HatHazari

দৈনিকবার্তা-হাটহাজারী, ১৮মার্চ: বন্দর নগরী চট্টগ্রামের লাগোয়া শানত্মির জনপদ নামে খ্যাতে হাটহাজারী উপজেলার উত্তরের ফরহদাবাদ ইউনিয়নের মন্দাকিনী মেলা ও স্নান হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠেছিল৷ শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, ধমর্ীয় আলোচনা সভা সহ নানা ধরণে কর্মসূচী মহাসমারোহে গতকাল বুধবার (১৮ মার্চ) শানত্মিপূর্নভাবে সম্পন্ন হয়েছে৷ প্রতি বছর মধূ কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ মেলা ও স্নান অনুষ্ঠিত হয়৷ এ উপলৰ্যে স্নান ও মেলা কমিটির পৰ থেকে দু’দিনব্যাপী বিসত্মারিত কর্মসূচী গ্রহন করা হয়৷ কর্মসূচীর মধ্যে ছিল শিব মন্দিরে পুজা, কবি গান, গীতাপাঠ, গীতাপাঠ, কীর্ত্তন, ধমর্ীয় আলোচনা সভা ও স্নান৷ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতিসহ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীর সমাগমে ঘটে৷ এতে করে মেলাস্থল মুখরিত হয় ভক্ত ও পূর্ণাথর্ীদের পরচারণায়৷ তবে মেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় নারী-পূরম্নষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত৷

গত মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) থেকে উপজাতি সম্প্রদায়ের লোকজন মেলাস্থলে উপস্থিত হয়ে পূর্জা অর্চনা শুরম্ন করে৷ সূর্য উদয়ের পর তিথি শুরম্ন হলে পূর্ণার্থীরা মন্দাকিনি খালে স্নান শেষ করে প্রয়াত পিতা মাতা, আত্মীয় স্বজন ও জ্ঞাতি বর্গের উদ্যেশে মন্ত্র পাঠ করে পিন্ড দান করে৷ বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেলাস্থলে লোক সমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ মেলায় যাতে কোন বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য বিপুল সংখ্যক পুলিশ, মহিলা পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়ন ছিল৷

সীতাকুন্ডের পাহাড়ি জলধারা থেকে মন্দাকিনী খাল উত্‍পত্তি হয়ে পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে ফরহাদাবাদ মন্দাকিনী গ্রাম হয়ে হালদা নদীর সাথে মিশেছে৷ মন্দাকিনী খালটি এক স্রোতী৷ সারা বছর এ খাল দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়৷ হালদা নদীর সংযোগস্থলে অমাবস্যা পূর্ণিমা তিথিতে নদীর জোয়ার বৃদ্ধি পেলে আংশিক জোয়ারের পানি খালে ডুকে৷ মধু কৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে এ খালে স্নান করতে পারলে মহাপূর্ণর্্যের অধিকারী হওয়া যায় বলে সনাতনী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস৷

এক সময় এ মেলা পৰকাল ব্যপী অনুষ্ঠিত হত৷ কোন সময় থেকে এ মেলা ও স্নান শুরম্ন হয় তা বর্তমান প্রজম্মের কারো জানা নেই৷ মেলায় সাংসারিক প্রয়োজনের যাবতীয় দ্রব্যাদি পাওয়া যায়৷ সংসারের সাংবার্ষরিক প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতেও অনেক লোকজন মেলায় আসে৷ এক সময় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনও ব্যাপকভাবে সমাবেত হত৷ তখন বৌদ্ধ ভিৰুরা মেলার এক স্থানে বসে পিন্ডচারন করত৷ কালের আর্বতে বৌদ্ধ ভিৰুদের আগমন এখন হারাতে বসেছে৷

এছাড়া জনশ্রম্নতি আছে, ব্রিটিশ সরকার মেলায় লোক সমাগমের অবস্থা অনুধাবন করে মেলার পূর্বদিন, মেলারদিন ও মেলার পরেরদিন অতিরিক্ত ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিল নাজিরহাট শাখা লাইনে৷ তখন যানবাহনের অপ্রতুলতা ছিল৷ বর্তমানে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকজন দ্রম্নত মেলায় আসতে পারে বলে অতিরিক্ত ট্রেন নাজিরহাট শাখা লাইনে মেলার দিন চলাচল করে না৷

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থেকে আগত ষাটদ্ধের্া কমলী ত্রিপুরা এ প্রতিবেদককে জানান, মন্দাকিনী মেলা সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে মিলন মেলা৷ আমরা প্রতি বছর মেলার জন্য অপেৰা করি৷ তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার পূর্ণার্থী মেলায় এসেছেন৷ মেলায় গীতা পাঠ করেন শ্রীমত্‍ উজ্জ্বল ব্রহ্মচারী৷

খাগড়াছড়ির গাড়িটানা থেকে আগত আরেক তরম্নণ পূর্ণার্থী অপরূপা শীল বলেন, মেলার শানত্মিপূর্ন পরিবেশ দেখে আমরা খুশি৷ তবে খালে পানির পরিমান কম থাকায় বিড়ম্বনার স্বীকার হতে হয়েছে পূর্ণার্থীদের৷ তিনি আরো বলেন, যদি কমিটি পূর্ণার্থীদের কথা চিনত্মা করে আরো কিছু কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহন করা যেত তবে পূর্নার্থীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেত৷

মেলা পরিচালনা কমিটি সচিব জয়টু শীল জানান, মেলায় সর্ব সমপ্রদায়ের ভক্তদের ঘটে৷ অসচ্ছল ও দরিদ্রস্থরা তাদের প্রয়াত বাবা-মার উদ্দ্যেশে পিন্ড-দান করতে এ তীর্থে আসেন৷ এ ছাড়া যারা পরকালে তাদের সুখ-শান্তির জন্য সুদুর ধর্মীয় গয়া কাশিতে গিয়ে তীর্থ করতে পারে না সেই সব ভক্তরা এখানে এই তীর্থে স্নান তর্পণ ও পিন্ড-দান করেন৷ এই মহাপুর্ণ্য তীথিতে অগণিত ভক্ত মন্দাকিনী এলাকায় সমাবেত হয় তর্পণ ও স্নান করতে৷

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিপক কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, সনাতন সম্প্রদায়ের অসচ্ছল ও হতদরিদ্ররা যারা পরকালে সুখ শানত্মির জন্য পবিত্র ধমর্ীয় স্থান পাশর্্ববতর্ী দেশ ভারতের গয়া-কাশিতে গিয়ে প্রয়াত মা-বাবার জন্য মহাতীর্থে পিন্ডদান করতে পারেনা বেশিরভাগ এমন হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের পদচারণা হয়েছে মেলায়৷ হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রাদায়ের লোকজন মারা গেলে তাদের রেখে যাওয়া বংশধর গণ ভারতের গয়া-কাশিতে গিয়ে তীর্থ করে প্রয়াতদের জন্য পিন্ড দিতে হয়৷ পিন্ড দিলে মৃতু্যর পরে প্রয়াতরা যদি কোন পাপ স্থানে জন্ম নেয় সেখান থেকে তারা উদ্ধার হয় বলে মানুষের ধারণা৷ কোন দরিদ্র পরিবার যদি ভারতের গয়ায় যাওয়ার সামর্থ না থাকে তাহলে মন্দাকিনী তীর্থে গিয়ে স্নান তর্পন করে পিন্ড দান করলে প্রয়াত পিতা মাতা উদ্ধার হয় বলে ধারণা রয়েছে৷ এমন ধারণা থেকে হাজারো ভক্ত ও পূর্ণার্থীদের প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও মন্দাকিনী মেলা ও বারম্নণী স্নানে করতে আসা৷

এদিকে হাটহাজারী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইসমাইল পিপিএম (বার) এর কাছে আইন-শৃংঙ্খলার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ছাড়াই শানত্মিপূর্ণ ভাবে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও মেলার যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে ৷