দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ মার্চ: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে হাজির করার বিষয়ে দেয়া রুলের ওপর শুনানি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছে হাইকোর্ট।বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ শুনানি মুলতবি করেছে।সালাহ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের শুনানি করার কথা ছিল। তিনি শুনানির জন্য দীর্ঘ সময় প্রয়োজন বলে জানালে আদালত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।গত বৃহস্পতিবার তাকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এ বিষয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে।
এর আগে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে ৫টি প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ।পরে দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব প্রতিবেদন আদালতে জমা দেন।প্রসঙ্গত: সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমদের দাবি করেন, ‘ডিবি’ পরিচয়দানকারী একদল অস্ত্রধারী গত মঙ্গলবার রাতে তার স্বামীকে উত্তরা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। উত্তরার ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীও সালাহ উদ্দিনকে ধরে নেয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।
সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে কেন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ওই দিনই রুল দেয় হাইকোর্ট।রোববার ওই রুলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হাইকোর্টকে দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সদরদপ্তর, ঢাকা মহানগর পুলিশ, র্যাব, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বিশেষ শাখা (এসবি) পাঁচটি আলাদা প্রতিবেদনে দাবি করে, সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ জানে না পুলিশ। তারা সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার বা আটক করেনি। তবে তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সালাহ উদ্দিন আহমেদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মওদুদ আহমদের শুনানি শেষে আদালত সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সোমবার হাইকোর্টের রুলের জবাবে পাঁচটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন নিয়ে শুনানি করেন। রোববার (১৫ মার্চ) তিনি প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করে জানিয়েছিলেন, সালাহউদ্দিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো বাহিনীর হেফাজতে নেই এবং কোনো বাহিনী তার খোঁজ পায়নি।আবেদনকারী বাদীপক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ চারটি পয়েন্টে শুনানি করতে চাইলেও সময় শেষ হওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি শেষে আগামী ৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে দেন।আবেদনকারী বাদীপক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ওইদিন প্রতিবেদনগুলো চাইলে বাদীপক্ষকে প্রতিবেদনগুলো দিতে নির্দেশ দিয়ে সোমবার আবারও শুনানির কথা জানান হাইকোর্ট।
গত বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) রোববারের মধ্যে কেন খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন এ বেঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা ফৌজদারি আবেদনের শুনানি শেষে এ রুল জারি করা হয়।ওইদিন সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাসিনা আহমেদের পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি ছাড়াও আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও এজে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি’র কমিশনারকে।
এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন। গত ১১ মার্চ থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, আগেরদিন ১০ মার্চ রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।তবে পুলিশ, র্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি। কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি।সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বলেন, ১০ মার্চ রাতে পুলিশ ও র্যাবের লোকেরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।১১ মার্চ রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ’ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে। তবে দুই থানাই জিডি গ্রহণ করেনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে।বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি। এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।অবিলম্বে সালাহউদ্দিনের মুক্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে। একই অভিযোগ তুলে সালাহউদ্দিনের মুক্তি এবং দ্রুত তাকে আদালতে হাজির করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।