hasina_ahmed_dhaka_report_18080

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭  মার্চ: দীর্ঘ ৮ দিন ধরে যাবত নিখোঁজ স্বামীকে ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। মঙ্গলবার বিকালে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব) এর সভাপতি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল তার গুলশানের বাসায় সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

হাসিনা আহমেদ বলেন, ৮ দিন ধরে নিখোঁজ হয়ে আছেন আমার স্বামী। আমরা এক অস্বস্তিকর অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমার স্বামীকে ফিরে পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন জানাবো শিগগিরই। নিখোঁজ স্বামী সন্ধানে দেশবাসীসহ সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন সাবেক এই এমপি। কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তার পরিবারের অবস্থা জানিয়ে হাসিনা আহমেদে বলেন, স্বামীর নিখোঁজের পর থেকে আমার ঘরে কোন রান্না-বান্না হয় না। পাশের বাসার ভাবিরা রান্না করে খাবার পাঠায়। বাচ্চারা কিভাবে আছে, কি খায় কিছুই বলতে পারি না। তিনি বলেন, আমার স্বামী যদি কোনো অপরাধ করে থাকে, তাহলে আদালতে হাজির করে বিচার করুন। একই সঙ্গে হাসিনা অভিযোগ করেন, আমার স্বামীকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছি না। এই ৮ দিনের মধ্যে সোমবার এসবি’র একজন সাব ইন্সপেক্টর আমার সঙ্গে দেখা করেছে মাত্র। স্বামীর সন্ধানে সুশীল সমাজসহ দেশবাসীকে তার পাশে দাঁড়ানোর আহবানও জানান তিনি। বিকাল ৪টার দিকে সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানাতে প্রফেসর ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান ও সহযোগী অধ্যাপক ইসরাফিল রতন গুলশানের ৭২নং সড়কের প্লাটিনাম রেসিডেন্সের বাড়িতে যান। তারা পরিবারের সদস্যদের খোঁজ-খবর নেন। সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজে উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউসুফ হায়দার বলেন, আমি এই ঘটনায় স্তম্ভিত।

এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কোন সভ্য দেশে এভাবে ৮ দিন ধরে একজন মানুষের খোঁজ পাওয়া যাবে না, তা হতে পারে। আমরা সরকারকে বলব, তাকে দ্রুত খুঁজে বের করে তার পরিবারের কাছে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা নিন। সালাহউদ্দিন আহমেদকে একজন কৃতী ছাত্র, কৃতী প্রশাসক ও ভালো রাজনীতিবিদ হিসেবে অভিহিত করে তাকে ফিরে পেতে সুশীল সমাজসহ মানবাধিকার সংগঠন ও নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার আহবানও জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত ১০ই মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীল পরিচয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায়। তবে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি স্বীকার করেনি।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনের ভাগ্যে কি ঘটবে? এমন প্রশ্ন শুধু তার পরিবারের সদস্যদের নয়, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দেরও একই জিজ্ঞাসা। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর মতো সালাহ উদ্দিনকে গুম করার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার (১০ মার্চ) রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উত্তরার এক বাসা থেকে দুই গৃহকর্মীসহ তাকে তুলে নেয়া হলেও এখনো তার সন্ধান মেলেনি।

তুলে নেওয়ার পর থেকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সালাহ উদ্দিনকে গ্রেফতার বা আটকের কথা অস্বীকার করা হচ্ছে। ফলে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ইলিয়াস আলীর মতো গুম করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এর আগে ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানীর ২ নম্বর সড়কের সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে অপহৃত হন বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলী। তার অপহরণ হওয়ার ওই ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন একজন সাব-ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি ছিনতাইকারী ভেবে অপহরণকারীদেরই একজনকে পেছন দিক থেকে কলার চেপে ধরে ফেলেন। কিন্তু পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় পাওয়ার পর তিনি চেপে যান। এ ঘটনার পর উচ্চ আদালতে ইলিয়াস আলীর সন্ধান চেয়ে রিট আবেদনও করা হয়। কিন্তু এখনো তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

তার আগে ২০১০ সালের ২ জুন রাতে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের রমনা শাহবাগ এলাকার তৎকালীন কমিশনার চৌধুরী আলম নিখোঁজ হন। ঘটনার পর তার মেয়ে মাহফুজা আক্তার বলেছিলেন, ওইদিন রাতেই তিনি টিভির স্ক্রলে খবর দেখেন যে তার বাবাকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা বা ডিবি আটক করে নিয়ে গেছে। এরপর বিষয়টি তিনি তার মাকে জানান এবং পরদিন সকালে বাবার খোঁজ নিতে ডিবি কার্যালয়ে যান তারা। কিন্তু গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে চৌধুরী আলমকে আটকের কথা অস্বীকার করা হয়। এরপর র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারে দ্বারে তারা ঘুরেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পওয়া যায়নি। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও তার সন্ধান করতে পারেনি।

এরপর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির ( বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বক্কর সিদ্দিক অপহৃত হন। ২০১৪ সালের ১৬ এপিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ির ব্যস্ততম এলাকা থেকে মাইক্রোবাস যোগে ৭-৮ জন অস্ত্রধারী তাকে অপহরণ করে। তিনি গার্মেন্টস থেকে তার লাল রঙের প্রাইভেটকারে ঢাকার বাসায় ফিরছিলেন। এরপর তাকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান শুরু করে। নারায়ণগঞ্জ, আশপাশ এলাকা ও হাইওয়েতে চেকপোস্ট বসানো হয়। ঘটনার পর দেশি বিদেশি গণমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। একপর্যায়ে রাজধানীর মিরপুর আনসার ক্যাম্প এলাকায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তার পকেটে ৩’শ টাকা দিয়ে রাস্তায় ফেলে যায়।

অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন- দেশের সর্বত্র ক্রসফায়ার, গুম, খুনের ঘটনাসহ বাসা থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। সরকার বিরোধী রাজনৈতিক জোটের নেতাকর্মীরা কেউ কোথাও নিরাপদ নয়। কখন কে কোথা থেকে গুম হয়ে যান এ আতঙ্ক থাকছে সব সময়ই। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর স্বীকার না করায় নগরবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, সাবেক কমিশনার চৌধুরী আলমসহ অসংখ্য মানুষ গুম হয়েছেন ইতিপূর্বে।

গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উত্তরার এক বাসা থেকে তুলে নেয়ার পর সারাদেশে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা আরো বেড়েছে। তাকে কোথায় নিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার ভাগ্যে কি ঘটেছে কেউ বলতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, আইজিপি এবং র‌্যাব-পুলিশের কর্মকর্তারাও সালাহ উদ্দিন কোথায় আছেন তা বলতে পারছেন না। তার অবস্থান জানতে চান দেশবাসী।

এ ঘটনার পর গত বৃহস্পতিবার বিকালে সুপ্রিম কোর্টে ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কক্ষে এক প্রেস কনফারেন্সে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, তার স্বামীকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নিয়ে গিয়ে এখন অস্বীকার করছেন। তিনি দাবি করেছেন- যারা তাকে তুলে নিয়ে গেছেন, তারা ওই বাসার দারোয়ানের কাছে নিজেদের গোয়েন্দা বলে পরিচয় দিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, তারা সালাহ উদ্দিকে তুলে নিয়ে যায়নি। কিন্তু এভাবে তুলে নিয়ে যাবে, কেউ কিছু বলবে না, এটা কীভাবে হয়। তাকে যে অবস্থায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সে অবস্থায় অক্ষতভাবে ফিরিয়ে দেয়া বা কোর্টে হাজির করা হোক বলেও দাবি করেন তিনি।

অপর দিকে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন- মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো গ্রেফতার দেখানো হবে, নাকি ইলিয়াস আলীর মতো পরিণতি সালাহ উদ্দিনের ঘটতে যাচ্ছে! এমন প্রশ্ন সর্বত্র। পরিবারের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা বিষয়টি স্বীকার না করায় সকলের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এদিকে র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সালাহ উদ্দিন ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। ফলে র‌্যাব তার অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি। সম্প্রতি র‌্যাব সদস্যরা গুলশানে সালাহ উদ্দিন আহমেদের বাসায় অভিযান চালিয়েছিল। সে দিন যদি তাকে পাওয়া যেত তাহলে তাকে আটক করা হতো। কিন্তু তিনি কোথায় আছেন জানে না বলে র‌্যাব কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। তবে তার ব্যাপারে র‌্যাবের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে এবং র‌্যাবের সবক’টা ইউনিটকে সালাহ উদ্দিনের ব্যাপারে বলা হয়েছে বলে র‌্যাবের এক কর্মকর্তা শীর্ষ নিউজকে জানিয়েছেন।

এদিকে ৭ দিন পার হলেও সালাহ উদ্দিনের খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি জানিয়েছেন- আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ জানেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য কোনো কথা হতে পারে না। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে সালাহ উদ্দিনের মুক্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন-তার মুক্তি না দিলে পরিণতি শুভ হবে না। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সালাহ উদ্দিনের সন্ধান দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন নিখোঁজের রহস্য উদঘাটনের দায়িত্ব সরকারের।

সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নাগরিকদের বাসা থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। নিরাপদভাবে বেঁচে থাকা নাগরিক অধিকার। সেই অথিকার ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে- এসব ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া। আর সরকার এসব ঘটনার দায়িত্ব এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই তুলে নিয়ে গেছে। আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- সালাহ উদ্দিনকে তারা আটক বা গ্রেফতার করেনি। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকসহ আমরা উদ্বিগ্ন।

উত্তরা জোনের পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গত শনিবার বেলা দেড়টার দিকে জানান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি। হাইকোর্টেও একই তথ্য দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।বিএনপির একটি সূত্র জানায়, উত্তরা মডেল টাউনের ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডস্থ বাসা থেকে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে সালাহ উদ্দিনকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়।এ ঘটনার পর সালাহ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার গুলশান থানায় জিডি করতে যান তার স্ত্রী। কিন্তু সেখানে জিডি না নিয়ে উত্তরা (পশ্চিম) থানায় পাঠানো হয়। কিন্তু উত্তরা (পশ্চিম) থানা পুলিশও তার জিডি নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ ঘটনার পর সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন- যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে না নেয় তাহলে থানায় জিডি নিতে অসুবিধা কোথায়? নিখোঁজ ব্যক্তির জন্য থানায় সাধারণ ডায়েরি করার অধিকারটুকু নেই কেন? এ ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি কিছুই জানেন না। এরপর শনিবার রাতে উত্তরা (পশ্চিম) থানার পুলিশ বাদী হয়ে একটি জিডি করে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

থানার এক কর্মকর্তা জিডির বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে অন্য এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। এরপর ওই কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি শীর্ষ নিউজকে জিডি করার কথা স্বীকার করেন। এরপর তার কাছে জিডির নম্বরটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিডির কপিটি ওসি স্যারের কাছে আছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তিনি জিডির নম্বর দিতে পারবেন।পরে রোববার সকাল সোয়া ১০টার দিকে উত্তরা (পশ্চিম) থানার ওসি রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযেগা করা হলে তিনি আবারো জানান, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের ব্যাপারে জিডি করার কোন তথ্য তার কাছে নেই।

এ ব্যাপারে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ ক বলেন, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ এর ব্যাপারে আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই।গত বৃহস্পতিবার সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ স্বামীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন।গত (১৫ মার্চ) রোববারের মধ্যে আদালতে হাজির করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এ মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

এরপর গত রোববার সকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকা মহানগর পলিশ, র‌্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখার (এসবি) সহ পাঁচটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভাগ থেকে ৫টি পৃথক প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, সালাহ উদ্দিন আহেমদ এর কোন খোঁজ তাদের কাছে নেই। বিকেল আড়াইটার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তা আদালতে দাখিল করেন।

রোববার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাইনি মর্মে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। পরে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না জানতে চেয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানি আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।এদিকে, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, সরকার বলছে আমরা সালাহ উদ্দিনকে নিয়ে নাটক করছি। তাহলে সরকার তাকে আদালতে হাজির করে প্রমাণ করুক আমরা নাটক করছি।

সোমবার সুপ্রিমকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাইনি মর্মে আদালতে যে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে সে সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব কথা বলেন।হাসিনা আহমেদ বলেন, আইনশুঙ্খলা বাহিনী আদালতে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। ইতোমধ্যে সালাহ উদ্দিন যে বাসা থেকে আটক হয়েছেন, সে বাসার দারোয়ানের বক্তব্য মিডিয়ায় প্রচারিত-প্রকাশিত হয়েছে। দারোয়ানের বক্তব্য থেকে প্রমাণিত হয় যে সালাহ উদ্দিনকে তারাই তুলে নিয়ে গেছে। আমি দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি যেন তাকে (সালাহ উদ্দিন) অক্ষত অবস্থায় ফেরত দেয়া হয়।

সালাহ উদ্দিনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে একটি ফৌজদারি আবেদন করেন তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমদ। স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি), পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি), ঢাকা জেলা প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, উত্তরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয় সে আবেদনে।