download

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ মার্চ: পুলিশ হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী সুজন হত্যা মামলায় বাদী নারাজি দাখিল না করায় অব্যাহতি পেলেন মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ। সোমবার নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসির নারাজি দাখিলের কথা থাকলেও তিনি কোন নারাজি দেননি। দাখিল করা চার্জশিট গৃহীত হলে তাতে কোনো আপত্তি নেই বলেও তিনি আদালতকে জানিয়েছেন। এরপর ভারপ্রাপ্ত মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস গত ৬ নভেম্বর সিএমএম আদালতের দাখিল করা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নেন।

এর আগে গত ১৮ ফেব্র“য়ারি নারাজি দাখিলের জন্য বাদীপক্ষের সময়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ মার্চ দিন ধার্য করেন। গত ১৮ জানুয়ারিও বাদীপক্ষ নারাজি দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন মঞ্জুর করলে ১৮ ফেব্র“য়ারি দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।মামলাটির জুডিশিয়াল তদন্ত প্রতিবেদনে মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদকে অব্যাহতি দেয়ার বিরুদ্ধে ওই নারাজি দাখিল করার কথা ছিলো।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ জুলাই রাতে মিরপুর থানা হেফাজতে ঝুট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান সুজন নিহত হন। ওই অভিযোগে গত ২০ জুলাই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নিহতের স্ত্রী মমতাজ সুলতানা লুসি এই মামলা করেন। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫ (১)(২)(৩)(৪) ধারায় মামলাটি করা হয়।

মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে গত বছরের ৬ নভেম্বর সিএমএম আদালত মহানগর দায়রা জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে ওসি সালাউদ্দিনকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়।মামলায় ওসি সালাউদ্দিন ছাড়াও মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে আসামি করা হয়।

প্রতিবেদনে ১০ জন আসামির মধ্যে ওসি সালাউদ্দিনসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি এবং মিরপুর থানার এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদসহ অপর পাঁচ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়।

অভিযুক্ত হওয়া পাঁচ জন হলেন,এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন।নির্দোষ প্রমাণিত হওয়া পাঁচ জন হলেন, ওসি সালাউদ্দিন, জনৈক নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও পলাশ।

মামলায় বাদীর দাবি, গত বছরের ১৩ জুলাই রাত সোয়া ১২টায় বাদিনীর ভাড়া বাসায় বাড়িওয়ালা দরজা খুলতে বলেন। বাদিনী দরজা খুলতেই আসামি এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাজ কুমার, কনস্টেবল আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল, জনৈক মিথুন, নাসিম, ফয়সাল, খোকন ও ফয়সালকে দেখতে পান। ওই সময় বাদিনীর স্বামী মাহবুবুর রহমান সুজন পুলিশ আসার খবরে রান্না ঘরের সানসেটে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে এএসআই রাজ কুমার তাকে নামিয়ে আনেন। এরপর এসআই জাহিদ ও এএসআই রাজ কুমার বাদিনীর স্বামীর গামছা দিয়ে মুখ ও চোখ বাধে এবং দুই হাত পেছনে দিয়ে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে টানতে টানতে বাথরুমে নিয়ে বালতি ভরা পানিতে মাথা চুবিয়ে লোহার রড দিয়ে মারধর করেন।

এরপর এসআই জাহিদ বাদিনী, তার স্বামী ও শিশু সন্তান মোশারফকে নিয়ে রাত পৌনে দুইটার দিকে মিরপুর থানায় আসেন। ওই সময় এসআই জাহিদ ওয়্যারলেসে একজনকে ফোন করে বলেন, স্যার হারামজাদাকে তো অর্ধেক মেরে থানায় নিয়ে এসেছি। এখন কী করব? অপর প্রাপ্ত থেকে উত্তর আসে, ওকে হয় ক্লোজ করে দাও না হয়, ফাইনাল করে দাও।

এরপর থানায় বাদিনী তার স্বামীর কান্নাকাটি ও চিৎকার শুনতে পান। পরদিন সকালে ওসি সালাউদ্দিন তার রুমে বসিয়ে ভেতর রুম থেকে এক গ্লাস পানি এনে তাকে খেতে দেন। যা খেয়ে বাদিনীর চরম অসন্তি বোধ হয়। শরীরে ঝিম ঝিম লাগে। তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন ওসি সালাউদ্দিন। স্বামীকে দেখতে চাইলে সাদা কাগজে সই করতে বলেন তাকে। এভাবে লুসিকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করায় ওসি। এরপর সালাউদ্দিন জানান, তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে লুসি জানতে পারেন তার স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেলে।বাদিনীর স্বামীর লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে বাসায় আনার পর বাদিনী তার স্বামীর হাতের কব্জি, পায়ের গোড়ালি, পিঠের ডানপাশ ও মাথার পেছনে কালো দাগ দেখতে পান।