দৈনিকবার্তা-ঢাকা,১৭ মার্চ: দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আলোচনাকেই আবারও সমাধান হিসেবে মত দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বানের সুরে বিএনপির সাবেক এই নেতা বলেন, পৃথিবীর যেকোনো রাজনৈতিক সমস্যা শুধুমাত্র কথা বলে, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। যদিও এটা স্বীকার করেন না অনেকে।মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন স্মৃতি পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন।
প্রধানমন্ত্রীর কোনো কোনো পরামর্শদাতা বিষয়টি বোঝেন না বলেও ইঙ্গিত করেন বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আশেপাশে যারা আছেন, তারা কীভাবে কথা বলেন!চলমান রাজনৈতিক সংকটের মূল নায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার কাছে হিটলার-মুসোলিনিও ফেল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মানুষের ঘুম হারাম করে ফেলেছে।বদরুদ্দোজা বলেন, পৃথিবীর এমন কোনও দেশ নেই, যে দেশ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে সমর্থন করেছে। ভারতের তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস ওই নির্বাচনকে সমর্থন দিয়ে চরম মূল্য দিয়েছিল। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বলেছিলেন, এটি নিয়মরক্ষার নির্বাচন মাত্র। কিন্তু এখন তিনি সব ভুলে গেছেন।
নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনীতি করতে এসে সালাহ উদ্দিনের মতো একজন নিবেদিত টওাণ হারিয়ে যাবে, তা মানা যায় না। সালাহ উদ্দিনসহ সকল নিখোঁজ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের খুজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না।সালাহ উদ্দিন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তা কোনও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হতে পারে না। দেশে এখন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ কোনও মানুষেরই নিরাপত্তা নেই। শুধু এই অবৈধ সরকারের লোকেদেরই নিরাপত্তা আছেবিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বদরুদ্দোজা বলেন, এটি কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা কেমন ধরনের রাজনীতি! একজন মানুষ পুরোপুরি নিখোঁজ হয়ে যাবে, তার খোঁজ কেউ জানবে না!আওয়ামী লীগের সমালোচনাও করেন বিএনপির সাবেক এই নেতা। তিনি বলেন, যারা মানুষের জন্য রাজনীতি করে আমি তাদের কথা বলবো। আওয়ামী লীগের লোকজন ক্ষমতায় যেতে রাজনীতি করেন।
বিএনপির প্রয়াত নেতা খোন্দকার দেলোয়ারের হোসেনের প্রশংসায় বদরুদ্দোজা বলেন, তার মতো নেতাকে আমরা স্মরণ করবো আজীবন।সংসদ বা যেকোনো আসরের স্পিকারের সঙ্গে ধমক দিয়ে কথা বলতে যারা অভ্যস্ত তাদের সমালোচনাও করেন বদরুদ্দোজা।সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, সালাহ উদ্দিনের একটাই অপরাধ তিনি সত্য কথা বলতেন, গণতন্ত্রের আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন। গণতন্ত্রের আন্দোলন-সংগ্রাম করার কারণেই তিনি নিখোঁজ হয়েছেন।এমাজউদ্দীন আহমেদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, দেশটা আজ কোথায় যাচ্ছে? সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনি আজ নিখোঁজ। এমন একটি স্বাধীন দেশ থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর মত মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। পরম সম্ভাবনাময় নাগরিক চোখে আমি হতাশা লক্ষ্য করছি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই ভিসি বলেন, আমি সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি, সালাহ উদ্দিন আহমেদের ছেলে- মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন তারা কি চায়?প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে আমরা এমন সময় এই পৃথিবী থেকে হারিয়ে ফেলেছি যখন আমাদের এই দেশের জন্য তার অনেক কথা বলার ছিল, অনেক কাজ করার কথা ছিল।তিনি বলেন, সীমাহীন ত্যাগ-তিথিক্ষার মাধ্যমে যে দেশের জন্ম হল সে দেশে আজ এই অবস্থা। যারা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করছেনা তাদের জন্য একবার নয় বারবার মিছিল-মিটিং করতে হবে। তা না হলে আমাদের বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
এসময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের প্রতিবাদে আলোচনা সভা চলাকালীন সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করে প্রতিবাদ জানানো হয়।সংগঠনের সভাপতি খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলুর সভাপতিত্বে এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. খলিলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান, নীলুফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, বিএনপির সহ দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ছড়াকার আবু সালেহ, মুক্তিযোদ্ধা ইমতিয়াজ হোসেন চপল, গণসংহতি দলের সভাপতি এস আল মামুন প্রমুখ।