দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মার্চ: বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ভেবেছিলাম বেগম জিয়ার নিষ্ঠুর হৃদয়ে সামান্য হলেও রহম আসবে। তিনি সাধারণ মানুষের কান্না-আহাজারী শুনতে পাবেন। বাতাসে আগুনে পোড়া লাশের গন্ধ তার মন পরিবর্তন করবে। কিন্তু অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে চরম হতাশ করেছেন। তিনি সাধারণ মানুষ, গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বৃদ্ধাগুলী প্রদর্শন করে তার একগুঁয়েমি বজায় রেখেছেন। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গত শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, আজ আগুন-সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ দেশের প্রধান সমস্যা। সবার আগে আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ দমন ও নিশ্চিহ্ন করা হবে। আগুন সন্ত্রাসের রানী বেগম খালেদা জিয়ার জায়গা সংলাপের টেবিলে নয়, কাশিমপুর কারাগারে।সরকার শক্ত হাতে সকল সন্ত্রাস, নাশকতা অন্তর্ঘাত মোকাবেলা করে দেশকে সচল রেখেছে এবং জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে এনেছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, দেশের শান্তি ও স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার সরকার তাই করবে।
তিনি বলেন, সরকার আগুন-সন্ত্রাসীদের কাছে জঙ্গিবাদীদের কাছে আত্মসমর্পণ করবে না। বরং আগুন-সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হবে।তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ, জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদীদের রক্ষা, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন মামলা ও বিচার থেকে উনি ও উনার পরিবারের সদস্যদের নিষ্কৃতির জন্য নিজেই নিজেকে ভুল রাজনীতির পথে নিয়ে গেছেন। উনার ভুল রাজনীতির খেসারত জনগণ কেন দেবেন?
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা-সংলাপ হতেই পারে। কিন্তু একটি নির্বাচনের জন্য কোনো এডহক ব্যবস্থার ফর্মূলা নিয়ে আলোচনা কোনোভাবেই যুক্তিসংগত নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য কোনো স্থায়ী প্রস্তাবও বেগম জিয়া দেননি, দিতেও পারছেন না।
ইনু বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন দেশের কোনো সমস্যা নয়। আগুন সন্ত্রাস-নাশকতা-জঙ্গিবাদ দেশের প্রধান সমস্যা। এখন আগুন সন্ত্রাসের রানী, অশান্তির রানী খালেদা জিয়ার জায়গা সংলাপের টেবিল না, কাশিমপুর কারাগার।লাগাতার অবরোধ ডেকে নিজের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা জিয়া গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ক্ষমতাসীনদের দায়ী করে আবারও নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সংলাপের দাবি তোলেন।তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বক্তব্য অসত্য ও একগুয়েমিতে ভরা; সেখানে নতুন কিছু নেই।
খালেদা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে ভয় পান বলেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে দেননি বলে মন্তব্য করেন ইনু।সকলের আশা ছিল তিনি মন পরিবর্তন করবেন। তিনি অবরোধ কর্মসূচি অব্যহত রাখার ঘোষণা দিয়ে দেশবাসীকে চরম হতাশ করেছেন।খালেদার সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা সমাজে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য আলোচনা বা সংলাপ হতেই পারে, তবে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের জন্য কোনো অ্যাডহক ব্যবস্থার ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা যুক্তিসংগত হতে পারে না।নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উন্নত ও শক্তিশালী করার জন্য কোনো স্থায়ী প্রস্তাব খালেদা জিয়া দেননি, দিতেও পারছেন না।
গত ৩ মার্চ থেকে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান নিয়ে থাকা খালেদা জিয়া ধার্য দিনে আদালতে না যাওয়ায় গত ২৫ ফেব্র“য়ারি দুটি দুর্নীতি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। সেই পরোয়ানা এখনো থানায় না পৌঁছানোর বিষয়টি তথ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনেও আসে।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, তার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অভিযোগ আছে। এ সংক্রান্ত মামলাগুলো বিচারাধীন।… আদালত যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা আমরা কার্যকর করব।একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, আত্মসমর্পণ করাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, যা খালেদা জিয়ার দায়িত্ব। আদালত আদালতের মতোই চলবে, আদালতকে সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব, সরকার তাই করবে।
অবরোধের গত ৬৭ দিনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তার সরাসরি নির্দেশে আগুন সন্ত্রাসের কারণে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে। এই হত্যা ও খুনের মামলাগুলো আমরা প্রশাসিনকভাবে সাজাচ্ছি। এগুলো যখন আদালতে যাবে আদালত সে অনুযায়ী পদেক্ষেপ নেবে।
সরকার নাৎসি কৌশল নিয়ে নিজেরা নাশকতা ঘটিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলায় জড়াচ্ছে- খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগও নাকচ করে দেন জাসদ সভাপতি ইনু।তিনি বলেন, তার (খালেদা) উসকানি অনুযায়ী দলের নেতারা নির্দেশনা দিয়ে নাশকতা করছে এবং হাতেনাতে ধরা পড়ছে। এতো কিছুর পর মামলা হলে তা কীভাবে মিথ্যা মামলা হয়?খালেদা জিয়া ক্ষমতার জন্য উম্মাদ হয়ে গেছেন বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী ইনু।প্রধান তথ্য কর্মকর্তা তছির আহাম্মদসহ তথ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।