দৈনিকবার্তা-গোপালগঞ্জ, ১৭ মার্চ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে মানুষ ও শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের পুড়িয়ে মারা হোক আমরা চাই না। দেশের শিশুরা এ ধরনের প্রতিহংসার শিকার হোক তাও আমরা চাই না। ৭৫এর ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যা করার পর এদেশের নতুন প্রজন্ম দুই দশকেরও বেশী সময় ধরে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতভাবে জেনে আসছে।
মঙ্গলবার সাড়ে ১১টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬-তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধী সৌধের পাবলিক প্লাজায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিশুদের ফুটবল ও ক্রিকেট খেলায় উৎসাহিত করছি। শিশুদের মধ্যে প্রতিযোগীতামূলক খেলার ব্যবস্থা করছি। শিশুরা খেলাধুলা করলে মন ভাল থাকবে, শরীর ভাল থাকবে। সেভাবেই আমরা শিশুদের গড়ে তুলতে চাই। এমন একটা বাংলাদেশ হবে সেখানে কোন শিশু না খেয়ে কষ্ঠ পাবে না।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন প্রতিটি শিশু লেখাপড়া করবে, এদেশের নেতৃত্ব দিবে। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে আমরা ঘোষণা করেছি।প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। বিশ্ব দরবারে আমরা পরিচিতি পেয়েছি। আমরা একটি দেশ পেয়েছি। জাতির পিতা শিশুদের খুব ভালোবাসতেন।
শিশুদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট শুধু জাতির পিতার সাথে শিশু রাসেলকেও হত্যা করা হলো। রাসেল টুঙ্গীপাড়ায় এসে ছোট শিশুদের নিয়ে খেলাধুলা করতো। তাদের নিয়ে এক সঙ্গে খেতো। বঙ্গবন্ধুর মতো শিশুদের সে খুব ভালোবাসতো। সেদিন আমরা শুধু জাতির পিতাকে হারায়নি। আমরা জাতির পিতার আদর্শকে হারিয়েছি। তাই জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে এ দেশটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক শিশুকে লেখাপড়া শিখতে হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন। আেমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরন করে শিশুদের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা,মসজিদ ও মন্দিরভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি। কোন অভিভাবককে যাতে বই কিনতে না হয় এ জন্য আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি। এ বছরের প্রথম দিনই আমরা ৩২ কোটি ৬৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ৯২৩ টি বই বিতরণ করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিককে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। গরীব শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বৃত্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, জীবনে বড় হতে হলে লেখাপড়া শিখতে হবে, মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। গরীব ও প্রতিবন্ধি শিশুদের অবহেলা করা যাবে না। তাদেরকে তোমরা কাছে টেনে নিবে, আদর করবে, ভালোবাসবে।
শিশু শিক্ষার্থী আশুরা ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশেষ অতিথি শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, শিশু ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক উল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ খলিলুর রহমান।
এরআগে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ্যাভোকেট ও ১০টা ৯ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পৌছান। সকাল প্যেনে ১০টায় জাতির পিতার সমাধী সৌধের বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে প্রথমে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এ্যাভোকেট ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ। এসময় বিউগলের সুর বেজে ওঠে এবং তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল অনার গার্ড প্রদান করেন। এসময় তারা দুজনে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে বঙ্গবন্ধু ভবনে রক্ষিত মন্তব্য বহিতে স্বাক্ষর করে। এরপর রষ্ট্রপতি ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করে।বেলা সাড়ে ১১টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬-তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধী সৌধের পাবলিক প্লাজায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন তিনি। সমাবেশ শেষে সুন্দর হাতের লেখা, চিত্রাংকণ, কবিতা আবৃতি ও উপস্থিত বক্তব্যে বিজয়ীদের ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন। পরে তিনি শিশু দিবসের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দর্শক সারিতে বসে উপভোগ করেন। পরে তিনি গ্রন্থ মেলার উদ্ধোধন করেন তিনি।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, এদেশে রাজাকার-আলবদরদের বিচার করা হচ্ছে। পেট্রোল বোমা মেরে যারা এদেশে শিশুদের হত্যা করছে, তাদের ও এদেশে বিচার করা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতির পিতার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও শিল্প মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারফস হোসেন, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এমপি, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা এ সময় উপস্থিতি ছিলেন।বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার যোগে টুঙ্গীপাড়া হ্যালিপ্যাড থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে।