img_142590990214259099025514

দৈনিকবার্তা-ময়মনসিংহ, ১৩ মার্চ: বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পর পর দুম্যাচে সেঞ্চুরী করে বিশ্বে রেকর্ড গড়েছেন ময়মনসিংহের মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। বিশ্বকাপে দুবার সেঞ্চুরী করার বিজয় নিয়ে উল্লসিত ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গন।বিশ্বকাপের গ্র“প পর্বের শেষ খেলায় শুক্রবার হ্যামিল্টনে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক তুলে দেন রিয়াদ। গত ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও সেঞ্চুরী করে ছিলেন তিনি। শুরু থেকেই রিয়াদ কিউই বোলারদের শাসন করতে থাকেন। ৮ টি বাউন্ডারী ও দৃষ্ট্নিন্দন দৃটি ওভার বাউন্ডারী সাহায্যের ১১১ বলে শতরান পূর্ন করে তিনি।

পর পর দুম্যাচে সেঞ্চুরী করার পর ময়মনসিংহ শহরের ধোপাখলার সেহড়ার বাসায গিয়ে ক্রীড়ামোদীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষ রিয়াদের পিতামাতাকে শুভেচ্ছা জানান। রিয়াদের পিতা ওবায়েদ উল্লাহ বলেন, সকাল থেকে তিনি খেলা দেখেছেন। পর পর দু ম্যাচে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রিয়াদের সেঞ্চুরী করার বিষয়টি নিয়ে তিনি বেশ উল্লসিত।রিয়াদের মা আরাফাত বেগম বলেন, রিয়াদের গর্বে গোটা দেশ। গোটা ময়মনসিংহবাসী ।

টানা দুই ম্যাচে শতক হাঁকিয়ে এবারের বিশ্বকাপের সেরা রান সংগ্রহকারীর তালিকায় চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছেন মাহমুদুল্লাহ। পাঁচ ইনিংসে ৮৬ গড়ে মোট ৩৪৪ রান করেছেন ডান-হাতি এই ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপের একাদশ আসরে দুটি শতক ছাড়াও একটি অর্ধশতকের ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ।আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ২৩ রান করার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৮ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। এরপরই মিডলঅর্ডার এই ব্যাটসম্যানের দুর্দান্ত পথচলার শুরু।

নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটে জেতা ম্যাচে ৬২ বলে ৬২ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। আর ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার ম্যাচে দেশের হয়ে বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে শতক হাঁকান তিনি; করেন ১৩৮ বলে ১০৩ রান।ইংলিশদের হারিয়েই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ।আর এবার টুর্নামেন্টের সহ-আয়োজক নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৩ বলে অপরাজিত ১২৮ রান করে সেরা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় উপরের সারিতে উঠে এলেন মাহমুদুল্লাহ।৬ ইনিংসে ৪টি শতকের সাহায্যে ৪৯৬ রান করে এই তালিকার শীর্ষে আছেন শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকার এবি ডি ভিলিয়ার্সের রান ৪১৭। আর ৩৯৫ রান নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছেন শ্রীলঙ্কার আরেক ব্যাটসম্যান তিলকারতেœ দিলশান।

আগের চারটি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কারোরই শতক করার কৃতিত্ব ছিল না। গত সোমবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার ম্যাচে ওই অপূর্ণতা ঘোঁচানোর পর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেকটি অসাধারণ শতকের ইনিংস খেললেন মাহমুদুল্লাহ।হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে দলের বিপদে হাল ধরে ১১১ বলে শতক তুলে নেন মাহমুদুল্লাহ। ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার ম্যাচে ১০৩ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। আর এবার স্বাগতিক নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হার না মানা ১২৮ রান করলেন তিনি।

ওয়ানডেতে এর আগে একবারই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান টানা দুই ম্যাচে শতক করেছিলেন; ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওই কৃতিত্ব দেখান শাহরিয়ার নাফীস।১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপ অভিষেকেই দুটি জয়, ২০০৭ বিশ্বকাপে গ্র“প পর্ব পেরিয়ে সুপার সিক্সে ওঠার কৃতিত্বও দেখায় বাংলাদেশ। কিন্তু কারো শতক না থাকাটা বড় একটা অপ্রাপ্তি হয়েছিল। সেটা এবার বিশ্বস্ত হাতে ঘোঁচালেন মাহমুদুল্লাহ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের এবারের বিশ্বকাপের এই দুটি ম্যাচেই দলের দু:সময়ে হাল ধরেন মাহমুদুল্লাহ।যা তার ইনিংস দুটির মাহাত্ব্য আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।অ্যাডিলেইড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া দলকে কক্ষপথে ফেরাতে দেখে-শুনে ১৩৮ বলের অসাধারণ ইনিংসটি খেলেন মাহমুদুল্লাহ।

শুক্রবার হ্যামিল্টনের সেডন পার্কেও দলের বড্ড খারাপ অবস্থায় ক্রিজে আসেন মাহমুদুল্লাহ, ৯.৪ ওভারে তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৭/২। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ৯০ রানের জুটি গড়ে শুরুর ধাক্কা কাটান ডান-হাতি এই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত ১২৩ বলের অপরাজিত ইনিংসে ১২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ক্যারিয়ার সেরা ওয়ানডে ইনিংস খেলেন তিনি।২০০৭ সালে অভিষেকের পর থেকে প্রথম ১১৩ ওয়ানডেতে কোনো শতক ছিল না মাহমুদুল্লাহর। আর এবার টানা দুই ম্যাচে অসাধারণ এই কৃতিত্ব দেখালেন তিনি। প্রাণপণ লড়াই করেও পারল না বাংলাদেশ। গ্র“প পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে তারা।মাহমুদুল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিং আর সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ২৮৮ রান করে বাংলাদেশ। এবারের আসরে এই প্রথম কোনো দলকে অলআউট করতে ব্যর্থ হল অন্যতম ফেভারিট নিউ জিল্যান্ড। বড় লক্ষ্য দিয়ে দারুণ বল করেন সাকিব আল হাসান। তবে মার্টিন গাপটিলের শতক আর রস টেইলরের অর্ধশতকে ৭ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউ জিল্যান্ড।