image_1279_318885

দৈনিকবার্তা-সিংগাইর (মানিকগঞ্জ), ১৭ মার্চ: মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর অঞ্চলে ছাই থেকে বের করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যের স্বর্ণ, রৌপ্য, ব্রোঞ্জ ও তামা জাতীয় পদার্থ। পুরাতন এক্সরে ফিল্ম, যা ফেলে দেওয়া হচ্ছে তা থেকে বের হচ্ছে খাটি রৌপ্য। আবার সিরামিক্সের প্লেট-বাটি তৈরিতে ডিজাইনের জন্য যে প্রলেপ দেয়া হয় তাতে ব্যবহার করা হয় কাপড়ের ঝুট, সে ঝুট থেকেও বের হচ্ছে স্বর্ণ। সিংগাইরে এ ব্যবসা বর্তমানে রমরমা।

জানা গেছে, এলাকার প্রায় তিন হাজার মানুষ এ ব্যবসার সাথে জড়িত। অনেকে আবার বাপ-দাদার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই পারিবারিক ব্যবসা দেখা শোনা করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বর্ণের দোকানগুলো থেকে সোনার রূপার গহনা তৈরির পর যে ময়লা বা ডাস্ট পড়ে থাকে তা কিনে বিভিন্নভাবে রিফাইন করে আনা এ সোনা ও রূপা। ভাগ্য সু-প্রসন্ন থাকলে ২০ হাজার টাকায় বেরিয়ে আসতে পাড়ে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকার স্বর্ণ ও রৌপ্য। আবার অনেক সময় ক্ষতিও হয়ে যাচ্ছে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা জানান, দেশের আরও এলাকা যেমন টাঙ্গাইল, পাবনা, চাটমোহর, বগুরা, ধুনোট ও কুষ্টিয়া এলাকার লোকেরাও এই ব্যবসায় জড়িত। সিংগাইর চারিগ্রামের ব্যবসায়ী হলু বেপারী যিনি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বলেন, তিনি যশোর, ঝিনাইদাহ ও খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্বর্ণের দোকান থেকে ওয়েস্টেজ কিনে আনেন। তারপর শুরু হয় তা থেকে স্বর্ণ বের করার প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়াটিও বেশ কঠিন। প্রথমে এটি অত্যন্ত সূক্ষè একটি চালনাতে চালা হয় এরপর ঢেঁকিতে ছাঁটা হয়। তারপর পানি মিশিয়ে মন্ড তৈরি করা হয়। তারপর রোদে শুকানো হয়। তার পর আগুনে তাপ দিলে ময়লা চলে যায এবং বাকি অংশ তরল হয়ে বের হয়ে আসে। তামা, সিসা, স্বর্ণ, রৌপ্য, ও এলুমনিয়াম ও লোহা মিশ্রিত অবস্থায়। এর পর কিছু ক্যামিকেল ব্যবহার করে মাটি দিয়ে বিশেষ চুলা বানিয়ে আবার আগুনে দেয়া হয়। এখান থেকে শুধু স্বর্ণ ও রৌপ্য ব্যতিত অন্যান্য সব ধাতব বস্তু বাষ্প হযে উড়ে যায়। এরপর বিভিন্ন্ ধরনের ক্যামিকেল ব্যবহার করে স্বর্ণ ও রৌপ্য আলাদা করা হয়। পরবর্তীতে এই স্বর্ণ ও রৌপ্য বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় চারিগ্রাম বাজারের বিভিন্ন স্বর্ণের দোকানে। যেখানে ইতোমধ্যে স্বর্ণের ব্যবসা অত্যন্ত জমজমাট হয়ে উঠেছে। কথা বা গল্প নয়, এখানে প্রতিদিন কেজির ওজনে বেচাকেনা হচ্ছে স্বর্ণ ও রৌপ্য।

সংগাইর সদর ইউনিয়নের গোবিন্দল নৈলান এলাকার ব্যবসাযী মোঃ মনির হোসেন বলেন, ব্যবসায় কম বেশি ভালো তবে সমস্যা হচ্ছে সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা না থাকায়। পথে পথে মাস্তান ও পুলিশের চাঁদাবাজিতে আমরা অতিষ্ট। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাল আনার সময় অযথা হয়রানি করে পুলিশ ও চাঁদাবাজরা। ফলে মাঝে মধ্যে হতাশা হয়ে পড়ি। এ ব্যাপারে সরকারি উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের এক পাইকারি স্বর্ণ বিক্রেতা মোঃ হাবু পোদ্দার বলেন, সরকারিভাবে এই ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স প্রদান করা হলে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরেও এই ব্যবসায় বিস্তার লাভ করতে পারে এবং সরকারও উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আয় করতে পারে। যা একদিকে বেকারত্বর অভিশাপ ঘোচাতে এবং অন্যদিকে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তবে এখন এ ব্যবসার দুর্দিন যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।