3736669_orig

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মার্চ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরাজমান সমস্যা উত্তরণে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার অধিকার কারো নেই।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ যখন সব খাতে বিপুলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে সময়ে জ্বালাও- পোড়াও, বর্বরতা ও মানুষ হত্যার কারণে আমরা কিছু সমস্যার মোকাবিলা করছি। আশা করি এসব সমস্যা থাকবে না। আমরা এ পরিস্থিতি উত্তরণে সক্ষম হবো।

তিনি রোববার সকালে আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বৈঠকে তাঁর সূচনা ভাষণে একথা বলেন।আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন। এছাড়া এতে বক্তৃতা করেন একই বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার। শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর হরতাল-অবরোধের কার্যকারিতা নেই। এ কারণে হরতাল ও অবরোধের নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে। আমি জানি না, কেন এ নৃশংস কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে।সরকার শক্ত হাতে সকল সন্ত্রাস, নাশকতা অন্তর্ঘাত মোকাবেলা করে দেশকে সচল রেখেছে এবং জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে।

তিনি বলেন, সরকার আগুন-সন্ত্রাসীদের কাছে জঙ্গিবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। বরং আগুন-সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদীদের রক্ষা, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলা ও বিচার থেকে উনি ও উনার পরিবারের সদস্যদের নিষ্কৃতির জন্য নিজেই নিজেকে ভুল রাজনীতির পথে নিয়ে গেছেন। উনার ভুল রাজনীতির খেসারত জনগণ কেন দেবেন?

বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জনগণকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর দলের বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও দায়িত্ব রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। স্বাধীনতার জন্য এ দলের অনেক আত্মত্যাগ রয়েছে। আওয়ামী লীগই মুক্তিযুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। এজন্য যে আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা কাজ করবো, অন্য কোন দল সেভাবে কাজ করবে না। এটাই বাস্তবতা। দেশের জনগণ ইতোমধ্যে তা বুঝে গেছেন।

চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে নাশকতায় মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রীবলেন, প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অগ্রগতি আমরা লাভ করছি।শুধু দুর্ভাগ্য যে, মাঝখানে কিছু সমস্যা এখনো হচ্ছে। এই জ্বালাও- পোড়াও, মানুষ খুন করা; এসব কারণে কিছুটা সময়ের জন্য সমস্যাৃ। তবে আমরা আশা করি, এসব সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। আমরা এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারব।বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের কোনো কার্যকারিতা নেই-মন্তব্য করে এর বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আন্দোলনের নামে মানুষ খুন করা আর প্রতিদিন হরতাল ডাকা; কিন্তু সেগুলির কোন কার্যকারিতা আসলে নাই। দেশবাসীকে আরো সচেতন হতে হবে।দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, দেশকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারো নেই।নতুন নির্বাচনের দাবিতে গত দুই মাস ধরে অবরোধ চালিয়ে আসছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এর সঙ্গে হরতালও দিচ্ছে তারা।হরতাল-অবরোধে প্রায়ই গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। গত দুই মাসে নাশকতায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।এরপরেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেত্রী। গত শুক্রবার গুলশানে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছান পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দেশ স্বাধীন করায়’ বাংলাদেশকে উন্নয়নের জন্যও তার দল দায়বদ্ধ রয়েছে। আমাদের একটা দায়িত্ববোধ রয়েছে, একটা লক্ষ্য রয়েছে যে, এই বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন করেছি; এই বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে হবে। কাজেই আমরা যতটা আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করবো অন্যরা কিন্তু সেটা করবে না।প্রধানমন্ত্রী এসময় দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অর্জনটা হচ্ছে, এখানে ধনী-দরিদ্রের আয় বৈষম্য কমে যাচ্ছে। গ্রাম ও শহরের মানুষের মধ্যে আয় বৈষম্য কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। অনেক দেশ দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। কিন্তু সেখানে দেখা যায় সাথে সাথে মূল্যস্ফীতিও বাড়ে এবং ধনী-দরিদ্রের ব্যবধানটাও দ্রুত বেড়ে যায়।গত ছয় বছরে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এসব ডিজিটাল সেন্টার থেকে সাধারণ মানুষের সুবিধা পাওয়া ছাড়াও গ্রামে বসে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।প্রধান রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতের পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক্সপোর্টে আমরা শুধু গার্মেন্টস নিয়েই চিন্তা করব না। আমাদের কিন্তু আরো সুযোগ আছে। বিশেষ করে এই সেক্টরে (আইটি) আমরা সফটওয়্যার তৈরি করা, বাইরে পাঠানো বা অনেক কিছু আমরা তৈরি করতে পারি।এজন্য হাই টেক পার্ক নির্মাণের কাজ শেষ করার তাগাদা দেন তিনি। একইসঙ্গে পুরনো বড় বড় শহরে হাই টেক পার্ক তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।এসময় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন তিনি।

আমরা ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। কিন্তু যে কাজগুলি বাকি আছে সেগুলি তাড়াতাড়ি হোক। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আমরা করতে চাচ্ছি। কিন্তু খুব দ্রুত যদি এটা আমরা শুরু না করি তাহলে আমরা শেষ করতে পারব না।দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। স্বল্প সময়ের মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল প্রযুক্তি (ফোর জি) সেবার ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, যে কোনো একটি দেশ বা জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে যদি বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। আর বর্তমান বিশ্বটাই হচ্ছে প্রযুক্তির বিশ্ব। কাজেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা এবং প্রযুক্তিকে উন্নয়নের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করা-এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিলাম।অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১৯টি মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করেন এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে একটি ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন।