষ অতিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চন্নু৷
জেন্সেন তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ রানা প্লাজার দুর্ঘটনাকে পেছনে ফেলে অনেকদূর এগিয়ে এসেছে৷ বাংলাদেশ সরকার, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় ও আরএমজি সেক্টরের সমন্বয়ে নতুন মান নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা প্রণয়ন হয়ে এবং পারস্পরিক সমঝোতার এক নতুন দ্বারা উন্মেচিত হয়েছে৷ যা বিশ্বের কোথাও আগে দেখা যায়নি৷ এই অবস্থায় বলা যায়, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থই ভবিষ্যতের রূপরেখা বাস্তবায়ন করেছে৷’
সম্মেলনে মাল্টি- স্টেকহোল্ডার সহযোগিতার ভিত্তিতে তৈরি পোশাক শিল্পের বিগত দুই বছরের প্রাপ্তি ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলোর ওপর আলোচনা এবং এ দুই বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে আগামীতে রপ্তানি বাজার সমৃদ্ধ করা যায় পাশাপাশি শিল্পের সুনাম আরো বাড়িয়ে নেয়া যায়- এ বিষয় দুটির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়৷কীভাবে বাংলাদেশের অন্যান্য শিল্পের করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) আরো জোরদার করা যায়- সে বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে৷
ড্যানিশ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী ৩ দিনের সফরে গত ১৭ মার্চ বাংলাদেশে পৌঁছান৷ তার সফরসঙ্গী হিসেবে আরো এসেছেন ড্যানিশ কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্ট সেক্রেটারি এবং ড্যানিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা৷
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ওই বছরের এপ্রিলে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জেনেভায় সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট’ গৃহীত হয়৷ সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্টে শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, ইপিজেড আইন সংশোধন, সাধারণের প্রবেশযোগ্য ডাটাবেজ স্থাপন, রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা যাচাই-বাছাই, ২৩৬টি ট্রেড ইউনিয়নকে রেজিস্ট্রেশন প্রদান, ফায়ার সেফটি ডোর ও শিল্প-কারখানা নির্মাণের সামগ্রী আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান, শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ বিনির্মাণে ও শ্রমিকদের কল্যাণের বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়৷