দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মার্চ: আদালতের স্থগিতাদেশ আর রাজউকের ব্যর্থতায় ঢাকা মহানগরকে পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে তুলতে না পারার কথা জানিয়ে খেদ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন৷ রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তাতে বাধা না দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন৷
রোববার সচিবালয় গণমাধ্যম কেন্দ্রে সচিবালয়ে কমর্রত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷অন্যদের মধ্যে বিএসআরএফ এর সহ-সভাপতি হারুনুর রশিদ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন৷ রাজউক গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সংস্থা৷ এ সংস্থার কর্মকর্তাদের কাজের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন মন্ত্রী৷কয়েকটি আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ টেনে মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন ফ্রি স্টাইলে দেশ চলছে৷ এভাবে দেশ চলতে পারে না৷ রাজউক বাধা দিচ্ছে না, রাজউকের জনবল আছে, সবই আছে৷ বেতনও নিচ্ছে৷ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যদি কর্তব্য পালন করতে না পারেন, যারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারেননি, তাদের রেখে কোনো লাভ নেই৷ দে আর ফেল৷
মন্ত্রী বলেন, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাজউক স্বাধীন বডি৷ সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বোর্ডে৷ আমি নিজেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছি৷ তবে অমি চেষ্টা করছি, যাতে এর সুরাহা হয়৷রাজধানীর আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়ায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি৷মন্ত্রী বলেন, রাজউক ফুটপাত থেকে পাঁচ ফুট ভেতরে বিল্ডিং করার কথা বলে, কিন্তু ফুটপাত ঘেষেই বিল্ডিং ওঠে৷ ভাঙতে যাবেন তখন কোর্টে যাবে৷ এমন অনক মামলা আছে৷
হাই কোর্ট- সুপ্রিম কোর্ট বসে আছে স্টে অর্ডার দেওয়ার জন্য৷ যে কোনো ব্যক্তি গেলেই স্টে অর্ডার দিয়ে দেয়৷সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর কাছে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল- আবাসিক এলাকায় কেন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে৷ মোশাররফ বলেন, এখন ফ্রি স্টাইলে দেশ চলছে৷ রাজউক বাধা দিচ্ছে না কিন্তু তাদের জনবল আছে, বেতনও নিচ্ছে৷ যারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি তাদের রেখে লাভ কী?তবে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনার বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে বলে জানান তিনি৷
গুলশানে গলিতে গলিতে বেকারি শপ, এই দোকান, ওই দোকান- এগুলোর জন্য রাজউকের সাথে বসেছি৷ লেকশোর হোটেল, কত বছর হয়ে গেছে, ইজ ইলিগ্যাল৷ গুলশান এরিয়ার মধ্যে অনেক গেস্ট হাউজ৷ এগুলো নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে একটা পদক্ষেপ নিতে হবে৷ টোটালি কমার্শিয়াল এরিয়া, এভাবে তো হবে না৷সচিবালয়কে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের খালি জায়গায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে জানিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, নকশা করা হয়েছে৷ টাকা পেলেই স্থানান্তরের কাজ শুরু হবে৷মন্ত্রী জানান, নতুন সচিবালয়ে ভবনগুলো হবে সবুজ৷ প্রতিটি মন্ত্রণালয় আলাদা হবে৷ গাড়ি রাখার প্রচুর জায়গা থাকবে৷অতীতে যারা নগর পরিকল্পনা করেছেন তাদের ভিশন ন্যারো ছিল৷ তারা মনে করেননি ঢাকা এত বড় হবে৷কৃষিজমিতে আবাসন বন্ধে সংসদে বিল আনতে কৃষিমন্ত্রীকে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি৷মন্ত্রী বলেন, পূর্বাচল সিটিতে বাড়ি নির্মাণে আগ্রহীদের আগামী ১ জুলাই থেকে নকশা অনুমোদন দেওয়া হবে৷
আগামী ১ জুলাই থেকে পূর্বাচল প্রকল্পে নকশা অনুমোদন দেওয়া শুরু হবে বলেও জানান মন্ত্রী৷ তিনি বলেন, পূর্বাচল গ্রীন সিটি, স্মার্ট সিটি হবে৷ সেখানে পৃথক স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে মানবমল চলে যাবে৷ এখানে এসটিপি-ইটিপি হবে৷ আর সে পানি গ্রিন করার কাজে লাগাবো৷ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও পৃথক পাওয়ার স্টেশন রাখা হবে৷অতীতে যারা নগর পরিকল্পনা করেছেন, তাদের ভিশন ন্যারো ছিল মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেননি, ঢাকা এতো বড় হবে৷ ঢাকা এখন তুরাগ নদী, কেরাণীগঞ্জ সীমানা পার হয়ে গেছে৷
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, কঙ্বাজার বা অন্যান্য শহরে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের জন্য পৃথক লাইন নাই৷ যে জন্য ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা দূষিত হয়ে গেছে৷ এভাবে অন্যান্য নদীও দূষিত হয়ে যাচ্ছে৷ এজন্য রাজউককে নির্দেশ দিয়েছি, নকশা অনুমোদনের আগে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (এসটিপি) করতে হবে৷
আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবনের বিষয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে না কেন- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, যখন ভাঙতে যাবেন, তখন মালিকরা আদালতের আশ্রয় নেবেন৷ অনেক মামলা আছে৷ আমরা সবার সহায়তা চাই৷ আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে৷ নকশা অনুযায়ী না হলে সুন্দর আবাসিক এলাকা হবে না৷জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, উত্তরায় কাজ চলছে৷ এছাড়া মালয়েশিয়ার অর্থায়নে ৮ হাজার ৪০০ অ্যাপার্টমেন্ট হবে৷ আমরা সহনীয় মূল্যে জনগণকে অ্যাপার্টমেন্ট দেওয়ার চিন্তা করছি৷
প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাউজিংয়ের পেছনে ইন্ডাস্ট্রি জড়িত আছে৷ আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি যে, গরিব মানুষ ঠিকই ইনস্টলমেন্ট দেবেন৷ হলমার্ক ডেসটিনির মতো কেলেঙ্কারি হবে না৷ গরিব ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং মধ্যবিত্ত পরিবার ব্যাংকের টাকা মারে না৷ আমি মনে করি, সরকারের এদিকে এগিয়ে আসা উচিত৷ মন্ত্রী হিসেবে আমি গ্যারান্টি দিতে পারি, এই টাকা কোনো দিন মার যাবে না৷
সেবরকারি ডেভেলপাররা যারা বিনিয়োগ করছেন, পৃথক সু্যযারেজ লাইন, এসটিপি, ইটিপি অবশ্যই করতে হবে৷ না হলে কোন প্ল্যান আমাদের কাছে পাবে না- বলেন মন্ত্রী৷চট্টগ্রাম শহরে সাগরের পাড়ে, পাহাড় ও কর্ণফুলি নদীর পাশে ছোট শহর গড়ে উঠবে বলেও জানান মন্ত্রী৷
ড্যাপের একটা অংশ শেষ করেছি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, নতুন ড্যাপ শুরু হবে৷ মন্ত্রিপরিষদের একটা কমিটি আছে৷ এতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে৷নতুন সিটি যেগুলো হচ্ছে সেগুলো সুন্দর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী৷হাতিরঝিল ঢাকা শহরের আইকন হলেও এখনও দূষিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷