বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মার্চ: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির করার বিষয়ে করা আবেদনের বিষয়ে সোমবার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।রোববার দুপুরে বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। শুনানি শেষে এ আদালত এ আদেশ দেন।সকালে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে ঢাকা মহানগর পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশের বিশেষ শাখা। প্রতিটি বিভাগই জানায়, সালাহ উদ্দিন আহমদকে পুলিশের কোনো শাখা আটক বা গ্রেপ্তার করেনি। তাঁকে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। তবে খুঁজে পাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা পুলিশ চালাচ্ছে। দুপুরে অনুষ্ঠিত শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। এ সময় তিনি রুলটি নিষ্পত্তির আরজি জানান।

সালাহ উদ্দিন আহমদের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। তিনি বলেন, আমরা পুলিশ প্রতিবেদনের অনুলিপি পাইনি। এ বিষয়ে আমাদের কিছু জবাব দেওয়ার আছে। এটা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যা হালকাভাবে নেওয়া যায় না।এ সময় আদালত বলেন, এ ধরনের একটা বিষয়ে আমরা কেন এত সময় নেব। রেযখানে পুলিশের চারটি শাখার প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা রুল নিষ্পত্তি করে একটা পর্যবেক্ষণ দিতে পারি যে, সালাহ উদ্দিন আহমদকে খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা যেন অব্যাহত রাখা হয়। এ সময় মওদুদ আহমদ বলেন, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মামলা। মানুষের জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন। এ জন্য তিনি আবারও শুনানির জন্য সময়ের আরজি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার আবারও শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।

সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদের দাবি, ডিবি’ পরিচয়দানকারী একদল অস্ত্রধারী গত মঙ্গলবার রাতে তাঁর স্বামীকে উত্তরা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। উত্তরার ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীও সালাহ উদ্দিনকে ধরে নেওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন।পরে সালাহ উদ্দিন আহমদকে কেন খুঁজে বের করা হবে না এবং ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁকে কেন আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গত বৃহস্পতিবার রুল দেন হাইকোর্ট।পাঁচ দিন ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের কোনো ‘সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে আদালতকে জানাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টে বলেন, আমরা এসবি, সিআইডি, র‌্যাব, ডিএমপি ও পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে পাঁচটি রিপোর্ট পেয়েছি। সবাই জানিয়েছে তারা সালাহ উদ্দিনের কোনো সন্ধান এখনও পায়নি।পরিবারের অভিযোগ, গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরার একটি বাসা থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি স্বীকার করেনি।

এই প্রেক্ষাপটে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ স্বামীর খোঁজ চেয়ে হাই কোর্টে গেলে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার একটি রুল জারি করে।সালাহ উদ্দিনকে কেন খুঁজে বের করে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হবে না- সরকারকে তা রোববারের মধ্যে জানাতে বলা হয়। সে অনুযায়ী বিভিন্ন বাহিনীর পক্ষ থেকে এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।বশির উল্লাহ বলেন, আদালত রুল জারির আগে থেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছিল।রুল জারির পর তিনি (সালাহ উদ্দিন) কোথায় আছেন তা জানার জন্য কার্যক্রম অব্যাহত আছে।রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত জানুয়ারি মাসের শেষ দিক থেকে সালাহ উদ্দিনের নামেই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে হরতালের বার্তা দেওয়া হচ্ছিল। তবে নিজের অবস্থান প্রকাশ করছিলেন না এই রাজনীতিক।

হাসিনা আহমেদের অভিযোগ, তিনি স্বামীর খোঁজ চেয়ে গুলশান থানা ও উত্তরা থানায় জিডি করতে চাইলেও পুলিশ তা নেয়নি।এ বিষয়ে বশির উল্লাহ বলেন, সালাহ উদ্দিনের স্ত্রীর জিডি কেন নেওয়া হয়নি সে বিষয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। সেখানে তার (হাসিনা) কাছে যখন জানতে চাওয়া হয়, বাড়ির কত তলা থেকে নিয়ে গেছে এবং কে দেখেছে, তখন এসবের কোনো জবাব তার স্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারছিলেন না, ফোনে ফোনে জিজ্ঞেস করে জানিয়েছেন। এদিকে সালাহ উদ্দিনকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজিরের বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানি বেলা আড়াইটার দিকে হবে বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রীর আইনজীবী এবি মোহাম্মদ আলী।সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন সালাহ উদ্দিন। পরে তিনি চাকরি ছেড়ে কক্সবাজারের সংসদ সদস্য হন এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তার স্ত্রী হাসিনাও সংসদ সদস্য ছিলেন। বাদীপক্ষকে প্রতিবেদনগুলো দিতে নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ জানান, সোমবারের (১৬ মার্চ) বিষয়টি আবারও কার্যতালিকায় আসবে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) রোববারের মধ্যে কেন খুঁজে ে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন এ বেঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা ফৌজদারি আবেদনের শুনানি শেষে এ রুল জারি করা হয়।আগে সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাসিনা আহমেদের পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি ছাড়াও আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও এজে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি’র কমিশনারকে।

এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন। গত ১১ মার্চ থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, আগেরদিন ১০ মার্চ রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।তবে পুলিশ, র‌্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি। কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি। সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদক বলেন, ১০ মার্চ রাতে পুলিশ ও র‌্যাবের লোকেরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।১১ মার্চ রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে। তবে দুই থানাই জিডি গ্রহণ করেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে।বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি। এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।অবিলম্বে সালাহউদ্দিনের মুক্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে।