e25750b207c053fcf51d7bb2f9ef2bbf-Bangladesh-Fielding-image

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ মার্চ: এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স নিউজিল্যান্ডের। সেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার হ্যামিল্টনে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সও হলো বলার মতোই। জিততে পারলে হয়তো প্রাপ্তির ষোলোকলা পূর্ণ হতো।তবে ৩ উইকটে হারের পরও বাংলাদেশের প্রাপ্তি নেহাত মন্দ নয়। নিউজিল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতাটাও বলতে হবে দারুণই। আগেই শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছিল এ পুলের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ এবং নিউজিল্যান্ড। ফলে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সহ-আয়োজক নিউজিল্যান্ড ও এশিয়ার উদীয়মান ক্রিকেট পরাশক্তি বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটি ছিল নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতার।

তবে সেই পথে হাঁটেনি কোন দল। পেশাদারিত্বের চূড়ান্ত এক মহড়ায় লিপ্ত হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে অবস্থিত সেডন পার্কের ম্যাচে। এই ম্যাচ দিয়ে নিউজিল্যান্ড যেমন অনুধাবন করতে পেরেছে বাস্তবতা, তেমনি মাত্র ৩ উইকেটে হারের কারণে বাংলাদেশ তাদের চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে না পারলেও পরিপূর্ণ তৃপ্তি নিয়েই কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার রসদ পেয়ে গেছে।

সকালে টসের বিপরীতে প্রথমে ব্যাটিং পেয়ে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৮৮ রান সংগ্রহ করে। দলের হয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানোর তালিকায় ওঠে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। যিনি ১২৮ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চলতি আসরে শীর্ষ চার সর্বো”চ রান সংগ্রহকারীরর তালিকায়। ওই যাত্রাপথে রিয়াদকে উপযুক্ত সংগ দেন ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সৌম্য সরকার এবং সাব্বির রহমান। সৌম্য ৫৮ বলে ৫১ এবং সাব্বির ২৩ বলে ৪০ রান সংগ্রহ করেন। কিউই দলের হয়ে তিনটি করে উইকেট নেন যথাক্রমে কোরি এন্ডারসন, গ্রান্ট এলিয়ট এবং ট্রেন্ট বোল্ট।

জবাবে ম্যাচ সেরা মারটিন গাপটিলের ১০৫ ও রস টেইলরের ৫৬ রানে ভর করে ৪৮.৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৯০ রান তুলে ৩ উইকেটের কস্টার্জিত জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে গ্রান্ট এলিয়ট ও কোরি এন্ডারসনের ৩৯ রান করে যোগানের ফলে কিউই দলের ষষ্ঠ জয় নিশ্চিত হয়। মাশরাফির পরিবর্তে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেয়া বিশ্ব সেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৪ উইকেট লাভ করেন। নাসির হোসেন নেন দুই উইকেট।

মাশরাফিহীন বাংলাদেশ শুরুতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। দু’দিন ধরে কভারে ঢেকে থাকা উইকেটের ময়েশ্চার কাজে লাগিয়ে আগুণ ঝরা বোলিং করেন বোল্ট-সাউদিরা। লম্বা লম্বা সুইং, গতির মিশেলে বাংলাদেশের টপঅর্ডার কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন কিউই পেসাররা। ফলে ২৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। দলীয় ৪ রানে বোল্টের বলে বোল্ড হন ইমরুল কায়েস (২)। এরপর স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাঝঘরে ফিরেন ২৭ বলে ১৩ রান করা অপর ওপেনার তামিম ইকবাল।

তৃতীয় উইকেটেই বাংলাদেশের ইনিংসের হাল ধরেন রিয়াদ ও সৌম্য সরকার। তারা গড়ে তুলেন ৯০ রানের জুটি। তবে দলীয় ১১৭ রানে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির পর উইকেট বিলিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন সৌম্য। ক্রিজ ছাড়ার আগে তিনি সংগ্রহ করেন ৫১ রান। এরপর এক প্রান্তে যখন থিথু হতে পারছিলেন না সাকিব-মুশফিকরা, তখন অন্যপ্রান্তে ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। অধিনায়ক সাকিব ২৩, মুশফিক ১৫ রান করে ফিরে যান কোরি এন্ডারসনের শিকার হয়ে। অপর প্রান্ত আগলে রেখে এ সময় রিয়াদ তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এর মাধ্যমে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করার রেকর্ডও গড়লেন তিনি। টাইগার অল রাউন্ডার রিয়াদ ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরির পর ১১১ বলে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে। ফলে বাংণাদেশের হয়ে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা দুই ওডিআই ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানোর তালিকায় ওঠে আসেন রিয়াদ। এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে টানা দুই ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন শাহরিয়ার নাফিস। ষষ্ঠ উইকেটে রিয়াদ-সাব্বিরের ব্যাটে আড়াইশো রান পার করে টাইগাররা। এসময় তারা ৭৮ রানের জুটি গড়েন। ৪৮তম ওভারে ম্যাককালামের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে সাব্বির খেলেন ২৩ বলে ৪০ রানের একটি (৫ চার, ২ ছয়) ঝড়ো ইনিংস।

শেষ দিকে নাসির ৭ বলে ১১ রান করেন। রিয়াদ অপরাজিত থাকেন ১২৩ বলে ১২৮ বলের অসাধারণ ইনিংস খেলে। যেখানে ছিল ১২টি চার ও ৩টি ছয়ের মার। কিউইদের পক্ষে বোল্ট, এন্ডারসন ও এলিয়ট লাভ করেন ২টি করে উইকেট। জবাবে ২৮৯ রানের টার্গেট খেলতে নামা কিউইদের ভড়কে দেয় বাংলাদেশ স্পিন দিয়ে বোলিং শুরুর মাধ্যমে। কৌশলটিতে অবশ্য সফলতাও মিলেছিল। ৩৩ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (৮) ও কেন উইলিয়ামসনকে (১) ফিরিয়ে দেন সাকিব।

তৃতীয় উইকেটে মার্টিন গাপটিল ও রস টেলরের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় নিউজিল্যান্ড। গাপটিল তুলে নেন ষষ্ঠ ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তাদের জুটিতে যোগ হয় ১৩১ রান। নতুন স্পেলের বোলিংয়ে এসে গাপটিলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ফের ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব। বিদায়ের আগে গাপটিল ১০০ বলে ১০৫ রান (১১ চার, ২ ছয়) সংগ্রহ করেন। এরপরই কিউইদের রানের চাকা স্লথ হয়ে আসে। এ সুযোগে এলিয়টকে (৩৯) রুবেল এবং রস টেলরকে (৫৬) নাসির ফিরিয়ে দিয়ে টাইগাররা চেপে ধরে স্বাগতিকদের। দলীয় ২৪৭ রানে লুক রচি (৯) সাকিবের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন। ৪৮তম ওভারে কোরি অ্যান্ডারসনকে (৩৯) বোল্ড করে ম্যাচের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেন নাসির। কিš‘ অভিজ্ঞ ভেট্টোরি আর কোনো বিপদ ঘটতে দেননি। সাউদিকে নিয়ে দলকে জয়ের পৌঁছে দেন তিনি। ভেট্টোরি অপরাজিত ১৬, সাউদি অপরাজিত ১২ রান করেন। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব ৪টি এবং নাসির ২টি উইকেট লাভ করেন। রুবেল নেন একটি উইকেট।

গত বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। দলের ভারটা বহুদিন কাঁধে ছিল না। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার অনুপস্থিতিতে আজ হ্যামিল্টনে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব বর্তাল সাকিব আল হাসানের ওপর। বহুদিন পর অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচের পর টিভি ক্যামেরার সামনে বলতে এলেন সাকিব। বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার জানালেন, লড়াই করে এমন হার অনুপ্রেরণাই দেবে। সাকিব বললেন, আমরা ভালো খেলেছি, বিশেষ করে যেভাবে ব্যাট করেছি। সবাই ভালো খেলেছে, নির্দিষ্ট করে বললে মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য অসাধারণ খেলছে। এ ম্যাচ থেকে অনেক ইতিবাচক দিক খুঁজে নিতে পারব এবং কোয়ার্টার ফাইনালে তা কাজে লাগাতে পারব।

দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও অসাধারণ শতক। সাকিবের প্রত্যাশা, এ ছন্দ ধরে রাখবেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান, সে (মাহমুদউল্লাহ) দারুণ ফর্মে রয়েছে। এখন প্রয়োজন এটি ধরে রাখা। আমাদের আরও কয়েকজন খেলোয়াড় ভালো ছন্দে রয়েছে। নিয়মিত রান পাচ্ছে। আশা করি ব্যাট-বলে তারা এ ছন্দ ধরে রাখতে পারবে।’

২৮৯ রানের লক্ষ্য দিয়ে ম্যাচটি বেশি জমিয়ে তুলেছিল বাংলাদেশ। তবে শেষমেশ জেতা হলো না। ব্যাট হাতে তেমন কিছু না করতে পারলেও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেওয়া সাকিব পরাজয়ের ব্যাখ্যা দিলেন এভাবে,‘আমাদের শুরুতেই কিছু উইকেট নেওয়ার দরকার ছিল। আমরা তুলে নিয়েছিলামও। পরে তারা কিছু বেশি রান তুলে ফেলে। একজন কম বোলার নিয়ে খেলে জেতাটা আমাদের জন্য কঠিনই ছিল। নিয়মিত পাঁচ বোলার ছিল না। তবুও চেষ্টা করেছিলাম সব সময় চাপ বজায় রাখতে।শেষ পর্যন্ত সেটা পারিনি।