দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ মার্চ: সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির (২০১৫-১৬)সেশন নির্বাচনে সভাপতি-সম্পাদকসহ ৯ পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য) প্যানেলে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ (সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ) সমর্থিত প্যানেল সহ-সভাপতিসহ পেয়েছে পাঁচটি পদ।টানা দুইদিন ভোটগ্রহণ শেষে মঙ্গলবার ভোরে গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ সুপ্রিমকোর্টেও দক্ষিণ হলে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন।
সভাপতি পদে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্যানেলের অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এক হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচনে এবারসহ চারবার সভাপতি নির্বাচিত হলেন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন পেয়েছেন এক হাজার ৬২৭ ভোট।এ ছাড়াও সভাপতি পদের অন্য দুইজন প্রার্থীর মধ্যে একজন পেয়েছেন ২৬ ভোট ও ২৩ ভোট।
সম্পাদক পদে এক হাজার ৯৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি সুপ্রিমকোর্ট বারের নির্বাচনে এবারসহ তিন বারের সম্পাদক নির্বাচিত হলেন।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোমতাজ উদ্দিন আহমেদ মেহেদী পেয়েছেন এক হাজার ৫২৯ ভোট।সুপ্রিমকোর্ট বার ২০১৪-১৫ বর্ষের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনেও এ সভাপতি সম্পাদক পদে তারা নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এছাড়াও নির্বাচনে সাতটি সম্পাদকীয় ও সাতটি নির্বাহী সদস্যপদসহ মোট ১৪টি পদের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা পেয়েছেন সিনিয়র সহ সভাপতি একটি, সহসম্পাদক একটি, ট্রেজারার, চারটি সদস্য পদসহ মোট ৯টি পদে বিজয়ী হয়েছেন।অপরদিকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সাদা প্যানেল একটি সহ-সভাপতি, একটি সহ-সম্পাদক, তিনটি সদস্য পদসহ মোট পাঁচটি পদে বিজয়ী হয়েছেন।
এ নির্বাচনে কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদের বিপরীতে ৩১ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। সভাপতি পদের জন্য চারজন, সহ-সভাপতি দুইটি পদের জন্য পাঁচ জন, সেক্রেটারি (সম্পাদক) পদের জন্য দুইজন, ট্রেজারার পদে দুইজন, সহ-সম্পাদকের দুইটি পদের জন্য চার জন এবং সাতটি কার্যনির্বাহী সদস্য পদের বিপরীতে ১৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।সহ-সভাপতি ও সহ-সম্পাদকের পদগুলোতে দুই প্যানেল থেকেই একজন করে নির্বাচিত হয়েছেন।সরকার সমর্থকদের সমন্বয় পরিষদের প্যানেল থেকে আবুল খায়ের সহ-সভাপতি পদে এক হাজার ৭১১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। আর বিএনপি সমর্থক প্রার্থী এএসএম মোক্তার কবির খান এক ৬৯৬ ভোট পেয়ে আরেক সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
সহসম্পাদক পদে সরকার সমর্থক মো. দেলোয়ার মোস্তফা চৌধুরী (মধু) ১৬৪৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সমিতির এই পদে আরেকজন এসেছেন জাতীয়তাবাদী প্যানেল থেকে- মাজেদুল ইসলাম পাটওয়ারি উজ্জ্বল এক ৮০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
জাতীয়তাবাদী প্যানেলের প্রার্থী শওকত আরা বেগম দুলালী এক হাজার ৮৫২ ভোট পেয়ে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন।সদস্য পদে বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থকদের প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন-শামীমা সুলতানা দিপ্তী (২০৪৯), আনোয়ারুল ইসলাম শাহিন (১৮৩৯), মির্জা আল মাহমুদ (১৭৬৫) ও মো. জসিম সরকার (১৬৩৮)।
সমন্বয় পরিষদের প্যানেল থেকে মহিউদ্দিন শামীম (১৭৭৩), একেএম দাউদুর রহমান মিনা (১৬৮৯), অমিত দাশগুপ্ত (১৬৮৩) ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।গত দুটি নির্বাচনেই সমিতির ১৪টি পদের মধ্যে ১৩টিতে জয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা।তার আগের নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা সম্পাদকসহ বেশিরভাগ পদে জয়ী হয়েছিলেন। তখনই মেহেদি নির্বাচিত হয়েছিলেন।সরকার সমর্থক সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ এখনও দুই ভাগে বিভক্ত।
এক পক্ষে ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম আহ্বায়ক ও সুব্রত চৌধুরী সদস্য সচিব হিসাবে রয়েছেন। অন্যপক্ষ চলছে বাসেত মজুমদারের নেতৃত্বে। তবে দুই পক্ষ থেকেই একটি প্যানেল নির্বাচনে লড়ছে।এবারের নির্বাচনে নীল ও সাদা প্যানেলের বাইরে সভাপতি পদে তিনজন, সহ-সভাপতি পদে দুজন, সম্পাদক পদের একজন প্রার্থী হন।সুপ্রিমকোর্ট বারের সুপারিনটেনডেন্ট (তত্ত্বাবধায়ক) নিমেষ চন্দ্র দাস জানান, সুপ্রিকোর্টের মোট চার হাজার তিনশ’ ৫৫ জন আইনজীবী ভোটারের মধ্যে দুই দিন ব্যাপী নির্বাচনে তিন হাজার পাঁচশ’ ২৯ জন ভোট দিয়েছেন। সুপ্রিমকোর্ট বারের শহীদ শফিউর রহমান অডিটোরিয়ামে এবং আশেপাশের বারান্দায় ভোট গ্রহণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্ন করতে ৫৬টি বুথ স্থাপন করা হয়।গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সকাল ১০ টা থেকে মাঝে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলে। এ নির্বাচনের জন্য গত ১৬ ফেব্র“য়ারি তফসিল ঘোষণা করা হয়।